প্রথম পাতা

বিক্ষোভ, অনশন

এক সপ্তাহেও বসেনি বিমানবন্দরে ল্যাব, অনিশ্চয়তায় হাজারো প্রবাসী

স্টাফ রিপোর্টার

১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, বুধবার, ৯:২৪ অপরাহ্ন

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার এক সপ্তাহ পরও ৩টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কোভিড-১৯ টেস্টের জন্য আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা যায়নি। বেসরকারিভাবে ল্যাবগুলো স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হলেও কোন প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া হবে তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। বিমানবন্দরে কোভিড টেস্টের সুবিধা না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছে বিদেশ গমনেচ্ছুক হাজার হাজার প্রবাসী। আরটিপিসিআর ল্যাব স্থাপনের দাবিতে তারা গতকাল বিক্ষোভ ও অনশন কর্মসূচি পালন করেছেন। কয়েক ঘণ্টা বিক্ষোভের পর প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ বিক্ষোভকারীদের আশ্বস্ত করেন দ্রুত সময়ের মধ্যে ল্যাব স্থাপনের জন্য প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করা হবে।

গত ৬ই সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আরটিপিসিআর ল্যাব স্থাপনের নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার এক সপ্তাহ অতিবাহিত হওয়ার পরেও আরটিপিসিআর ল্যাব স্থাপন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন দেশে আটকে থাকা প্রবাসীরা। তারা বলেন, র‌্যাপিড টেস্ট ল্যাব বসানোর বিষয়ে কোনো সমাধান না আসা পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

বিক্ষোভকারীরা বলেন, নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা এমনকি পাকিস্তানের মতো দেশের বিমানবন্দরগুলোতে ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশের বিমানবন্দরে মেশিনটি স্থাপনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উদাসীনতার কারণে এখনো স্থাপন হয়নি। এ কারণে হাজার হাজার প্রবাসী তাদের কর্মস্থলে ফিরতে পারছেন না। ফলে এসব প্রবাসীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। প্রবাসীরা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় আটকে পড়া প্রবাসীদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিয়েছে আবর আমিরাত। বাংলাদেশের বিমানবন্দরে আরটিপিসিআর ল্যাব স্থাপন না করায় এখনো আমাদের দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তারা শর্ত দিয়েছে, সেসব দেশ বিমানবন্দর থেকে বিমানে ওঠার ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা আগে করোনা পরীক্ষা করে নেগেটিভ সনদ দিতে পারবে তারাই সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রবেশ করার অনুমতি পাবে। এমন নির্দেশনা পেয়ে ভারত ও পাকিস্তান এরইমধ্যে বিমানবন্দরে র‌্যাপিড পিসিআর ল্যাব স্থাপন করেছে। সেসব দেশের প্রবাসীরা সংযুক্ত আরব আমিরাতে কাজে ফিরতে পারছেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত আমাদের দেশে এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা হয়নি। এদিকে আমাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। বিক্ষোভকারীরা বলেন, করোনা মহামারির শুরু থেকে প্রায় ২ লক্ষাধিক প্রবাসী সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে দেশে ফেরত আসছেন। অনেকে ছুটি নিয়ে পরিবারকে দেখতে আসছেন। দেশে এসে করোনার কারণে আটকা পড়েছেন। ফিরতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় নির্দিষ্ট সময়ে প্রবাসীরা নিজ নিজ কর্মস্থালে যেতে পারেনি। এরইমধ্যে বহু সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসীর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। আন্দোলনকারীদের দাবি, বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় টিকিট কেটেও কর্মস্থলে ফিরতে পারছেন না ৪০ হাজার সংযুক্ত আরব-আমিরাত প্রবাসী।

