শরীর ও মন
ভ্যাকসিন নেওয়া ব্যক্তিদেরও কোভিড হওয়ার ঝুঁকি আছে
১০ সেপ্টেম্বর ২০২১, শুক্রবার, ১০:০৯ পূর্বাহ্ন
কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর প্রথম ২ সপ্তাহ টিকার সুরক্ষামূলক প্রভাব শরীরে সবথেকে বেশি থাকে। তবে এর পরেও কোভিড-১৯ এর কবলে আপনি পড়তে পারেন। তবে দুটি ভ্যাকসিন নেবার পর মানবদেহে এই ভাইরাসের সক্রিয়তা ভ্যাকসিন না নেওয়া মানুষের শরীরে ভাইরাসের সক্রিয়তা থেকে কিছুটা অন্যরকম হয়। কোভিড সিম্পটম স্টাডি অনুসারে, কোভিড-১৯ সংক্রমণের পাঁচটি সাধারণ লক্ষণ হল মাথা ব্যথা, নাক দিয়ে পানি পড়া, হাঁচি, গলা ব্যথা এবং গন্ধ চলে যাওয়া। তবে এই লক্ষণ খুবই সাধারণ, কারণ ভ্যাকসিন নেওয়া এবং না নেওয়া উভয় ব্যক্তির শরীরেই করোনা ঢুকলে এই উপসর্গগুলি সবার আগে দেখা যায়। যদি আপনাকে টিকা না দেওয়া হয়, তবে সর্বাধিক সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে তিনটি হল মাথাব্যথা, গলা ব্যথা এবং নাক দিয়ে পানি পড়া। এছাড়াও জ্বর এবং ক্রমাগত কাশি দেখা দিতে পারে। তবে একবার ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ হয়ে গেলে জ্বর এবং কাশির সমস্যা অনেকটা কমে যায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ব্রেক থ্রু ইনফেকশনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জ্বর হওয়ার সম্ভাবনা টিকা না নেওয়া মানুষের তুলনায় ৫৮% কম। বরং টিকা দেওয়ার পরে কোভিড-১৯ সংক্রমিত অনেকেই জানাচ্ছেন তাদের সাধারণ ঠান্ডা লাগার মতো অনুভূতি হয়েছে। শুধু তাই নয়, টিকা নেওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঝুঁকিও অনেক কমেছে। পাশাপাশি অসুস্থতার প্রাথমিক পর্যায়ে তাদের সেরকম শারীরিক কষ্ট বা দীর্ঘস্থায়ী কোভিড হওয়ার সম্ভাবনাও কমেছে ।
কিসে ঝুঁকি বাড়ে?
যুক্তরাজ্যের গবেষণায় দেখা গেছে যে জনসংখ্যার ০.২% - অথবা প্রতি ৫০০ জনের মধ্যে একজন -সম্পূর্ণ টিকা নেওয়ার পর কোভিড-১৯ সংক্রমণের সম্মুখীন হয়েছেন। কিন্তু সবারই একই ঝুঁকি নেই। টিকা দ্বারা আপনি কতটা সুরক্ষিত আছেন তাতে চারটি জিনিস অবদান রাখে বলে মনে করা হয়।
১. ভ্যাকসিনের ধরণ
প্রথমটি হল নির্দিষ্ট ভ্যাকসিনের ধরণ এবং এটি কোভিডের ঝুঁকি কমাতে কতটা সক্ষম। অর্থাৎ দেখা হয়, টিকা না নেওয়া ব্যক্তির তুলনায় টিকা নেওয়া ব্যক্তির শরীরে যদি কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয় তাহলে টিকা ভাইরাসের সঙ্গে লড়তে কতটা সক্ষম। ক্লিনিকাল ট্রায়ালে দেখা গেছে যে মডার্নার ভ্যাকসিন একজন ব্যক্তির কোভিড-১৯ হওয়ার ঝুঁকি ৯৪% কমিয়ে দিয়েছে, ফাইজার ভ্যাকসিন এই ঝুঁকি ৯৫% কমিয়ে দেয়। জনসন অ্যান্ড জনসন এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনগুলি তুলনামূলক কম কাজ করেছে, তারা কোভিড-১৯ এর ঝুঁকি কমিয়েছে যথাক্রমে প্রায় ৬৬% এবং ৭০%। যদিও অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন দ্বারা প্রদত্ত সুরক্ষা ৮১% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে বলে পরিলক্ষিত হয়েছে যদি ডোজগুলির মধ্যে ব্যবধান বাড়ানো হয় ।
২. টিকা দেওয়ার পরবর্তী সময়
