শেষের পাতা

চার নরপশুর কাণ্ড, বৃদ্ধার ভিডিও ভাইরাল

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, বুধবার, ৯:১৮ অপরাহ্ন

ষাটোর্ধ্ব এক মহিলার ঘরে ঢুকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায় ৪ নরপশু। এ সময় দা হাতে একজন হুমকি দিয়ে কাপড় ধরে টানাটানি করছিলো। আর এ দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও ধারণ করছিলো আরেক নরপশু। পরে ওই ভিডিও দিয়ে বৃদ্ধ মহিলার কাছে বড় অঙ্কের টাকা দাবি করে। এক পর্যায়ে মহিলা ওদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন কিছু টাকাও। এতেও ক্ষান্ত হয়নি ওই নরপশুরা। ওই ভিডিও প্রবাসে থাকা মহিলার দুই সন্তানের কাছে পাঠিয়ে দেয়। ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে প্রবাসে থাকা সন্তানদের কাছেও টাকা দাবি করে। পরে সন্তানরাও দাবি মতো টাকা না দেওয়ায় দু’দিন আগে ভিডিও ছেড়ে দেয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ওই ভিডিও ভাইরাল হয়। ভিডিও দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন এলাকার মানুষ। ঐক্যবদ্ধ হয়ে শুরু করেন প্রতিবাদ। অবশেষে প্রতিবাদের মুখে পুলিশ সোমবার রাতে মামলা নিয়ে আসামিদের ধরতে অভিযান চালায়। ঘটনাটি ঘটেছে সিলেটের কানাইঘাটের আগতালুক গ্রামে। এ ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভ বিরাজের পাশাপাশি গোটা উপজেলায়ই তোলপাড় হচ্ছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- এই নরপশুরা এ ধরনের ঘটনা এবারই প্রথম ঘটায়নি। এর আগে প্রবাসী বধূকে টার্গেট করে ভিডিও তুলে অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আগতালুক গ্রামের ওই বৃদ্ধা মহিলা ৬ সন্তানের জননী। মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। ছেলেরা থাকে প্রবাসে। ছোট ছেলেকে নিয়ে বাড়িতে থাকেন তিনি। গত ২৮শে আগস্ট প্রতিদিনের মতো নিজের বসতঘরে ঘুমিয়ে পড়েন। মধ্যরাতের পর হঠাৎ তার বাড়িতে দরজায় ডাকাডাকি শুরু করেন একই এলাকার আগতালুক পূর্ব গ্রামের বরকত উল্লাহ বখরের পুত্র আব্দুল্লাহ ওরফে কাড়াকাল, মৃত নুর উদ্দিনের পুত্র আব্দুল্লা ওরফে ‘মার্ডারী’ আব্দুল্লাহ, রফিক আহমদের পুত্র সাদ উল্লাহ ও সিরাজুল হকের পুত্র আব্দুল জব্বার। এলাকার ছেলেরা ডাকাডাকি করার কারণে তিনি ঘুম থেকে উঠে দরোজা খুলেন। এ সময় দা হাতে তার কক্ষে প্রবেশ করে ‘মার্ডারী’ আব্দুল্লাহ। অপর তিনজন জানালার ওপারে দাঁড়িয়ে থাকে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে- ঘরে ঢুকে দা হাতে ভয় দেখাতে থাকে মার্ডারী আব্দুল্লাহ। এ সময় নিজের সম্ভ্রম বাঁচাতে নিচু স্বরে কথা বলে নানা ভাবে তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করছেন বৃদ্ধা। কিন্তু এতে কোনোভাবেই ক্ষান্ত হচ্ছিলো না তারা। এক পর্যায়ে আব্দুল্লাহ সহ তার সহযোগীরা ওই মহিলার কাপড় ধরে টানাটানি করে। ভীত সন্ত্রস্ত মহিলা নানাভাবে তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেও পারেননি। এদিকে- ওই রাতে মোবাইলে ধারণ করা ওই ভিডিও দেখিয়ে বৃদ্ধার কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে নরপশুরা। ভিডিও মুছে দিতে মহিলা তাদেরকে ১০ হাজার টাকাও দেন। এরপর তারা ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে ৫ লাখ টাকা দাবি করে। কিন্তু টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান ওই মহিলা। এ ঘটনার পর মহিলার প্রবাসী দুই ছেলের কাছে ইন্টারনেটে ভিডিও পাঠিয়ে দেয় তারা। এবং দুই ছেলের কাছেও ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর