বাংলারজমিন

হালাল উপার্জনের প্রলোভনে ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ প্রতারক স্কুলশিক্ষিকা গ্রেপ্তার

স্টাফ রিপোর্টার, পাবনা থেকে

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৮:৫৫ অপরাহ্ন

পাবনায় হালাল উপার্জনের প্রলোভন দিয়ে ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে এক স্কুলশিক্ষিকার বিরুদ্ধে। প্রতারক স্কুলশিক্ষিকার নাম মোছা. সীমা আক্তার। তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার দুপুরে আদালতে সোপর্দ করলে বিজ্ঞ আদালত তাকে জেল-হাজতে প্রেরণ করেন। তিনি পাবনা পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাথমিক শাখার সহকারী শিক্ষিকা ছিলেন। গ্রেপ্তারের পর তাকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পাবনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অমিনুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার রাতে শহরের আটুয়া হাউজ পাড়ায় পাবনা পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাথমিক শাখার সহকারী শিক্ষিকা মোছা. সীমা আক্তারের বাড়ি অবরোধ করে বিক্ষোভের খবর পায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই শিক্ষিকাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। তিনি হালাল উপার্জনের প্রলোভন দিয়ে সাধারণ মানুষদের কাছে থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন বলে প্রতারণার শিকার হওয়া ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন। রাতেই ভুক্তভোগীদের পক্ষে মোছা. মাবেলা পারভীন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় বাদী মাবেলা পারভীন ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা প্রতারনার শিকার হয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন। বুধবার দুপুরে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে মোছা. সীমা আক্তারকে আদালতে সোপর্দ করলে আদালত তাকে জেল-হাজতে পাঠান। তিনি আটুয়া হাউজ পাড়া মহল্লার মৃত হানিফুল ইসলামের স্ত্রী। প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীদের মধ্যে জিয়াউল করিম সুমন জানান, শিক্ষিকা মোছা. সীমা আক্তার সাধারণ মানুষদের ইসলামী শরিয়া মোতাবেক গরুর খামারসহ নানা ধরনের হালাল উপার্জনের কথা বলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তিনি শুধু সাধারণ মানুষেরই নয়, নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাধিক শিক্ষক ও পুলিশ সদস্যদেরও বোকা বানিয়েছেন। প্রতারক শিক্ষিকা অনেকের কাছ থেকে চেক ও স্ট্যাম্পের মাধ্যমেও অর্থ নিয়েছেন। মানুষ তার কথায় বিশ্বাস করে লাভের আশায় তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অর্থ বিনিয়োগ করে। লাভের অংক বেশি হওয়ায় লোভে পড়ে অনেকেই সেখানে অর্থ বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন। প্রথম পর্যায়ে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে তাদেরকে লাভের অর্থ প্রদান করতেন তিনি। কিন্তু পরবর্তীতে টাকার অংক বৃদ্ধি পেলে তিনি সমস্ত টাকা আত্মসাৎ করে গা-ঢাকা দেন।
মঙ্গলবার মাসিক লাভের অর্থ নিতে আসেন বেশ কয়েকজন। এ সময় ওই নারীকে না পেয়ে বুঝতে পারে তারা চরম প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তখন তারা সীমা আক্তারের বাড়ি অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই  শিক্ষিকাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এদিকে ওই প্রতারকের কাছে অর্থদিয়ে অনেকেই এখন সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন। ওই প্রতারক নারী ব্যবসায়ীর বৈধ কোনো কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। তিনি একজনের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে আরেকজনকে দিয়েছেন বলে স্বীকার করেন। প্রতারণার শিকার সাধারণ মানুষ তাদের অর্থ ফিরে পাওয়ার জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন। এ ব্যাপারে প্রতারক মোছা: সীমা আক্তার বলেন, ‘আমার কোনো  বৈধ ব্যবসা নাই। একজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আরেকজনকে দিয়েছি। যারা টাকা দিয়েছে তাদেরকে সুদে অনেক টাকা লাভ দিয়েছি। আমি কারো টাকা আত্মসাৎ করি নাই। মানুষ না জেনে না বুঝে আমাকে কেন টাকা দিয়েছে। তাদেরকে প্রশ্ন করুন। সম্প্রতি যারা আমাকে টাকা দিয়েছেন তাদের টাকার একটি হিসাব করেছি। সেখানে প্রায় তিন কোটি টাকার মতো হবে। সেই সকল টাকা আমি দিয়ে দেবো। আর যারা সুদে লাভের টাকা নিয়েছে তাদেরটা দেবো না। আর আমাকে কেন স্কুল থেকে বহিষ্কার করেছে সেটি স্কুল কর্তৃপক্ষ জানে। আমি ব্যক্তিগত কাজে বাহিরে ছিলাম। জেলা পুলিশ আমাকে আসতে বলেছে, আমি এসেছি’। পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতার বলেন, এ বিষয়ে আমরা অবগত হয়েছি। এই ধরনরে অভিযোগের কারণে তাকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। প্রতারণার বিষয়ে মামলা হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হলে বিজ্ঞ আদালত তাকে জেল-হাজতে প্রেরণ করেছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status