এক্সক্লুসিভ

সিলেট মেট্রো পুলিশে হঠাৎ করে ‘কম্পন’

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে

৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, মঙ্গলবার, ৭:৫৮ অপরাহ্ন

হঠাৎ করে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ‘কম্পন’ চলছে। গুরুত্বপূর্ণ দুই থানার ওসিসহ পুলিশের ১১ জন সদস্যকে সিলেট থেকে বদলি করা হয়েছে। এ নিয়ে খোদ পুলিশের ভেতরেই তোলপাড় চলছে। মহানগর পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- যাদের সিলেট থেকে বদলি করা হয়েছে; পুলিশ হেড কোয়ার্টারের নির্দেশে বদলি করা হয়েছে। এরমধ্যে সিলেটের পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফের ব্যক্তিগত স্টাফরাও রয়েছেন। কেন এই বদলি- এ নিয়ে কোনো কিছুই জানে না মহানগর পুলিশের মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তারা। তারা জানিয়েছেন- কেন তাদের বদলি করা হয়েছে সেটি কেবল জানে পুলিশ হেডকোয়ার্টার। গত বছরের শেষের দিকে সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে এসে নগরীর নেহারী পাড়ার যুবক রায়হানকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় সিলেট মহানগর পুলিশের ভাবমূর্তি সংকটের মুখে পড়ে। দোষী পুলিশদের গ্রেপ্তারের জন্য আন্দোলন গড়ে ওঠে সিলেটে। বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন দায়িত্বরত আইসি এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়া পালিয়ে ভারতেও গিয়েছিলেন। পরে কানাইঘাটের সীমান্ত এলাকা থেকে জেলা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় সিলেট মহানগর পুলিশের ভাবমূর্তি শূন্যের কোটায় নেমে আসে। এই অবস্থায় পুলিশ হেডকোয়ার্টারের পক্ষ থেকে সিলেটের দিকে নজর দেয়া হয়। সিলেট থেকে ওই সময়ের পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়াকে সরিয়ে সেখানে নিয়ে আসা হয় বর্তমান পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফকে। পরবর্তীতে নিশারুল আরিফই এক সঙ্গে সিলেটের ৬ থানার ওসিদের সরিয়ে দিয়ে ৬ জন নতুন ইন্সপেক্টরকে মহানগরীর ৬ থানার ওসির দায়িত্ব দেন। এর বাইরেও তিনি পুলিশের অভ্যন্তরে রদবদল করেন তিনি। এই রদবদলে অনেক কর্মকর্তাকে সিলেট রেঞ্জ পুলিশসহ দেশের বিভিন্ন রেঞ্জ ও ইউনিটে সংযুক্ত করেন। ফলে এ নিয়ে ওই সময় বদলি হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ ছিল। ‘দোষ’ না করেও অনেককে চলে যেতে হয়েছিলো সিলেট থেকে। পুলিশের অভ্যন্তরের শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করতে গিয়ে সফল হয়েছিলেন বর্তমান কমিশনার নিশারুল আরিফ। তবে- মাঠ পর্যায়ের কিছু কিছু পুলিশের বিরুদ্ধে নানা সময় অভিযোগ উঠলেও সেটি গুরুতর পর্যায়ে যায়নি। চারদিন আগে হঠাৎ করে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের নির্দেশে সিলেটের দুই থানার ওসিসহ ১১ জন পুলিশ সদস্যকে বদলি করা হয়েছে। এদের মধ্যে কোতোয়ালি থানার ওসি এসএম আবু ফরহাদ ও দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলামকে ঢাকায় সিআইডিতে বদলি করা হয়েছে। বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মফিজুর রহমানকে ঢাকায় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন), দক্ষিণ সুরমা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই রোকনুজ্জামানকে এপিবিএনে, কোতোয়ালি থানার এস আই মামুনুর রশীদ ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এস আই এস আবু রায়হান নূরকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশে, সহকারী এএসআই মাহফুজ আহমদকে এপিবিএনে এবং নজিবুর রহমানকে খুলনা মহানগর পুলিশে বদলি করা হয়েছে। এ ছাড়া এসএমপি’র ৩ জন কনস্টেবলকে বদলি করা হয়েছে শিল্পাঞ্চল পুলিশ ও এপিবিএনে। পুলিশ জানিয়েছে- বদলিকৃতদের মধ্যে বর্তমান কমিশনার নিশারুল আরিফের ব্যক্তিগত দুই কনস্টেবল রয়েছে। সিলেটের বহুল আলোচিত দুই ফাঁড়ি বন্দরবাজার ও দক্ষিণ সুরমার দুই আইসি ও দুই থানার ওসি রয়েছেন। এই বদলি নিয়ে খোদ পুলিশের অভ্যন্তরেও তোলপাড় চলছে। তবে পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে- পুলিশ হেডকোয়ার্টার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের কারণে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের সিলেট থেকে সরিয়ে নিয়েছে। এরআগে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের পক্ষ থেকে বিষয়টির তদন্ত করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা পুলিশ ফাঁড়ি ও বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি এলাকায় নানা ঘটনা ঘটেছে। রায়হান হত্যার পর ফাঁড়ি পুলিশকে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিলো সেটি পুরোপুরি মানা হয়নি। দক্ষিণ সুরমা ফাঁড়ি পুলিশে গত কোরবানির ঈদে পশুর হাট কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে বিরোধের সৃষ্টি হয়েছিলো। এ ঘটনায় পরবর্তীতে ফাঁড়ি পুলিশের এস আই রোকনুজ্জামানের পক্ষ থেকে পুলিশ এসল্ট মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনা বিতর্কিত হয়েছেন দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি। এ ছাড়া সিলেট-৩ আসনে নির্বাচন কেন্দ্রিক নানা ঘটনায়ও ওসিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করা হয়েছিলো। দক্ষিণ সুরমায় বিএনপি’র এক নেতার বাড়িতে হামলার ঘটনায়ও ওসির ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছিলো। ওই সময় একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়া নিয়েও তাকে নিয়ে নানা আলোচনা হয়। সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি রায়হান হত্যার ঘটনার পর থেকে বিতর্কিত। এরপর থেকে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের নজরে ছিল বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বন্দরবাজার ফাঁড়ি পুলিশের কার্যক্রম নিয়ে আবারো ব্যবসায়ীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বন্দরবাজার এলাকাকে হকারমুক্ত করা নিয়ে পুলিশের প্রতিই সব অভিযোগের আঙ্গুল তোলা হচ্ছে। ফাঁড়ির কর্মকাণ্ডের কারণে ওসি এসএম আবু ফরহাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এসব কারণে সিলেট মহানগর পুলিশের দুই ওসিসহ ১১ সদস্যকে বদলি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের ওই সূত্র। তবে- একসঙ্গে ১১ জনকে বদলি করার কারণ জানেন না বলে জানিয়েছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) বিএম আশরাফ উল্ল্যা তাহের। তিনি জানিয়েছেন- ‘তাদের কেন বদলি করা হয়েছে সেটি জানে হেডকোয়ার্টার। বদলির আদেশ আসার আগে এসব কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে এসএমপিতে কোনো অভিযোগ ওঠেনি। কিংবা তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ারও কোনো ঘটনা ঘটেনি। এজন্য কী কারণে তাদের বদলি করা হয়েছে সেটি তিনি জানেন না’।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status