এক্সক্লুসিভ
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু ঝুঁকি তৎপর সিটি করপোরেশন
নূরে আলম জিকু
১০ সেপ্টেম্বর ২০২১, শুক্রবার, ৭:৩১ অপরাহ্ন
ক্রমেই বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। প্রতিদিনই শনাক্ত হচ্ছে নতুন রোগী। হাসপাতালে বাড়ছে ভিড়। এবছর আক্রান্তদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি শিশু। করোনা মহামারির মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় দুশ্চিন্তায় নগরবাসী। চলতি বছরে মৃত্যুর তালিকা ক্রমেই বাড়ছে। এডিস মশার বিস্তার রয়েছে সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডের বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও পাড়া-মহল্লায়। মশার লার্ভা ধ্বংসে দুই সিটি করপোরেশনের নানা কার্যক্রম নেয়া হলেও কোনো অবস্থাতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না ডেঙ্গু। এরই মধ্যে গত দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান ও পার্শ্ববর্তী স্থানে বেড়েছে এডিসের বংশবিস্তার। দুই সিটিতে সহস্রাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ডেঙ্গুর এই সময়ে কীটনাশক প্রয়োগ করতে পারেনি সিটি করপোরেশন। এমন অবস্থায় স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার পর শিক্ষার্থীরাও ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্যবিদ ও বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে ডেঙ্গু রোগী আরও বাড়তে পারে। কারণ দীর্ঘদিন ধরে সিটি করপোরেশন এসব স্থানে এডিস মশানিধনে অভিযান চালাতে পারেনি। চলতি বছরে ডেঙ্গু রোগী বাড়ার কারণ হিসেবে দুই সিটি করপোরেশনের কাজে সমন্বয়হীনতাকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনের কার্যকরী কোনো উদ্যোগ না থাকায় এডিস মশার বিস্তার কমছে না।
এদিকে করোনার কারণে দেড় বছরের বেশি সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ক্লাসরুম, টয়লেট, খেলার মাঠ ও ছাদসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর চারপাশে জমে থাকা পানিতে বিস্তার ঘটেছে এডিস মশার। এসব স্থান থেকেও এডিস মশা নগরীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়েছে। এরই মধ্যে আগামী ১২ই সেপ্টেম্বর থেকে খুলবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এতে শিক্ষার্থীরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে। এখনো অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন। অনেক শিক্ষার্থী বাসায় থাকার কারণে ডেঙ্গুতে তেমন একটা আক্রান্ত হননি। তবে স্কুল-কলেজ খুললে সেখানে শিক্ষার্থীরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। কারণ দীর্ঘদিন যাবৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রুম, ছাদ, টয়লেট ও আশপাশ পরিষ্কার করা হয়নি। এসব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও মশার কীটনাশক প্রয়োগ না করে স্কুল খুললে শিক্ষার্থীরা ঝুঁকিতে থাকবে। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত আগস্ট মাসে এই মৌসুমের সর্বোচ্চ সংখ্যক ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। গত মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭ হাজার ৬৯৮ জন রোগী। মৃত্যু হয়েছে ৩৪ জনের। তবে সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আরও বেড়েছে। চলতি মাসের প্রথম ছয়দিনে হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৮ জন। একই সময়ে ৬ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে ডেঙ্গুতে কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি। তবে জুলাই থেকে সোয়া দুই মাসেই ৫২ জন মারা গেছেন ডেঙ্গুতে। সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্ট্যাডিজের (সিজিএস) চেয়ারম্যান ও কীটতত্ত্ববিদ ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, এই মুহূর্তে রাজধানীর স্কুলগুলো হচ্ছে ডেঙ্গু সংক্রমণের স্থান। সেখানে মশা থাকলে বাচ্চারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারে। বাচ্চারা এসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে পারে না। ফলে ভাইরাসবাহিত কোনো মশার কামড়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হতে পারে। অনেক স্কুল-কলেজ ও পার্শ্ববর্তী স্থানে পানি জমে থাকে। এতে এডিসের বিস্তার