শিক্ষাঙ্গন

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর মানতে হবে যা যা

পিয়াস সরকার

২৮ আগস্ট ২০২১, শনিবার, ৮:৪১ অপরাহ্ন

দীর্ঘ অপেক্ষার সমাপ্তি ঘটছে। সুনির্দিষ্ট ঘোষণা এসেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফেরার পরও মানতে হবে নতুন নিয়ম। তবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের অপেক্ষার পাল্লাটা আরও দীর্ঘ হচ্ছে। সংক্রমণের হার ৫ শতাংশে বা কিছুটা বেশি থাকার পর খুলবে স্কুল।
প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান খুলতে ১লা সেপ্টেম্বর যৌথ বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। স্কুল-কলেজ খোলার রোডম্যাপ ইতিমধ্যে তৈরি করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো। এগুলো করোনা মেকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক নিয়েই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

স্কুল-কলেজ খোলার পর একটি ক্লাসের শিক্ষার্থীদের ভাগ করে ৩টি শ্রেণিকক্ষে ক্লাস নেয়া হবে। এছাড়া সকলের জন্য ক্লাসে মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হবে। তবে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির মতে ক্লাসে মাস্কের পরিবর্তে ফেসশিল্ডের কথাও বলা হচ্ছে। বিশেষ করে ৫ থেকে ১২ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের জন্য।
এছাড়াও প্রস্তাব করা হয়েছে প্রাথমিকভাবে স্কুল-কলেজে সপ্তাহে দুইদিন করে ক্লাস নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঢোকার সময়ে শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় খোলার মূল শর্ত হিসেবে এই পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানের সকলের টিকা দেয়া। এটি সম্পন্ন হলেই সশরীরে ক্লাস নেয়া ও আবাসিক হল খোলা যাবে। তার আগে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে কতজন শিক্ষক-শিক্ষার্থী টিকা নিয়েছেন, কতজন টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন, আর কতজন এক ডোজ নিয়েছেন- এসব তথ্য বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউজিসির কাছে লিখিত আকারে জানাতে হবে।

তিন ধাপে খুলবে বিশ্ববিদ্যালয়। প্রথম ধাপে অনার্স চতুর্থ বর্ষ ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের হল-ক্যাম্পাসে নিয়ে আসা হবে। তাদের ক্লাস-পরীক্ষা সশরীরে নেয়া হবে। এরপর পরিস্থিতি দেখে সেকেন্ড স্টেজে তৃতীয়, দ্বিতীয় ও প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে নিয়ে আসা হবে। সবশেষ ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষা শেষ করে তাদের ক্যাম্পাসে আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের যদি প্রস্তুতিতে ঘাটতি থাকে তবে তারা পরেও ক্যাম্পাস খুলতে পারবে। এক্ষেত্রে একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়। এতে ৪টি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এক. আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী করোনার সংক্রমণের হার ৫ শতাংশ বা তার কম থাকলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া যায় । বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশে বিশালসংখ্যক শিক্ষার্থী পারিবারিক পরিমণ্ডলে স্বল্প পরিসরে অনেকের সঙ্গে বসবাস করে। করোনার কারণে দীর্ঘ ১৭ মাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শ্রেণীকক্ষে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা বিশেষত শিশু-কিশোররা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে না যেতে পারায় এবং বেশিরভাগ সময় বাড়িতে থাকতে বাধ্য হওয়ায় সমবয়সীদের সঙ্গে মেশা ও অবাধে খেলাধুলা করার সুযোগ না পাওয়ায় তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর এর বিরূপ প্রতিক্রিয়াসহ সম্ভাব্য সকল নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়টি সম্পর্কে সরকার সম্পূর্ণ সচেতন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় নির্দেশনা রয়েছে সম্ভব দ্রুততম সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার। এ সার্বিক বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ক্ষেত্রে সংক্রমণের হার ৫ শতাংশ বা তার চেয়ে কিছুটা বেশি থাকলেও ঠিক কোন পর্যায়ে পৌঁছালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা যায় সে বিষয়ে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির পরামর্শ চাওয়া হবে। এ বিষয়ে আগামী সপ্তাহে একটি যৌথ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

দুই. শিক্ষামন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল রিওপেনিং প্ল্যান চূড়ান্ত করে রেখেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ক্ষেত্রে এই পরিকল্পনা যথাযথ বাস্তবায়ন এবং স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মেনে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার বিষয়টি কার্যকরভাবে মনিটরিং এর লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানসমূহ কর্তৃক বাধ্যতামূলক দৈনিক প্রতিবেদন প্রেরণ নিশ্চিতকরণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহায়তায় ‘চেকলিস্ট’ প্রণয়ন করা হবে আগামী ৭ দিনের মধ্যে।

তিন, আগামী ৭ দিনের মধ্যে সকল বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সকল শিক্ষার্থীর তথ্য নিয়ে, যে সকল শিক্ষার্থীরা এখনো টিকা গ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেনি কিন্তু শিক্ষার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) আছে তাদের তালিকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রেরণ করবে এবং যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নেই কিন্তু বয়স ১৮ পেরিয়ে গেছে তাদের একটি তালিকা প্রণয়ন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় যাদের এনআইডি নেই কিন্তু বয়স ১৮ এর উপর তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পাওয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সহযোগিতা চাইবে।
চার, জাতীয় পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও যে সকল শিক্ষার্থী এখনো টিকা নিতে পারেনি তাদের এবং শিক্ষক কর্মচারী যাদের এখনো টিকা নেয়া বাকি রয়েছে তাদের টিকাদান সহজ করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোকে টিকাদান কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা এবং প্রয়োজনে সকল জেলায় একটি (বা প্রয়োজনে একাধিক হতে পারে) করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কারিগরি সহায়তায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে শুধুমাত্র শিক্ষার্থী ও শিক্ষক কর্মচারীদের জন্য টিকাদান কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনারও ব্যবস্থা করা হবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি ১১ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। গত বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে ভার্চ্যুয়াল সভায় যুক্ত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মো. মহিবুল হাসান চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কাজী শহীদুল্লাহসহ সকল মেম্বারবৃন্দ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম, সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরগণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ৭ কলেজের অধ্যক্ষগণ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক, সকল বোর্ডের চেয়ারম্যানগণ, দুই মন্ত্রণালয়ের সকল অধিদপ্তরের মহাপরিচালকবৃন্দ, কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ও ডা. নাছিমা আখতারসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status