মহিলার গোটা পরিবারই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় ওই চার নরপশুর পক্ষ থেকে এলাকার কিছু সংখ্যক সালিশ ব্যক্তিরা সরব হয়ে উঠেন। তারা বিষয়টি সামাজিকভাবে মীমাংসার চেষ্টা চালানোর কথা বলে কালক্ষেপণ করেন। তারাও বিষয়টি সমাধানের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা চেয়ে বসেন। এদিকে ঘটনার ১০ দিন পর দাবিকৃত টাকা না পেয়ে নরপশুরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ওই মহিলার ভিডিও ছড়িয়ে দিয়েছে। এদিকে নরপশুদের এসব কর্মকাণ্ডের কারণে বৃদ্ধ মহিলা পিত্রালয়ে আশ্রয় নেন। নিজের নিরাপত্তা, সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার পরপরই ঝিঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নজুড়ে ক্ষোভ দেখা দেয়। সোমবার সন্ধ্যা থেকে এলাকার মানুষ বিষয়টি নিয়ে দফায় দফায় বৈঠকে বসেন। তারা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। এক পর্যায়ে কানাইঘাট থানার ওসি তাজুল ইসলামের নজরে আসে বিষয়টি। তিনি তাৎক্ষণিক মহিলাকে থানায় নিয়ে এসে আইনি উদ্যোগ গ্রহণ করেন। থানায় মামলা দায়েরের পাশাপাশি রাতেই অভিযান চালান। একই সঙ্গে র‌্যাবেরও একটি টিম অভিযানে নামে। কিন্তু ঘটনার সঙ্গে জড়িত ওই চার নরপশুকে গতকাল বিকাল পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। কানাইঘাট থানার সাব-ইন্সপেক্টর ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার পরপরই বিষয়টি তাদের নজরে আসে। পরে বৃদ্ধ মহিলাকে পুলিশি উদ্যোগে থানায় এনে মামলা রেকর্ড করা হয়। তিনি জানান, ঘটনাকারীরা যেখানে থাকুক তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। পুলিশ ওই মহিলাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবে। ওই মহিলার ভাসুর হাজী জুনাব আলী জানিয়েছেন, ‘আমার ভাইয়ের বিধবা স্ত্রীর ৬ সন্তান রয়েছে। এর মধ্যে বড় দুই ছেলে দুবাই থাকে। তিন মেয়ে বিবাহিত ও এক ছেলে বর্তমানে বাড়িতে আছে। এই বয়স্ক বিধবা মহিলার ওপর রাতের আঁধারে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করেছে এবং ধর্ষণের ভিডিও করে প্রবাসী ছেলেদের কাছে পাঠিয়েছে। বর্তমানে ওই মহিলা নিরাপত্তাহীনতায় তার পিত্রালয়ে চলে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এই ধর্ষক নরপশুদের কাছে খুবই অসহায়। এরা এলাকার আরও বহু নারীর ইজ্জত এভাবে নষ্ট করেছে।’ স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বরকত উল্লাহর পুত্র আব্দুল্লাহ ওরফে কাড়াকাল একজন ভয়ানক অপরাধী তার বিরুদ্ধে এলাকায় আরও প্রবাসীদের স্ত্রীদের ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া মৃত নুর উদ্দিনের পুত্র আব্দুল্লাহ ওরফে মার্ডারী আব্দুল্লাহ’র বিরুদ্ধে একই এলাকার দলইকান্দী গ্রামের নুর উদ্দিন হত্যা মামলা সহ এলাকায় ধর্ষণ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। তারা সব সময় রাম দা, ডেগার নিয়ে চলাফেরা করে। তাদের বিরুদ্ধে কেউ ইজ্জত সম্মানের ভয়ে সাহস করে কথা বলে না। এদিকে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি গাছবাড়ী এলাকার বাসিন্দা হারুনুর রশিদ জানিয়েছেন, বিষয়টি খুবই লজ্জার ও দুঃখজনক। আমি এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কানাইঘাট থানার ওসিকে আগেই বলেছিলাম। তারপরও রহস্যজনক কারণে পুলিশ অভিযোগ পেয়েও আইনগত ব্যবস্থা নেননি। পরে অবশ্য ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর পুলিশ মামলা নিয়ে অভিযানে নেমেছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status