এটি ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, টিকা দেওয়ার সময়কালও বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেই কারণেই বুস্টার ডোজ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। প্রাথমিক গবেষণায় (এখনও বিজ্ঞানীদের দ্বারা পর্যালোচনা করা হয়নি) দেখা গেছে যে, টিকা দেওয়ার ছয় মাসের মধ্যে ফাইজার ভ্যাকসিনের সুরক্ষা হ্রাস পেয়েছে। ইসরায়েল থেকে সংঘটিত আরেকটি গবেষণা থেকেও এই তথ্য প্রাথমিকভাবে সামনে এসেছে। দুটি টিকা নেয়ার ছয় মাসেরও বেশি সময় পর ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কী হয় তা এখনো পরীক্ষাধীন বিষয়, তবে মনে করা হচ্ছে এর কার্যকারিতা কমতে থাকে।
৩. ভ্যারিয়েন্ট
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আপনি যে ভাইরাসের মুখোমুখি হচ্ছেন সেটি কোভিডের কোন ভ্যারিয়েন্ট। পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের তথ্য থেকে জানা যায় যে, ফাইজার ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ যখন আলফা ভ্যারিয়েন্টের সংস্পর্শে আসে তখন এটি অপেক্ষাকৃত কম সুরক্ষা প্রদান করে, কোভিড-১৯ হওয়ার প্রবণতা কমায় ৯৩%। আবার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে সুরক্ষার মাত্রা নেমে যায় ৮৮%। অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনও খানিকটা এইভাবেই কাজ করে। ফাইজার টিকা নেবার ২ থেকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে আপনি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের মুখোমুখি হলে আপনার কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ৮৭% কম। চার থেকে পাঁচ মাস পরে, এই প্রবণতা নেমে আসে ৭৭ শতাংশে।
৪. আপনার ইমিউন সিস্টেম
ওপরে যে পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে তার সঙ্গে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আপনার নিজের শরীরের অনাক্রম্যতা। অর্থাৎ আপনার শরীর নিজে থেকে এই ভাইরাস প্রতিরোধে কতটা সক্ষম। সেই সঙ্গে আপনার পারিপার্শিক পরিবেশের ওপরও নির্ভর করে (যেমন আপনি ভাইরাসের কাছে কতটা উন্মুক্ত)। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সাধারণত বয়সের সাথে সাথে হ্রাস পায়। অনেকের দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা চললে তাদের শরীরে ভ্যাকসিনের প্রতিক্রিয়াও অন্যরকম হতে পারে।তা ই বয়স্ক মানুষ বা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের ভাইরাসের কবলে পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এটাও মনে রাখা দরকার যে, প্রায় ৮ মাস আগে ক্লিনিক্যালি দুর্বল ব্যক্তিরা যাঁরা প্রথম ভ্যাকসিন পেয়েছিলেন, তাঁদের কোভিড-১৯ এ সংক্রমিত হবার ঝুঁকি রয়েছে।
আপনার কি চিন্তা করার দরকার আছে?
ভ্যাকসিন আপনার কোভিড-১৯ হওয়ার সম্ভাবনাকে ব্যাপকভাবে হ্রাস করে। তারা হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুর ঝুঁকিও কমিয়ে দেয়। তবে ভ্যাকসিন যে সুরক্ষা প্রদান করছে তা যদি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত হারে কমতে থাকে তাহলে সেটি উদ্বেগের বিষয়। আর তাই যুক্তরাজ্য সরকার সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তিদের একটি বুস্টার ডোজ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে, এবং আরও ব্যাপকভাবে বুস্টার ডোজ দেওয়া উচিত কিনা তাও বিবেচনা করছে। ফ্রান্স ও জার্মানিসহ অন্যান্য দেশও বুস্টার দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। তবে এর অর্থ এই নয় যে ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ আপনার শরীরে কোনো কাজ করছে না। তাই বিশেষজ্ঞরা বার বার সব সন্দেহকে দূরে রেখে ভ্যাকসিন নেবার পরামর্শ দিচ্ছেন।
সূত্র : The Conversation
কিসে ঝুঁকি বাড়ে?
