অনলাইন

কুমার-জেলে-হকার-দোকানি-রিকশাচালকদের জামানতবিহীন ঋণ: বাংলাদেশ ব্যাংক

অর্থনৈতকি রিপোর্টার

২০২১-০৯-০৫

 ১০ টাকার হিসাবধারীদের জন্য ৫০০ কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ তহবিল থেকে পাড়া-মহল্লা গ্রামে ছোট ও অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও পেশাজীবী, কামার, কুমার, জেলে, ভূমিহীন কৃষক, হকার, দোকানি ও রিকশাচালকরা সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকার জামাতনবিহীন ঋণ নিতে পারবে। এ ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার হবে ৭ শতাংশ। রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্ট এ সংক্রান্ত নতুন একটি স্কিম পুনর্গঠন করে নীতিমালা জারি করেছে। কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত নিম্নআয়ের পেশাজীবী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুদ্ধার ও অব্যাহত রাখতে ঋণসীমা ও তহবিলের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। নতুন তহবিলের নাম ‘১০, ৫০ ও ১০০ টাকার হিসাবধারী প্রান্তিক ও ভূমিহীন কৃষক, নিম্নআয়ের পেশাজীবী, স্কুল ব্যাংকিং হিসাবধারী এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য গঠিত পুনঃঅর্থায়ন স্কিম’। পাঁচ বছর মেয়াদি ৫০০ কোটি টাকার এ স্কিম বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল গঠন করা হয়েছে। যা নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে আবর্তনশীল। তবে প্রয়োজনে মেয়াদ বৃদ্ধি করা যাবে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রমের আওতায় এ স্কিমের অধীনে ঋণ সুবিধা গ্রহণকারী সব গ্রাহকই হবে বিদ্যমান ১০, ৫০ ও ১০০ টাকার হিসাবধারী। তবে এ স্কিমের আওতায় ঋণ সুবিধা নেওয়ার জন্য নতুন গ্রাহকদের আবশ্যিকভাবে ১০, ৫০ ও ১০০ টাকার ব্যাংক হিসাব খুলতে হবে। যারা ঋণ পাবেন পাড়া, মহল্লা, গ্রামভিত্তিক ক্ষুদ্র-অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও পেশাজীবী (যেমন- চর্মকার, স্বর্ণকার, ক্ষৌরকার, কামার, কুমার, জেলে, দর্জি, হকার ও ফেরিওয়ালা, রিকশাচালক ও ভ্যানচালক, ইলেকট্রিক, ইলেকট্রনিক যন্ত্র মেরামতকারী, ইলেকট্রিশিয়ান, কাঠমিস্ত্রি, রাজমিস্ত্রী, রংমিস্ত্রী, গ্রিলমিস্ত্রী, প্লাম্বার, আচার/পিঠা প্রস্তুতকারী, ক্ষুদ্র তাঁতী, পশু চিকিৎসক ইত্যাদি) এবং যেকোনো ধরনের আয় উৎসারী কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তি (যেমন: মুদি ও মনোহরী পণ্যের দোকানি, ভ্রাম্যমাণ কাপড়ের দোকানি, ফ্লেক্সিলোড সেবা প্রদানকারী ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস এজেন্ট, তথ্য সেবা প্রদানকারী, ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী, ভাসমান খাবারের দোকানি, চা-পান বিক্রেতা, বই, পত্রিকা, ম্যাগাজিন বিক্রেতা, ঠোঙা, মোড়ক প্রস্তুতকারী, ফুল, ফল, শাক-সবজি বিক্রেতা, হাঁস-মুরগি-কবুতর-কোয়েল পালনকারী, গরু-ছাগল-ভেড়া ইত্যাদি গবাদিপশু পালনকারী, চিংড়ি, মৎস্য, কাঁকড়া, কুঁচে চাষি, কেঁচো সারসহ যেকোনো জৈব সার উৎপাদনকারী, সবজি চাষি, উদ্যোক্তা-নার্সারি/বৃক্ষরোপণ, সূঁচিশিল্প, ব্লক-বাটিক, ক্ষুদ্র/কুটিরশিল্প, হস্তশিল্প, কনফেকশনারিসহ অন্যান্য খাবার প্রস্তুতকরণ ও অন্য যেকোনো সম্ভাবনাময় উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তি এবং বিভিন্ন আয় উৎসারী কর্মকাণ্ড পরিচালনায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ভিডিপি সদস্য) এ ঋণ সুবিধার আওতাভুক্ত হিসেবে বিবেচিত হবেন। এছাড়া যেকোনো দুর্যোগে (প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট) ক্ষতিগ্রস্ত (যেমন: নদীভাঙন, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা, মঙ্গা, অগ্নিকাণ্ড, ভূমিকম্প, ভবনধস, কোভিড-১৯ এর মতো অতিমারি