বিশ্বজমিন

সিনজিয়াংয়ে মসজিদের স্থানে হোটেল, ৪০ মুসলিম সংগঠনের হিলটন বর্জনের ডাক

মানবজমিন ডেস্ক

১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, শুক্রবার, ১১:৩৭ পূর্বাহ্ন

বিশ্বজুড়ে হিলটন ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইনকরপোরেশনকে বয়কটের আহবান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম-মার্কিন নাগরিক অধিকারের কমপক্ষে ৪০টি সংগঠন। চীন কর্তৃপক্ষ মুসলিম উইঘুর অধ্যুষিত সিনজিয়াং প্রদেশে একটি মসজিদ গুঁড়িয়ে দিয়েছিল বুলডোজার দিয়ে। সেই মসজিদের স্থানে হিলটন কর্তৃপক্ষ একটি হোটেল নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। এ কারণে তাদেরকে বর্জনের ওই ডাক দেয়া হয়েছে বৃহস্পতিবার। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াতে হিলটন কর্তৃপক্ষের প্রধান কার্যালয়। বৃহস্পতিবার তার সামনে সংবাদ সম্মেলন করেছে কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্স (কেয়ার)। এতে বলা হয়, তারা হোটেল কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানাচ্ছেন ওই স্থানে হোটেল নির্মাণের পরিকল্পনা বাতিল করতে। কিন্তু সেই আহবানে কোনো সাড়া মিলছে না। সংবাদ সম্মেলনে কেয়ারের নির্বাহী পরিচালক নিহাদ আওয়াদ বলেন, আমরা বিশ্বজুড়ে হিলটন ওয়ার্ল্ডওয়াইডকে বর্জনের ডাক দিচ্ছি। আপনার এবং আমার বেছে নেয়ার সুযোগ আছে, কোথায় আপনি ভ্রমণে যাবে, কোথায় ব্যবসা নিয়ে মিটিং করবেন, কোথায় বিয়ে বা কোনো পার্টি করবেন। কিন্তু মানবাধিকার লঙ্ঘন করে নয়। তিনি অভিযোগ করেন, যেখানে হোটেল নির্মাণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে, তাতে মানবাধিকার লঙ্ঘন হবে। কারণ, এতে উইঘুর মুসলিমদের সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় বিশ্বাসকে ধ্বংস করে দেয়া হবে।
উল্লেখ্য, মুসলিম উইঘুরদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন দমনপীড়ন চালিয়ে আসছে চীন। প্রায় ১০ লাখ উইঘুরকে বন্দি রাখা হয়েছে। তাদেরকে জোর করে বন্ধ্যাকরণ করানো হচ্ছে। পরিবারের কাছ থেকে সন্তানদের আলাদা করে রাখা হচ্ছে। ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দিচ্ছে। কিন্তু এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে চীন। যে স্থাপনার কারণে হিলটনকে বর্জনের ডাক নেয়া হয়েছে তা হোটান এলাকার একটি মসজিদের স্থান। ওই মসজিদটি ২০১৮ সালে ধ্বংস করে দেয় চীন কর্তৃপক্ষ। সেখানে এখন হিলটন কর্তৃপক্ষ হ্যাম্পটন ইন হোটেল নির্মাণের পরিকল্পনা করছে।
নিহাদ আওয়াদ বলেন, প্রস্তাবিত এই প্রকল্পের বিষয়ে তারা জানতে পারেন জুনের প্রথম দিকে। জুলাই মাসে মার্কিন কংগ্রেসের দ্বিপক্ষীয় কংগ্রেশনাল কমিশন হিলটন ওয়ার্ল্ডওয়াইডকে আহবান করে, হোটেল বিষয়ক প্রকল্পের সঙ্গে তাদের নামকে যুক্ত না করতে। অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউটের গবেষণা অনুযায়ী, ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে সিনজিয়াংয়ের ৯০০ স্থানে প্রায় ১৬০০০ মসজিদ আংশিক বা পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। মসজিদের উপর থেকে মিনার সরিয়ে নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন রিপোর্টে এসব বিষয় যাচাই করা হয়েছে।
বেইজিংয়ের কর্মকর্তারা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ বছরের শুরুর দিকে বলেছেন, সিনজিয়াংয়ের কোনো ধর্মীয় স্থাপনা জোর করে ধ্বংস করা হয়নি। বিধিনিষেধ দেয়া হয়নি। এবার পবিত্র রমজানে এপ্রিল থেকে মে পর্যন্ত ১২ দিনে ওই এলাকা সফর করেন সাংবাদিকরা। এ সময়ে তারা যেসব মসজিদ পরিদর্শনে গিয়েছেন দেখতে পেয়েছেন তা আংশিক বা পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। ওদিকে জাতিসংঘ ও অন্য অধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলোর হিসাবে, কমপক্ষে ১০ লাখ উইঘুর এবং অন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। এসব বন্দিশিবিরে তাদেরকে দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। প্রথম দিকে এসব শিবিরের অস্তিত্বের কথা প্রত্যাখ্যান করেছিল চীন। তবে পরে তারা জানায়, ওইসব শিবির হলো ভোকেশনাল সেন্টার। সন্ত্রাস মোকাবিলার জন্য এগুলো ডিজাইন করা হয়েছে। এ ছাড়া সিনজিয়াং প্রদেশে মুসলিম সংখ্যালঘুদের সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে চীন। অস্বীকার করেছে যে, তাদেরকে জোরপূর্বক শ্রমে নিযুক্ত করা হয়েছে। সিনজিয়াংয়ে উইঘুরদের জোরপূর্বক শ্রমে বাধ্য করে বস্ত্রজাত পণ্য ও টমেটো দিয়ে বিভিন্ন খাদ্য পণ্য তৈরি করা হয়। জানুয়ারিতে এসব পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status