যুক্তরাজ্যের গবেষণায় দেখা গেছে যে জনসংখ্যার ০.২% - অথবা প্রতি ৫০০ জনের মধ্যে একজন -সম্পূর্ণ টিকা নেওয়ার পর কোভিড-১৯ সংক্রমণের সম্মুখীন হয়েছেন। কিন্তু সবারই একই ঝুঁকি নেই। টিকা দ্বারা আপনি কতটা সুরক্ষিত আছেন তাতে চারটি জিনিস অবদান রাখে বলে মনে করা হয়।
১. ভ্যাকসিনের ধরণ
প্রথমটি হল নির্দিষ্ট ভ্যাকসিনের ধরণ এবং এটি কোভিডের ঝুঁকি কমাতে কতটা সক্ষম। অর্থাৎ দেখা হয়, টিকা না নেওয়া ব্যক্তির তুলনায় টিকা নেওয়া ব্যক্তির শরীরে যদি কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয় তাহলে টিকা ভাইরাসের সঙ্গে লড়তে কতটা সক্ষম। ক্লিনিকাল ট্রায়ালে দেখা গেছে যে মডার্নার ভ্যাকসিন একজন ব্যক্তির কোভিড-১৯ হওয়ার ঝুঁকি ৯৪% কমিয়ে দিয়েছে, ফাইজার ভ্যাকসিন এই ঝুঁকি ৯৫% কমিয়ে দেয়। জনসন অ্যান্ড জনসন এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনগুলি তুলনামূলক কম কাজ করেছে, তারা কোভিড-১৯ এর ঝুঁকি কমিয়েছে যথাক্রমে প্রায় ৬৬% এবং ৭০%। যদিও অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন দ্বারা প্রদত্ত সুরক্ষা ৮১% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে বলে পরিলক্ষিত হয়েছে যদি ডোজগুলির মধ্যে ব্যবধান বাড়ানো হয় ।
২. টিকা দেওয়ার পরবর্তী সময়
এটি ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, টিকা দেওয়ার সময়কালও বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেই কারণেই বুস্টার ডোজ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। প্রাথমিক গবেষণায় (এখনও বিজ্ঞানীদের দ্বারা পর্যালোচনা করা হয়নি) দেখা গেছে যে, টিকা দেওয়ার ছয় মাসের মধ্যে ফাইজার ভ্যাকসিনের সুরক্ষা হ্রাস পেয়েছে। ইসরায়েল থেকে সংঘটিত আরেকটি গবেষণা থেকেও এই তথ্য প্রাথমিকভাবে সামনে এসেছে। দুটি টিকা নেয়ার ছয় মাসেরও বেশি সময় পর ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কী হয় তা এখনো পরীক্ষাধীন বিষয়, তবে মনে করা হচ্ছে এর কার্যকারিতা কমতে থাকে।
৩. ভ্যারিয়েন্ট
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আপনি যে ভাইরাসের মুখোমুখি হচ্ছেন সেটি কোভিডের কোন ভ্যারিয়েন্ট। পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের তথ্য থেকে জানা যায় যে, ফাইজার ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ যখন আলফা ভ্যারিয়েন্টের সংস্পর্শে আসে তখন এটি অপেক্ষাকৃত কম সুরক্ষা প্রদান করে, কোভিড-১৯ হওয়ার প্রবণতা কমায় ৯৩%। আবার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে সুরক্ষার মাত্রা নেমে যায় ৮৮%। অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনও খানিকটা এইভাবেই কাজ করে। ফাইজার টিকা নেবার ২ থেকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে আপনি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের মুখোমুখি হলে আপনার কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ৮৭% কম। চার থেকে পাঁচ মাস পরে, এই প্রবণতা নেমে আসে ৭৭ শতাংশে।
৪. আপনার ইমিউন সিস্টেম
ওপরে যে পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে তার সঙ্গে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আপনার নিজের শরীরের অনাক্রম্যতা। অর্থাৎ আপনার শরীর নিজে থেকে এই ভাইরাস প্রতিরোধে কতটা সক্ষম। সেই সঙ্গে আপনার পারিপার্শিক পরিবেশের ওপরও নির্ভর করে (যেমন আপনি ভাইরাসের কাছে কতটা উন্মুক্ত)। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সাধারণত বয়সের সাথে সাথে হ্রাস পায়। অনেকের দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা চললে তাদের শরীরে ভ্যাকসিনের প্রতিক্রিয়াও অন্যরকম হতে পারে।তা ই বয়স্ক মানুষ বা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের ভাইরাসের কবলে পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এটাও মনে রাখা দরকার যে, প্রায় ৮ মাস আগে ক্লিনিক্যালি দুর্বল ব্যক্তিরা যাঁরা প্রথম ভ্যাকসিন পেয়েছিলেন, তাঁদের কোভিড-১৯ এ সংক্রমিত হবার ঝুঁকি রয়েছে।
আপনার কি চিন্তা করার দরকার আছে?
ভ্যাকসিন আপনার কোভিড-১৯ হওয়ার সম্ভাবনাকে ব্যাপকভাবে হ্রাস করে। তারা হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুর ঝুঁকিও কমিয়ে দেয়। তবে ভ্যাকসিন যে সুরক্ষা প্রদান করছে তা যদি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত হারে কমতে থাকে তাহলে সেটি উদ্বেগের বিষয়। আর তাই যুক্তরাজ্য সরকার সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তিদের একটি বুস্টার ডোজ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে, এবং আরও ব্যাপকভাবে বুস্টার ডোজ দেওয়া উচিত কিনা তাও বিবেচনা করছে। ফ্রান্স ও জার্মানিসহ অন্যান্য দেশও বুস্টার দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। তবে এর অর্থ এই নয় যে ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ আপনার শরীরে কোনো কাজ করছে না। তাই বিশেষজ্ঞরা বার বার সব সন্দেহকে দূরে রেখে ভ্যাকসিন নেবার পরামর্শ দিচ্ছেন।
সূত্র : The Conversation