মত-মতান্তর
এই পরী সেই পরী নয়
শামীমুল হক
১২ আগস্ট ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৯:৩৮ পূর্বাহ্ন
সবকিছুরই শুরু আছে, শেষও হয়ে যায়/শ্রাবণ এসে ঝরে ঝরে সেও ফিরে যায়/দুখের শেষে সুখ এসে দুয়ারে দাঁড়ায়/সবকিছুরই শুরু আছে, শেষও হয়ে যায়। আসলে পৃথিবীটাই এমন। জীবনের পরতে পরতে উত্থান-পতন। যেখানে শুরু সেখানে শেষ তো থাকবেই। ইতিহাসের দিকে তাকালে নির্মম সত্য চোখের সামনে চলে আসে। বেশি দূরে যেতে হবে না। দেশের আনাচে-কানাচে নীরব দাঁড়িয়ে থাকা রাজবাড়িগুলোই এর প্রমাণ। জমিদারবাড়িগুলোও সাক্ষ্য দেয় উত্থান-পতনের। রাজা, বাদশাহ্ আর জমিদারদের অত্যাচার, অনাচারের কাহিনী রূপকথায় ঠাঁই করে নিয়েছে। সিনেমায়ও এর ছিটেফুটো তুলে ধরা হয়েছে। তাদের আভিজাত্য, অহঙ্কার চেহারাতেই ফুটে উঠতো। নর্তকীর নাচের তালে তালে সুরা পান করতো। রক্ষিতা রেখে আমোদ-ফুর্তি ছিল নিত্যরাতের ঘটনা। এসব করতে করতে একসময় তারা ধুলোয় মিশে গেছে। ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছে। আর এখন রাজা, বাদশাহ্র আমল নেই। নেই জমিদারি প্রথাও। কিন্তু অন্যরূপে এরা দেশে দেশে ঘাঁটি পেতে বসেছে। ভিন্ন নামে তারা সমাজে চিহ্নিত হচ্ছে। রাজা, বাদশাহ কিংবা জমিদারদের মতোই তাদের চলাফেরা। মদ, সুরাও তাদের মজ্জায় বাসা বেঁধেছে। নর্তকীও আছে অন্য নামে। ফুর্তিও করে সবার সামনে। ইতিহাস বলে, অহঙ্কারের পতন অবশ্যম্ভাবী। প্রকৃতির ওপর অবিচার করলে প্রকৃতি প্রতিশোধ নেবেই। শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা। বর্তমান সময়ে আলোচিত নায়িকা পরীমনি। তাকে নিয়ে নানা আলোচনা দেশজুড়ে। আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করেছে। বাসা থেকে মদসহ আরও অনেক কিছু জব্দ করেছে। তাকে নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। এ সবই সবার জানা। প্রশ্ন হলো- পরীমনি কেন ঢাকা এসেছিলেন? কেন রুপালি পর্দায় নাম লিখিয়েছিলেন? যে উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি সিনেমা জগতে পা রেখেছিলেন সে লক্ষ্যে কি পৌঁছাতে পেরেছেন? নাকি চলতি পথে দিক হারা পথিকের মতো অন্য পথে চলে গেছেন? এর উত্তর শুধু তারই জানা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার যেসব কাহিনী ও ভিডিও প্রকাশ হচ্ছে তা দেখে যে কেউ লজ্জায় মুখ লুকাবে। কিন্তু পরীর তো কোনো লজ্জা সেই সব ভিডিওতে দেখা যায়নি। মনের আনন্দে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন। তিনি ভুলে গেছেন যে, সবকিছুর শুরু যেমন আছে, তার শেষও আছে। প্রকৃতির সাজা বড় নির্মম। এসব দেখে মনে হয় পিরোজপুরের সেই স্মৃতি ঢাকায় এসে পরী নাম ধারণ করার সঙ্গে সঙ্গে বদলেও গেছেন। তাই বলতে হয়- গ্রামের সেই পরী আর ঢাকার পরী এক নয়। যোজন যোজন ফারাক।