দেশ বিদেশ

উইঘুরদের বিরুদ্ধে চীনের 'গণহত্যা' নিয়ে স্বাক্ষ্য গ্রহণ শেষ, সিদ্ধান্তের অপেক্ষা

অনলাইন ডেস্ক

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৮:৫২ অপরাহ্ন

লন্ডনে ১০-১৩ই সেপ্টেম্বর শেষ হলো উইঘুর ট্রাইব্যুনালের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত অধিবেশন। স্যার জিওফ্রে নাইসের সভাপতিত্বে এই ট্রাইব্যুনাল কমিটি পূর্ব তুর্কিস্তানে চীনা শাসকদের নৃশংসতা এবং 'গণহত্যা'র বিষয়ে আরও তথ্য-প্রমাণ গ্রহণ করেন। এই জনগণের ট্রাইব্যুনালটি এমন একটি শাসন ব্যবস্থাকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করেছে যারা কিনা গণহত্যার নীতিগুলোকে অস্পষ্ট করার জন্য অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে জবাবদিহিতা এড়িয়ে যেতে চেয়েছে। ট্রাইব্যুনালটি যেহেতু তাদের তদন্ত বন্ধ করেছে এবং আসন্ন রায় প্রদান করবে তাই বিশ্বের জন্য কাজ করার আরেকটি সুযোগ আসবে। সমস্ত স্বাক্ষ্য এবং প্রমাণ যাচাইয়ের পর যদি ট্রাইব্যুনাল পূর্ব তুর্কিস্তানে চীনের কার্যক্রমগুলোকে গণহত্যা হিসেবে নির্ধারণ করে তাহলে একটি বৈধ লেবেল তৈরি হবে যার মাধ্যমে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আনার শঙ্কা ছাড়াই বিভিন্ন দেশের সরকার ও আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো এ বিষয়ে একজোট হতে পারবে। এরফলে শুধুমাত্র এই গণহত্যা নয় সমস্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রতিক্রিয়া জানানোর এটি হবে টার্নিং পয়েন্ট।

স্বচ্ছতার অভাব, তদন্তকারীদের সহযোগিতা না করা এবং আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও এই ট্রাইব্যুনাল মানুষের কাছে গণহত্যার যে প্রশ্ন নিয়ে এসেছে; তা এতোদিন উত্থাপন করা যায়নি। সবমিলিয়ে ৭০ জন স্বাক্ষীর বয়ান শুনেছে ট্রাইব্যুনাল এবং সমস্ত প্রমাণাদি পর্যালোচনা করতে ৩০ জন গবেষক ১০ হাজার ঘণ্টা ব্যয় করেছেন।

ক্যাম্পেইন ফর উইঘুর (সিএফইউ) এই স্বাক্ষ্যগুলোকে সাহসী ও গর্বিত হিসেবে অাখ্যায়িত করেছে। সাক্ষীদের বর্ণনায় ভয়াবহ বাস্তবতা প্রকাশ হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের কাছে যেসব কাহিনী ও প্রমাণ উত্থাপন করা হয়েছে তা উপক্ষো করা যায় না। উইঘুররা গণহত্যার শিকার হয়েছে। ২০২০ সালের জুলাইয়ে সিএফইউর প্রকাশিত জেনোসাইড রিপোর্টের জেনেভা কনভেনশনের মানদণ্ড ব্যবহার করে এই সিদ্ধান্তে এসেছে। বিশ্ব এখন এই সিদ্ধান্তে আসবে বলে আমরা অপেক্ষায় রয়েছি।

উইঘুর শিক্ষানীতি সম্পর্কে পাবলিক অ্যাফেয়ার্স এন্ড অ্যাডভোকেসি জুলিয়ে মিলসাপের দেয়া স্বাক্ষ্য নিয়েও বিশেষ গর্ব প্রকাশ করেছে সিএফইউ। জুলিয়ে ট্রাইব্যুনালকে বলেছেন, ‘এমন অনেক বিষয়ই রয়েছে যা আমরা উপস্থাপন করতে পারি। শিক্ষার বিষয় বলতে হলে বলা যায় অনেক বিষয় রয়েছে যা পরিমাপ করা যায়। সংখ্যালঘুদের সন্তানদের মানসিকভাবে অনেক ক্ষতি করা হয়েছে। জোরপূর্বকভাবে হ্যান চায়না পরিচয় গ্রহণে বাধ্য করার মতো নীতিমালার ফলে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাগুলো সত্যিই ভয়াবহ।’

গণহত্যার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ বন্ধ করতে অর্থনৈতিক শক্তি ব্যবহার করা নিয়ে বিশেষজ্ঞ স্বাক্ষ্য দিয়েছেন সেন্টার ফর উইঘুর স্টাডিজের আব্দুল হাকিম ইদ্রিস। তিনি বলেছেন, ‘উইঘুরা তাদের অভিজ্ঞতা থেকেই জানে কিভাবে চীন থেকে আসা আসন্ন বিপদ সম্পর্কে অন্য দেশগুলোকে সতর্ক করা যায়। মধ্য এশিয়া জয় করতে তারা উইঘুরদের ধ্বংস করছে। চীনের উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার প্রায় ১৩৬ বছরে উইঘুরদের চরম দুর্দশার মধ্যে দিনযাপন করতে হচ্ছে। চীন জানে তারা উইঘুরদের সঙ্গে কি করেছে ; ফলে তারা মানুষ হিসেবে তাদেরকে ভয় পায়।’

সিএফইউর পরিচালক রোশান আব্বাস বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালের স্বাক্ষ্য গ্রহণ পুরোপুরি দেখার পর আমি রীতিমতো আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। বিশেষ করে আমি যখন জানতে পারলাম আমার নিরপরাধ বোনও এইসব নির্যাতনের শিকার হতে পারে। আমরা শুধুমাত্র উইঘুরদের রক্ষার জন্য নয়, ভবিষ্যতে মুক্ত বিশ্বের জন্যই এই গণহত্যার বিরুদ্ধে লড়াই করবো আমরা। এই ট্রাইব্যুনালকে তাদের কাজের জন্য আমি সাধুবাদ জানাই এবং ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত জানার জন্য অপেক্ষা করছি।’

সূত্র: সিএফইউ প্রেস রিলিজ
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status