রয়েছে। সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি স্কুল কলেজ কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকরা সচেতন হতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে প্রথমত লার্ভিসাইডিং করতে হবে। এডাল্টিসাইটিং করতে হবে। দেখতে হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মশা আছে কিনা। স্কুলের যেসব ছাত্রছাত্রী হাফ প্যান্ট ও হাফ শার্ট পরে তাদেরকে এই ডেঙ্গুর সময়ে ড্রেস কোট রিলাক্স করে দিতে হবে। শিক্ষার্থীরা যেন ফুলহাতা ড্রেস ও মোজা পরে সেদিকে সকলকে খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। আর এই সময়ে কারও জ্বর হলে সঙ্গে সঙ্গে তা পরীক্ষা করাতে হবে। এতে শিক্ষার্থীরা ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পাবে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন থেকে নেয়া কোনো পদক্ষেপই কার্যকরী নয়। তারা যে উপায়ে মশা নিধন করতে যাচ্ছেন এটা অনেকটা হাস্যকর। তাদের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। এতে রোগী আরও বাড়ছে। ঢাকার সরকারি-বেসরকারি ৪১টি হাসপাতালের তথ্য দিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বাস্তবে ঢাকায় এক হাজারের বেশি হাসপাতাল ও ক্লিনিক আছে। ফলে ডেঙ্গু রোগীর সঠিক সংখ্যা প্রকাশ পায় না। এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রোগীর যে তথ্য দিচ্ছে বাস্তবে রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগী অনেক বেশি। এ বছর ২০১৯ সালের মতো রোগী না থাকলেও ২০১৮ সালের চাইতে কয়েকগুণ বেশি রোগী পাওয়া যাচ্ছে। সিটি করপোরেশন নিয়ন্ত্রণের কথা বললেও বাস্তবে নিয়ন্ত্রণ হয়নি। উত্তর সিটি করপোরেশনে দেখলাম গান বাজনা করে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। জনগণকে সচেতন করছে। এসব করে ডেঙ্গু রোধ করা সম্ভব না। এটা জনগণের সঙ্গে এক প্রকার প্রতারণা। এবার ২৫ থেকে ৩০ হাজার রোগী হবে। যা বাংলাদেশের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারেন। বিষয়টি আমরা আমলে নিয়েছি। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় আমরা ওসব স্থানে মশানিধন কার্যক্রম চালাতে পারিনি। এখন যেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে তাই আমরা সেসব স্থানে কীটনাশক প্রয়োগ করে এডিস মশা নিধন করছি। যাতে কোনো শিক্ষার্থী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত না হন। এজন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪৪৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৮ই সেপ্টেম্বর থেকে ১০ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম চলবে। জমে থাকা পানিতে লার্ভিসাইডিং করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রচার প্রচারণা ও অভিযান না চালালে এ বছরও ২০১৯ সালের মতো পরিস্থিতি হতো। ২০১৯ সালের তুলনায় আমরা এ বছর অনেকটা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি। ডেঙ্গু করোনার মতো নয়। এটা একটা আঞ্চলিক ও সিজনাল। অনেক দেশে এ বছর ডেঙ্গু ভয়াবহ আকারে ছড়িয়েছে। আমরা অন্যদের তুলনায় ভালো অবস্থানে আছি। ভারতের মধ্য প্রদেশে গত এক সপ্তাহে ৫১ জন ডেঙ্গুতে মারা গেছেন। আমাদের দেশে যার সংখ্যা খুবই কম। এ ছাড়া প্রতিবছর ডেঙ্গুর প্রকোপ এক হয় না। বৃষ্টি, তাপমাত্রা ও পরিবেশের কারণে ডেঙ্গু কম বেশি হয়ে থাকে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের টিম নিয়মিত কাজ করছেন। যে যেভাবে পরামর্শ দিচ্ছে তা যাচাই করে আমরা প্রয়োগ করছি। ফলে ডেঙ্গু অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ মানবজমিনকে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। করোনাকালীন সময়েও আমরা অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লার্ভিসাইডিং ও এডাল্টিসাইটিং করেছি। এখন যেহেতু সব স্কুল-কলেজ খুলছে, এসব স্থানে নিয়মিত তদারকি করা হবে। যাতে শিক্ষার্থীদের কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত না হন। তিনি বলেন, ২০১৯ সালের আগস্টে ডেঙ্গু রোগী ছিল ৫২ হাজার। এ বছর ১০ হাজারের চাইতে কম। সিটি করপোরেশনের নিয়মিত অভিযানও কীটনাশক প্রয়োগের কারণে ডেঙ্গু কমেছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ডিএনসিসি’র পক্ষ থেকে ৪৪৩টি সরকারি, বেসরকারি ও আধা-সরকারি প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজের প্রত্যেকটা শ্রেণিকক্ষে ফগিং ও স্প্রে করা হবে। খেলার মাঠ ও ছাদসহ প্রতিষ্ঠানগুলোর চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও টয়লেট কিংবা অন্য কোথাও পানি জমে থাকলে সেখানে লার্ভিসাইডিং করা হবে। এ ছাড়া আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানানো হলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ ফগিং ও লার্ভিসাইডিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের সুস্থ ও সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ খুবই জরুরি। তাই প্রত্যেকটি বাসাবাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা প্রয়োজন।
তারা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে ডেঙ্গু রোগী আরও বাড়তে পারে। কারণ দীর্ঘদিন ধরে সিটি করপোরেশন এসব স্থানে এডিস মশানিধনে অভিযান চালাতে পারেনি। চলতি বছরে ডেঙ্গু রোগী বাড়ার কারণ হিসেবে দুই সিটি করপোরেশনের কাজে সমন্বয়হীনতাকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনের কার্যকরী কোনো উদ্যোগ না থাকায় এডিস মশার বিস্তার কমছে না।
এদিকে করোনার কারণে দেড় বছরের বেশি সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ক্লাসরুম, টয়লেট, খেলার মাঠ ও ছাদসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর চারপাশে জমে থাকা পানিতে বিস্তার ঘটেছে এডিস মশার। এসব স্থান থেকেও এডিস মশা নগরীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়েছে। এরই মধ্যে আগামী ১২ই সেপ্টেম্বর থেকে খুলবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এতে শিক্ষার্থীরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে। এখনো অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন। অনেক শিক্ষার্থী বাসায় থাকার কারণে ডেঙ্গুতে তেমন একটা আক্রান্ত হননি। তবে স্কুল-কলেজ খুললে সেখানে শিক্ষার্থীরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। কারণ দীর্ঘদিন যাবৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রুম, ছাদ, টয়লেট ও আশপাশ পরিষ্কার করা হয়নি। এসব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও মশার কীটনাশক প্রয়োগ না করে স্কুল খুললে শিক্ষার্থীরা ঝুঁকিতে থাকবে। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত আগস্ট মাসে এই মৌসুমের সর্বোচ্চ সংখ্যক ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। গত মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭ হাজার ৬৯৮ জন রোগী। মৃত্যু হয়েছে ৩৪ জনের। তবে সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আরও বেড়েছে। চলতি মাসের প্রথম ছয়দিনে হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৮ জন। একই সময়ে ৬ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে ডেঙ্গুতে কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি। তবে জুলাই থেকে সোয়া দুই মাসেই ৫২ জন মারা গেছেন ডেঙ্গুতে। সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্ট্যাডিজের (সিজিএস) চেয়ারম্যান ও কীটতত্ত্ববিদ ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, এই মুহূর্তে রাজধানীর স্কুলগুলো হচ্ছে ডেঙ্গু সংক্রমণের স্থান। সেখানে মশা থাকলে বাচ্চারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারে। বাচ্চারা এসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে পারে না। ফলে ভাইরাসবাহিত কোনো মশার কামড়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হতে পারে। অনেক স্কুল-কলেজ ও পার্শ্ববর্তী স্থানে পানি জমে থাকে। এতে এডিসের বিস্তার রয়েছে। সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি স্কুল কলেজ কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকরা সচেতন হতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে প্রথমত লার্ভিসাইডিং করতে হবে। এডাল্টিসাইটিং করতে হবে। দেখতে হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মশা আছে কিনা। স্কুলের যেসব ছাত্রছাত্রী হাফ প্যান্ট ও হাফ শার্ট পরে তাদেরকে এই ডেঙ্গুর সময়ে ড্রেস কোট রিলাক্স করে দিতে হবে। শিক্ষার্থীরা যেন ফুলহাতা ড্রেস ও মোজা পরে সেদিকে সকলকে খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। আর এই সময়ে কারও জ্বর হলে সঙ্গে সঙ্গে তা পরীক্ষা