শেষের পাতা

ইউরোপ পাঠানোর নামে প্রতারণা

ভুয়া উপ-সচিবদের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব শত যুবক

স্টাফ রিপোর্টার

২০২১-০৮-১৯

চক্রের সদস্য সংখ্যা ১৫ থেকে ২০ জন। প্রত্যেকেই নিজেকে পরিচয় দিতো উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে। কারও সঙ্গে পরিচয়ের সময় মন্ত্রণালয়ে চাকরি করেন এমন ভিজিটিং কার্ড দিতেন। চলাফেরা করতেন দামি গাড়িতে। পরতেন বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ডের পোশাক। কথা বলতেন ইংরেজি-বাংলা মিলিয়ে। কারও সঙ্গে কথা বলতে চাইলে অফিসের বদলে বসতেন অভিজাত এলাকার চাইনিজ রেস্তরাঁয়। এতে করে ভুক্তভোগীরা সহজেই আকৃষ্ট হতেন। মানুষকে আশ্বাস দিতেন অল্প টাকায় ইউরোপের দেশগুলোতে পাঠানোর। কেউ রাজি হলেই তার কাছ থেকে পাসপোর্ট ও অগ্রিম কয়েক লাখ টাকা নিয়ে যেতেন। লোভে পড়ে কাজ তাড়াতাড়ি করার জন্য অনেকে চুক্তির সকল টাকা পরিশোধ করে দিতেন। কিন্তু বাস্তবে চক্রের সদস্যরা কাউকে ইউরোপ পাঠাতে পারতেন না। চুক্তি করে টাকা নেয়ার পর কিছুদিন সময় দিতেন। এই সময়ের ভেতরে তারা আরও অনেকের কাছ থেকে টাকা নিজের হেফাজতে নিয়ে যেতো। তার কিছুদিন পর তাদের অফিস বন্ধ করে ওই এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় গিয়ে নতুন অফিস নিতো। বন্ধ করে দিতো তাদের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন এলাকায় অফিস করে মানুষকে কথার ফাঁদে ফেলে তারা নিঃস্ব করেছে শত শত মানুষকে। যারা তাদের শেষ সম্বল চক্রের সদস্যদের হাতে তুলে স্বপ্নপূরণ করতে চেয়েছিলেন।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ভুক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- জহিরুল ইসলাম ওরফে রিপন ও মো. আবু ইয়ামিন ওরফে আশিকুর রহমান। এরমধ্যে জহিরুল ইসলাম ওরফে রিপন ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানার গোবিন্দপুর গ্রামের মৃত ফজলুল হকের ছেলে। আর মো. আবু ইয়ামিন ওরফে আশিকুর রহমান ময়মনসিংহ জেলার কাওয়ালাটি ফকিরবাড়ি গ্রামের আব্দুর রশিদ ফকিরের ছেলে। গতকাল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ঢাকা মেট্রো দক্ষিণের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আল-আরাফাত ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর নামে ভুয়া ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানোর নামে তিন থেকে চার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্র। অনেকের কাছ থেকে টাকা নেয়ার পর কথিত অফিস বন্ধ করে দেয়। রাজধানীর গুলশানের ইউনিকর্ন প্লাজায় এই চক্রের অফিসের ঠিকানা থাকলেও বর্তমানে সেখানে তাদের কোনো শাখা বা অফিসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। ১৫ থেকে ২০ জনের সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের মধ্যে কেউ কেউ নিজেকে উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিতো। তারা চলাফেরা করতো দামি গাড়িতে। ভিজিটিং কার্ড বানিয়ে সহজেই মানুষকে বোকা বানিয়ে আসছিল। সরকারি চাকরি দেয়ার কথা বলেও বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ ঘটনায় ২০২১ সালের ৩১শে জুলাই তাদের বিরুদ্ধে রামপুরা থানায় মামলা করা হয়। ঘটনাটি পিবিআইয়ের নজরে এলে পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদারের নির্দেশনায় পিবিআই ঢাকা মেট্রো দক্ষিণের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে একটি বিশেষ টিম কাজ শুরু করে। পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে আসামিদের প্রতারণার বিভিন্ন কৌশল।
নিখোঁজ তরুণীকে উদ্ধার করলো পিবিআই: ১১ বছর বয়সী ইমুনা ২০১৮ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি বনশ্রীর ২ নম্বর রোডের বাসা থেকে কাউকে কিছু না বলে বের হয়ে যায়। তাকে খুঁজে না পেয়ে তার বাবা বাদী হয়ে খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। পুলিশ প্রায় এক বছর তদন্ত শেষে ইমুনাকে উদ্ধার করতে পারেনি। পরে ২০২০ সালের ৩০শে জুলাই চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা। কিন্তু বাদীর নারাজির প্রেক্ষিতে আদালত বিগত ২৯শে নভেম্বর মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন।
পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (দক্ষিণ) পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পিবিআই’র একটি বিশেষ টিম মামলা নিয়ে কাজ শুরু করে। এরপর এলআইসির আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (দক্ষিণ) বিশেষ অভিযানে শেরপুর জেলা পুলিশের সহায়তায় ইমুনাকে গত ১৬ই আগস্ট উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আসামির কাছ থেকে টাকা আদায়ের জন্য ইমুনাকে তার আত্মীয়রা লুকিয়ে রেখেছিল।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (পরিদর্শক) হারুন বলেন, মামলাটি পিবিআই দায়িত্ব পাওয়ার পরে স্থানীয়ভাবে ইমুনার আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। বিভিন্নজনকে সোর্স হিসেবে নিয়োগ করি। গত দুইদিন আগে আমরা জানতে পারি, সে ঢাকার এক জায়গায় আছে। আমরা সেখানে নজরদারি রাখি। পরে সেখান থেকে সে পালিয়ে এক ছেলের সঙ্গে শেরপুর চলে যায়। আমাদের মুভমেন্ট দেখে মেয়েটিকে রেখে ছেলেটি পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় থানা পুলিশের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করি। মামলার আসামি এক দম্পতি ইমুনাকে উদ্ধারের জন্য মানব পাচারের মতো বিশাল অপরাধ থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status