বিশ্বজমিন

প্রতিদ্বন্দ্বীদের বাজার ক্ষতিগ্রস্ত করতে রবার্ট মুগাবেকে বড় অংকের ঘুষ দেয় বিএটি

মানবজমিন ডেস্ক

১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, সোমবার, ৩:৪৯ অপরাহ্ন

বিবিসি প্যানোরমার তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেছে, দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে’কে বড় অংকের ঘুষ দিয়েছিল বৃটেনের বৃহৎ অন্যতম একটি কোম্পানি। ওই তদন্তে দেখা গেছে, ২০১৩ সালে মুগাবের দল জানু-পিএফ পার্টিকে তিন লাখ থেকে পাঁচ লাখ ডলার ঘুষ দেয়ার সমঝোতায় জড়িত ছিল বৃটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকো (বিএটি)। ডকুমেন্টে আরও তথ্য বেরিয়ে এসেছে, দক্ষিণ আফ্রিকায় ঘুষ দিয়ে যাচ্ছিল বিএটি। সেখানকার বাজারে তাদের প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে অবৈধভাবে সার্ভিলেন্স বা নজরদারিতে ব্যবহার করছিল দক্ষিণ আফ্রিকাকে। তবে বিএটি বলেছে, তারা করপোরেটের সর্বোচ্চ মান বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।

জালিয়াতি এবং সহিংসতার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে ৩৭ বছরের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে সক্ষম হন রবার্ট মুগাবে। ২০১৭ সালে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। মারা যান ২০১৯ সালে। তার দল জানু-পিএফ এখন নতুন নেতৃত্বের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম এবং ইউনিভার্সিটি অব বাথ-এর সঙ্গে যৌথভাবে অনুসন্ধান করে প্যানোরমা হাজার হাজার ফাঁস হওয়া ডকুমেন্টের সন্ধান পেয়েছে। এতে দেখা যায়, আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলে গোপনে কমপক্ষে ২০০ সিক্রেট ইনফরম্যান্ট বা তথ্য প্রদানকারী এজেন্টের একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে অর্থ দিয়েছিল বিএটি। তাদের বেশির ভাগ কাজই আউটসোর্সের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকার বেসরকারি নিরাপত্তা কোম্পানি- ফরেন্সিক সিকিউরিটি সার্ভিসেস (এফএসএস)-এ গিয়ে জমা হতো। কালোবাজারে সিগারেটের বিক্রি বন্ধের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালন করতো এফএসএস। এতে কাজ করতেন এমন সাবেক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিবিসিকে বলেছেন, বিএটির প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে স্যাবোটাজ করার জন্য তারা আইন লঙ্ঘন করতেন।

আভ্যন্তরীণ ডকুমেন্টে দেখা যায়, একটি অপারেশনে জিম্বাবুয়েতে বিএটির প্রতিদ্বন্দ্বীরা পরিচালনা করেন এমন তিনটি সিগারেট উৎপাদনকারী কারখানাকে বন্ধ করে দিতে নির্দেশ দেয়া হয় এফএসএসের স্টাফদের। ২০১২ সালে সাভানা টোব্যাকো কারখানায় সার্ভিলেন্স বা তল্লাশি চালাতে স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠানকে অর্থ দেয় এফএসএস। কিন্তু ধরা পড়ে যায় ওই প্রতিষ্ঠান। বেআইনিভাবে নজরদারি চালানোর কারণে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকদের মধ্যে তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়। তাদেরকে গ্রেপ্তার করার মধ্য দিয়ে কাহিনী অগ্রসর হতে থাকে প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে পর্যন্ত। তিনি দ্রুততার সঙ্গে এসব ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে বক্তব্য দেন। সংশয় প্রকাশ করেন এ ঘটনায় বিএটি’র যুক্ত থাকা নিয়ে। প্যানোরমা দেখতে পেয়েছে যে, পর্দার আড়ালে বিএটির পক্ষে কাজ করা কন্ট্রাক্টররা বিষয়টি নিয়ে জিম্বাবুয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এক্ষেত্রে একজনকে পাঠানো হয় সমঝোতা চুক্তি করতে। ওই কর্মকর্তা নিজের নাম প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি প্যানোরমাকে বলেন, গ্রেপ্তার করা ওই তিন পরিচালকের বিষয়ে আলোচনা নিশ্চিত করতে সরকারি বিভিন্ন কর্মকর্তাকে তিনি ঘুষ দিয়েছিলেন। তার ভাষায়, আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, সরকারি এসব কর্মকর্তা প্রত্যাশা করতেন অথবা হা করে থাকতেন স্বাস্থ্যবান একটি এনভেলপের দিকে, যাতে ভরা থাকতো প্রচুর অর্থ।

এসব ডকুমেন্ট দেখতে পেয়েছে বিবিসি। তারা নিশ্চিত করেছে যে, স্থানীয় মুদ্রায় যে অর্থ ওই ব্যক্তির মাধ্যমে পাঠানো হয়েছিল তা প্রায় ১২ হাজার ডলারের সমান। তাদেরকে বলা হয়েছিল, ওই অর্থ ঘুষ হিসেবে তাদেরকে দিয়েছে বিএটি। আভ্যন্তরীণ একটি মেমোতে তাদের মধ্যকার চুক্তির কথা বলা হয়েছে। জিম্বাবুয়ের একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, জানানো হয়েছিল আসন্ন নির্বাচনে মুগাবের জানু-পিএফ দলকে ডোনেশন দেয়া হবে। মেমোতে বলা হয়েছে, এই ডোনেশনের অর্থ নিয়ে তাদের যাওয়ার কথা প্রেসিডেন্টের কাছে এবং চেষ্টা করার কথা যে, কিভাবে সমস্যা সমাধান করা যায়। এতে আরো বলা হয়, ওই অঞ্চলে জানু-পিএফ দলকে এভাবে যে পরিমাণ ডোনেশন দেয়া হয়েছে তার পরিমাণ তিন লাখ থেকে পাঁচ লাখ ডলার। তবে এই অর্থই শেষ ঘুষ ছিল কিনা তা জানা যায়নি। এ নিয়ে তিনটি সূত্রের সঙ্গে কথা বলেছে প্যানোরমা। ওই তিন সূত্র নিশ্চিত করেছেন যে, এই চুক্তি সম্পর্কে অবহিত ছিল বিএটি। ঘুষ প্রস্তাব করার মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে ওই কোম্পানিটির গ্রেপ্তার করা তিনজন পরিচালককেই ছেড়ে দেয়া হয়। জিম্বাবুয়েতে ঘুষ দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে প্যানোরমাকে কোনো উত্তর দিত অস্বীকৃতি জানিয়েছে বিএটি। তবে রবার্ট মুগাবে’কে ঘুষ দেয়ার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেনি তারা। বৃটিশ কোনো কোম্পানির তরফ থেকে কাউকে ঘুষ দেয়া বৃটিশ আইন বিরোধী, তা সেই ঘুষ হস্তান্তর হোক বা না হোক।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status