করাতে হবে। এতে শিক্ষার্থীরা ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পাবে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন থেকে নেয়া কোনো পদক্ষেপই কার্যকরী নয়। তারা যে উপায়ে মশা নিধন করতে যাচ্ছেন এটা অনেকটা হাস্যকর। তাদের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। এতে রোগী আরও বাড়ছে। ঢাকার সরকারি-বেসরকারি ৪১টি হাসপাতালের তথ্য দিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বাস্তবে ঢাকায় এক হাজারের বেশি হাসপাতাল ও ক্লিনিক আছে। ফলে ডেঙ্গু রোগীর সঠিক সংখ্যা প্রকাশ পায় না। এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রোগীর যে তথ্য দিচ্ছে বাস্তবে রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগী অনেক বেশি। এ বছর ২০১৯ সালের মতো রোগী না থাকলেও ২০১৮ সালের চাইতে কয়েকগুণ বেশি রোগী পাওয়া যাচ্ছে। সিটি করপোরেশন নিয়ন্ত্রণের কথা বললেও বাস্তবে নিয়ন্ত্রণ হয়নি। উত্তর সিটি করপোরেশনে দেখলাম গান বাজনা করে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। জনগণকে সচেতন করছে। এসব করে ডেঙ্গু রোধ করা সম্ভব না। এটা জনগণের সঙ্গে এক প্রকার প্রতারণা। এবার ২৫ থেকে ৩০ হাজার রোগী হবে। যা বাংলাদেশের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারেন। বিষয়টি আমরা আমলে নিয়েছি। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় আমরা ওসব স্থানে মশানিধন কার্যক্রম চালাতে পারিনি। এখন যেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে তাই আমরা সেসব স্থানে কীটনাশক প্রয়োগ করে এডিস মশা নিধন করছি। যাতে কোনো শিক্ষার্থী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত না হন। এজন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪৪৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৮ই সেপ্টেম্বর থেকে ১০ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম চলবে। জমে থাকা পানিতে লার্ভিসাইডিং করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রচার প্রচারণা ও অভিযান না চালালে এ বছরও ২০১৯ সালের মতো পরিস্থিতি হতো। ২০১৯ সালের তুলনায় আমরা এ বছর অনেকটা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি। ডেঙ্গু করোনার মতো নয়। এটা একটা আঞ্চলিক ও সিজনাল। অনেক দেশে এ বছর ডেঙ্গু ভয়াবহ আকারে ছড়িয়েছে। আমরা অন্যদের তুলনায় ভালো অবস্থানে আছি। ভারতের মধ্য প্রদেশে গত এক সপ্তাহে ৫১ জন ডেঙ্গুতে মারা গেছেন। আমাদের দেশে যার সংখ্যা খুবই কম। এ ছাড়া প্রতিবছর ডেঙ্গুর প্রকোপ এক হয় না। বৃষ্টি, তাপমাত্রা ও পরিবেশের কারণে ডেঙ্গু কম বেশি হয়ে থাকে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের টিম নিয়মিত কাজ করছেন। যে যেভাবে পরামর্শ দিচ্ছে তা যাচাই করে আমরা প্রয়োগ করছি। ফলে ডেঙ্গু অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ মানবজমিনকে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। করোনাকালীন সময়েও আমরা অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লার্ভিসাইডিং ও এডাল্টিসাইটিং করেছি। এখন যেহেতু সব স্কুল-কলেজ খুলছে, এসব স্থানে নিয়মিত তদারকি করা হবে। যাতে শিক্ষার্থীদের কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত না হন। তিনি বলেন, ২০১৯ সালের আগস্টে ডেঙ্গু রোগী ছিল ৫২ হাজার। এ বছর ১০ হাজারের চাইতে কম। সিটি করপোরেশনের নিয়মিত অভিযানও কীটনাশক প্রয়োগের কারণে ডেঙ্গু কমেছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ডিএনসিসি’র পক্ষ থেকে ৪৪৩টি সরকারি, বেসরকারি ও আধা-সরকারি প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজের প্রত্যেকটা শ্রেণিকক্ষে ফগিং ও স্প্রে করা হবে। খেলার মাঠ ও ছাদসহ প্রতিষ্ঠানগুলোর চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও টয়লেট কিংবা অন্য কোথাও পানি জমে থাকলে সেখানে লার্ভিসাইডিং করা হবে। এ ছাড়া আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানানো হলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ ফগিং ও লার্ভিসাইডিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের সুস্থ ও সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ খুবই জরুরি। তাই প্রত্যেকটি বাসাবাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা প্রয়োজন।