ইত্যাদি) প্রান্তিক ও ভূমিহীন কৃষক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, নিম্নআয়ের পেশাজীবী এবং চর ও হাওর এলাকায় বসবাসকারী স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ ঋণ সুবিধা পাবে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি ও নারী উদ্যোক্তারা যেকোনো ধরনের আয় উৎসারী কর্মকাণ্ডে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ ঋণ সুবিধা পাবে। স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমের মাধ্যমে আর্থিক অনর্ভুক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি মানবসম্পদ উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে- সুবিধাবঞ্চিত ও অসচ্ছল স্কুল ব্যাংকিং হিসাবধারীদের (শিক্ষা জীবন থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীসহ) বৃত্তিমূলক, কারিগরি ও তথ্য প্রযুক্তিসহ অন্যান্য প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো উক্ত স্কিমের আওতায় অভিভাবকের পরিশোধ গ্যারান্টির ভিত্তিতে ঋণসুবিধা প্রদান করতে পারবে। ঋণ প্রাপ্তির অযোগ্যতা খেলাপি ঋণগ্রহীতা এ স্কিমের আওতায় ঋণসুবিধা প্রাপ্য হবেন না এবং বাংলাদেশ সরকার/বাংলাদেশ ব্যাংকের সুদ ভর্তুকির আওতায় অন্যকোনো স্কিমের অধীন ঋণগ্রহীতার প্রাপ্ত ঋণ অসমন্বিত অবস্থায় থাকলে ঐ ঋণগ্রহীতা ঋণ সুবিধা প্রাপ্য হবেন না। গ্রাহক পর্যায়ে ঋণসীমা তফসিলি ব্যাংক এ স্কিমের আওতায় গ্রাহকের প্রয়োজনীয়তা যাচাই সাপেক্ষে একক গ্রাহককে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে পারবে। গ্রুপ ঋণের ক্ষেত্রে ২-৫ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত গ্রুপকে সদস্য প্রতি সর্বোচ্চ চার লাখ টাকা করে গ্রুপ প্রতি সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা ঋণ প্রদান করতে পারবে। গ্রুপ ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে গ্রুপের সব সদস্যই ব্যক্তিগত ও যৌথভাবে ব্যাংকের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। পুনঃঅর্থায়নের সুদ ও মুনাফার হার অর্থায়নকারী ব্যাংকের অনুকূলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়নের বার্ষিক সুদ ও মুনাফার হার হবে ১ শতাংশ। গ্রাহক পর্যায়ে সুদ ও মুনাফার হার ব্যাংক কর্তৃক গ্রাহক পর্যায়ে প্রদত্ত ঋণ ও বিনিয়োগের বিপরীতে সুদ ও মুনাফার হার হবে বার্ষিক সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ। গ্রাহকের ঋণ ও বিনিয়োগের ক্রমহ্রাসমান স্থিতির উপর সুদ ও মুনাফা আরোপ করতে হবে। জামানত এ স্কিমের আওতায় ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো নিরাপত্তা জামানত নেওয়া যাবে না। তবে প্রত্যেক ঋণ গ্রহীতার ঋণের বিপরীতে ঋণ গ্রহীতাসহ অনধিক দুইজনের ব্যক্তিগত গ্যারান্টি গ্রহণ করা যাবে। তিন লাখ টাকা ও তদূর্ধ্ব পরিমাণ ঋণ সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাংক নিজস্ব বিবেচনায় সম্পূর্ণ ঋণের বিপরীতে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে। এক্ষেত্রে ব্যাংক নিজস্ব উৎস হতে গ্যারান্টি ফি পরিশোধ করবে। ঋণের মেয়াদ, গ্রেস পিরিয়ড ও পরিশোধ সূচি ব্যাংক ও গ্রাহক পর্যায়ে উভয় ক্ষেত্রে গ্রেস পিরিয়ড হবে সর্বোচ্চ ৬ মাস। গ্রেস পিরিয়ড ব্যতিরেকে ঋণের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ৩ বছর। বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রেস পিরিয়ড বাদে ত্রৈমাসিক কিস্তিতে ব্যাংকগুলো থেকে সুদ/মুনাফা/সার্ভিস চার্জসহ আসল আদায় করবে এবং ব্যাংকগুলো গ্রেস পিরিয়ড বাদে মাসিক ও ত্রৈমাসিক ও ষান্মাসিক (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) কিস্তিতে গ্রাহকের কাছ থেকে সুদ ও মুনাফাসহ আসল আদায় করবে।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status