তারা আরও বলেন, আগস্ট মাসে আরব আমিরাত জানিয়েছে কোনো দেশের বিমানবন্দরে ল্যাব না থাকলে সে দেশের নাগরিকরা আমিরাতে যেতে পারবেন না। এর এক মাস পেরিয়ে গেলেও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ল্যাব স্থাপনের উদ্যোগ নেয়নি। প্রবাসীরা আন্দোলন করার পর প্রধানমন্ত্রীর নজরে এলে তিনি নির্দেশনা দিলেন, তাতেও গড়িমসি শুরু হয়। এ কারণে দেশে আটকে পড়া ৪০ থেকে ৫০ হাজার প্রবাসী কর্মী অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। দেশে আটকা পড়ে বিক্ষোভ ও অনশনে অংশ নেয়া সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী হিমেল মাহমুদ বলেন, আমরা বাধ্য হয়ে বিক্ষোভ ও অনশনে এসেছি। আমরা দ্রুত আমাদের কর্মস্থলে যেতে চাই। বিমানবন্দরে আরটিপিসিআর ল্যাব স্থাপন না করায় আমরা আটকে আছি। আরটিপিসিআর টেস্টের সুবিধা চালু করতেই আমরা দ্রুত আমিরাতে ফিরতে পারবো। এজন্য আমাদের দাবি দ্রুত বিমানবন্দরে আরটিপিসিআর ল্যাব স্থাপন করতে হবে। এ দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো। আমরা প্রবাসী কল্যাণ ভবনের গেট অবরোধ করে রেখেছি। যতক্ষণ না পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ বিমানবন্দরে পিসিআর টেস্টের সুবিধা দেয়ার নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করবে, ততক্ষণ গেট ছাড়বো না। আবু ছায়েম নামের এক প্রবাসী বলেন, আমরা খুব দ্রুত সময়ে কাজে ফিরতে চাই। টিকিট কাটা আছে, বিমানবন্দরে আরটিপিসিআর ল্যাব চালু হলেই সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফিরতে পারবো। এই মেশিনটি চালু হলে শুধু আরব আমিরাত নয়, সকল প্রবাসীরা সুযোগ-সুবিধা পাবেন। কাজে যোগ দিতে পারবেন। হয়রানি থেকে প্রবাসীরা মুক্তি পাবে। প্রবাসীদের এ কর্মসূচিতে প্রায় শতাধিক আরব আমিরাত প্রবাসী অংশ নেন। একই দাবিতে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন দেশে আটকে পড়া আরও অর্ধশতাধিক প্রবাসী। পরে বিকালে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের সঙ্গে বিক্ষোভকারী প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়। বৈঠকে দ্রুত আরটিপিসিআর চালু করা হবে বলে বিক্ষোভকারীদের আশ্বস্ত করেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী। মন্ত্রী বিক্ষোভকারী প্রবাসীদের দ্রুত সময়ে র?্যাপিড পিসিআর চালুর আশ্বাস দেন। এ সময় মন্ত্রী বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতগামী কর্মীদের জন্য বিমানবন্দরে করোনার র?্যাপিড পিসিআর টেস্ট ল্যাব বসানোর কাজ কারা পাবে সে বিষয়ে আজকের (মঙ্গলবার) মধ্যে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। পরে অনশন কর্মসূচি পালন বন্ধ করে মন্ত্রণালয় ছাড়েন প্রবাসীরা। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী বলেন, বিমানবন্দরে আরটিপিসিআর ল্যাব স্থাপন করার জন্য সাতটি কোম্পানিকে আমলে নেয়া হয়েছে। তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এই সাত কোম্পানির মধ্যে থেকে আরও যাচাই করে কাজ দেয়া হবে। এই সিদ্ধান্ত আজ (মঙ্গলবার) হয়ে যাবে, যে কারা আরটিপিসিআর ল্যাব স্থাপনে কাজ পাবে। কয়টি কোম্পানি কাজ পাচ্ছেন-এমন প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, একটি কোম্পানি পেতে পারে, আবার একাধিক কোম্পানিও পেতে পারে। তবে সেটি নির্ধারণ করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নির্বাচনের ক্ষেত্রে কত দ্রুত পরীক্ষা করতে সক্ষম এবং খরচ কত কম হবে তার ওপর নির্ভর করবে কে কাজ পাবে। তবে গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত টেলিফোনে যোগাযোগ করে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ও সচিবের কাছ থেকে সিদ্ধান্ত জানা যায়নি। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১৪ লাখ বাংলাদেশি রয়েছেন। এরমধ্যে ২ লাখ বাংলাদেশে করোনাকালীন সময়ে দেশে ফেরত আসেন। এখন ফেরার অপেক্ষায় এসব প্রবাসীরা। এদের মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার জন টিকিটও কেটে রেখেছেন। প্রবাসীদের নির্ধারিত ফ্লাইট ছাড়ার চার থেকে আট ঘণ্টার মধ্যে কোভিড-১৯ এর পিসিআর টেস্টের ফলাফল জমা দিতে হবে উল্লেখ করে কিছু দেশ শর্ত আরোপ করেছিল। এমন শর্তারোপের পরেই গত ৬ই সেপ্টেম্বর মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই থেকে তিনদিনের মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আরটিপিসিআর টেস্টের সুবিধা স্থাপনের জন্য কর্মকর্তাদের প্রতি নির্দেশ দেন। নির্দেশনার পরে গত সোমবার থেকে বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার ল্যাব চালুর কথা থাকলেও, শুরু হয়নি কার্যক্রম। কবে চালু হতে পারে, তা-ও বলতে পারছে না কেউ। এতেই প্রবাসীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। গত দুইদিন ধরে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status