প্রথম পাতা

আবিরের মৃত্যু ঘিরে রহস্য

মরিয়ম চম্পা

১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, মঙ্গলবার, ৯:৩০ অপরাহ্ন

রাজধানীর উত্তরার শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আবির হোসেন খানের মৃত্যুকে ঘিরে দেখা দিয়েছে নানা রহস্য। শিক্ষার্থী আবির ছাত্রাবাসে নিজের বেডে লাগোয়া গ্রিলের সঙ্গে গামছা পেঁচানো অবস্থায় কাত হয়ে বিছানায় পড়ে ছিল। সাদা চোখে যেটাকে আত্মহত্যা বলা যায় না বলে দাবি পরিবারের। অন্যদিকে শাহীন স্কুলের ছাত্রাবাস কর্তৃপক্ষ বলছে মুঠোফোনে গেমসে আসক্তিকে কেন্দ্র করে আত্মহত্যা করেছে আবির। পরিবারের দাবি এটি আত্মহত্যা নয় হত্যাকাণ্ড। এদিকে শিক্ষার্থীর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নির্ণয়ে কোনো কিনারা করতে পারেনি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ছাত্রাবাসে কোনো শিক্ষার্থী না থাকা সত্ত্বেও একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করে আবিরকে ছাত্রাবাসে পাঠাতে চাপ প্রয়োগ করে ছাত্রাবাস কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে বাধ্য হয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা শিক্ষার্থীর বাবা ফজলুর রহমান খান সঙ্গে করে গত শনিবার সকালে ছেলেকে হোস্টেলে পৌঁছে দিয়ে যান। এ সময় তারা এক সঙ্গে হোটেলে দুপুরের খাবার খান। গত রোববার ক্লাস শুরু হবে তাই নতুন জুতা ও স্কুলড্রেস কিনে দিয়ে যান তিনি। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে মুঠোফোনে গেমস খেলাকে কেন্দ্র করে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটতে পারে।
ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীর গৃহশিক্ষক, ছাত্রাবাসের একাধিক গৃহকর্মী, ছাত্রাবাসে আসা এক জুনিয়র শিক্ষার্থীসহ একাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সামনে পরীক্ষা থাকায় বাসা থেকে ফেরার আগে আবির নিজেই তার মা পল্লী বিদ্যুতের বিলিং সহকারী আবেদা সুলতানা খানের কাছে ফোন রেখে যায়। তাছাড়া মুঠোফোনে আবিরের তেমন কোনো আসক্তি ছিল না। সূত্র জানায়, ছাত্রাবাসের সপ্তম তলার জানালার গ্রিলে গলায় গামছা পেঁচানো অবস্থায় নিজের বিছানায় শরীর এলিয়ে পড়ে ছিল আবির। আত্মহত্যা করলে তাকে আরও উঁচুতে ঝুলতে দেখা যেত বলে জানায় সূত্র। তাছাড়া মৃত্যুর পর তার গলায় সামান্য একটি দাগ ছাড়া শরীরে অন্য কোনো আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি বলে জানায় তদন্ত সূত্র। এটি আত্মহত্যা না কি হত্যা ছিল তা খুঁজে বের করতে ইতিমধ্যে পুলিশের সহযোগিতা কামনা করছে আবিরের পরিবার। সরজমিন ছাত্রাবাসের গৃহকর্মী এবং ছাত্রাবাসে থাকা শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘটনার দিন আবির বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলার জন্য এক গৃহকর্মীর কাছে মুঠোফোন চেয়েছিলেন। এ সময় তিনি ফোন দিতে নিষেধ রয়েছে জানালে আবির তাকে জানায়, ফোন না দিলে বরং আগামীকাল আমার মরদেহটা পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দিয়েন। এদিকে ছাত্রাবাসে থাকা শিক্ষার্থী জানায়, তাদের হোস্টেলের আবাসিক এক শিক্ষক তাকে আবিরকে নিচে ডেকে আনতে পাঠান। এ সময় সে আবিরের কক্ষে গিয়ে গ্রিলের সঙ্গে গামছা পেঁচানো অবস্থায় শরীরের কিছু অংশ বিছানার ওপর পড়ে রয়েছে দেখতে পান। তৎক্ষণাৎ ছাত্রাবাস কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা আবিরকে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনার পর স্কুল খোলা থাকলেও ছাত্রাবাসে তেমন কোনো শিক্ষার্থীকে দেখা যায়নি। আবিরের খালা বলেন, শনিবার মাগরিবের আজানের আগে হঠাৎ একটি ফোন আসে। ছাত্রাবাস থেকে ফোন পেয়ে তৎক্ষণাৎ উত্তরার আধুনিক হাসপাতালে গিয়ে ছেলের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখি। এটা কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু ছিল না। তাকে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক সাজাতে গলায় গামছা পেঁচিয়ে গ্রিলের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। যে কারও কাছেই এটাকে হত্যাকাণ্ড বলে মনে হবে। মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে আমাদের ছেলেটাকে মেরে ফেলা হলো। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার দাবি করছি। তিনি বলেন, বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান ছিল সে। স্বভাবসুলভভাবে আবির ছিল ভদ্র এবং বাধ্য। তাছাড়া পড়ালেখার প্রতি সে অনেক মনোযোগী ছিল। ছেলে পাস করে বেরিয়ে বাবার মতো একজন উচ্চ পদস্থ ব্যাংক কর্মকর্তা হবে- এমনটাই স্বপ্ন ছিল আবিরের বাবা-মায়ের। এদিকে একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় আবিরের বাবা-মা।  বর্তমানে তারা গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে অবস্থান করছেন। এ বিষয়ে জানতে ছাত্রাবাসের পরিচালক সবুজ আলীর সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।     
উত্তরা পশ্চিম থানার উপ-পরিদর্শক (তদন্ত) লাল মিয়া মানবজমিনকে বলেন, এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। প্রাথমিক সুরতহাল প্রতিবেদনে তার গলায় সামান্য দাগ ছাড়া অন্য কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ইতিমধ্যে একাধিক ব্যক্তিকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রয়োজনে তাদেরকে পুনরায় ডাকা হতে পারে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে পুরোপুরি মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status