শরীর ও মন

কেমোথেরাপি ব্যর্থ, পেটের ক্যান্সার সারাবে ওষুধ!

মানবজমিন ডেস্ক

৮ আগস্ট ২০২১, রবিবার, ৩:৪৫ অপরাহ্ন

বাওয়েল ক্যান্সার বা পেটের ক্যান্সারে যেসব রোগী জীবনের আশা ছেড়ে দিয়েছেন তাদের জন্য আশার বাণী শুনিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি। তারা দু’টি ওষুধের সমন্বয়ে একটি চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে। কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপিতেও যেসব রোগী কোনো সাড়া দেননি, তাদের ওপর এই চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে পরীক্ষামূলকভাবে। তাতে দেখা গেছে অর্ধেকের বেশি রোগী ৫ বছর পরে এখনও বেঁচে আছেন। যেসব রোগীর পেটের টিউমার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে এবং কেমোথেরাপিতে কোনো উন্নতি হচ্ছে না তাদের জন্য এমন ওষুধ আবিষ্কার করা হয়েছে।

এ খবর দিয়ে অনলাইন ডেইলি মেইল বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি ব্রিস্টল মায়ের্স স্কুইব ওষুধটির বৈশ্বিক পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। এতে ব্যবহার করা হয়েছে নিভোলুমাব এবং ইপিলিমামাব নামের ওষুধ। তা ব্যবহারে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে। লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজ হাসপাতালের টিউমার বিষয়ক কনসালট্যান্ট প্রফেসর জন ব্রিজওয়াটার বলেছেন, এখন অনেক মানুষ ক্যান্সারমুক্ত। প্রথমবারের মতো এই গ্রুপের অর্থাৎ ক্যান্সারের খারাপ পর্যায়ের অনেক মানুষ এখন রোগ থেকে সুস্থ হওয়ার আশা করেন।

এই ওষুধের কম্বিনেশন বা সমন্বয় অনুমোদন করা হয়েছে পেটের ক্যান্সারের রোগীদের জন্য, যাদের পেটের টিউমার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতি বছর এমন রোগী পাওয়া যায় প্রায় ৮০০। এর আগে এইসব রোগীর জন্য কোনো বিকল্প চিকিৎসা ছিল না। এসব রোগীর টিউমারে একটি বিরল জেনেটিক পরিবর্তন ঘটে, যার নাম মাইক্রোস্যাটেলাইট ইনস্ট্যাবিলিটি হাই বা এমএসআই-এইচ। এর ফলে এই টিউমার ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। ফলে কেমোথেরাপি দিয়ে এই সংক্রমণ বা বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব।

প্রফেসর ব্রিজওয়াটার বলেন, এই ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়া বন্ধের জন্য যথেষ্ট নয় কেমোথেরাপি। এমএসআই-এইচ রোগীদের বেশির ভাগের জন্য এটা হলো মৃত্যুদ-ের মতো।

কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশেষজ্ঞরা ক্রমশ আশান্বিত হয়েছেন যে, ওষুধের সন্নিবেশের মাধ্যমে ভয়াবহ এসব রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করা যেতে পারে। ফলে ওই দুটি ওষুধ নিয়ে বৈশ্বিক পর্যায়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। তাতে উচ্চ মাত্রায় ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে। ওই দুটি ওষুধই রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ক্যান্সার কোষ খুঁজে পেতে এবং তা ধ্বংসে সহায়তা করে।

প্রফেসর ব্রিজওয়াটার বলেন, এই টিউমারের কোষগুলোতে রূপান্তর ঘটে চরম মাত্রায়। ফলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সহজে কাজ করতে পারে না। এই পরীক্ষায় যেসব রোগী হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন, তারা ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে দুটি ওষুধই গ্রহণ করেছেন। তাদেরকে প্রতি তিন সপ্তাহ পর পর একটি করে চারটি ইপিলিমামাব ডোজ দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে মাসিক ভিত্তিতে দেয়া হয়েছে নিভোলামাব। দু’বছর অব্যাহতভাবে এই চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এতে দেখা গেছে চিকিৎসা কার্যকর।

ব্রিস্টল মায়ার্স স্কুইবের পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে গত বছর। তাতে দেখা গেছে, আড়াই মাসের মধ্যে শতকরা ৬৫ ভাগ রোগীর টিউমার সঙ্কুচিত হয়েছে। কিছু রোগীর মধ্যে দেখা গেছে, এই ক্যান্সার সৃষ্টিকারী টিউমার বা কোষ আর স্ক্যানে দৃশ্যমান নয়। এ অবস্থায় চিকিৎসকরা বলেন, রোগী ক্যান্সারমুক্ত। প্রফেসর ব্রিজওয়াটার বলেন, কিছু রোগীকে বলে দেয়া হয় যে, তারা আর মাত্র কয়েকটি মাস বাঁচার সম্ভাবনা শতকরা ৫০ ভাগ। কিন্তু তাদের ওপর এই চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করে বাঁচিয়ে রাখা গেছে।

এমন একজন রোগী হলেন ৩৯ বছর বয়সী অক্সফোর্ডশায়ারের টম বার্টলেট। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে চতুর্থ মাত্রার বাওয়েল ক্যান্সার ধরা পড়ে তার। তিনি কাজ করেন খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ বিষয়ক একটি কারখানায়। ওই সময়ে তিনি পেটের ব্যথার পর মলের সঙ্গে রক্ত দেখতে পেয়ে চিকিৎসকদের কাছে যান। সেখান থেকে তাকে জরুরি পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। তাতে ক্লোনোস্কপি পরীক্ষার সময় পেটের এক প্রান্তে থামে ক্যামেরা।

টম বলেন, জীবনে দেখিনি এমন এক ভয়াল দৃশ্য সেখানে দেখতে পাই আমি। পুরো অন্ত্রের গহ্বর ভরে আছে টিউমার। আমি শুধু সেদিকে তাকিয়ে রইলাম। ভয়ে শুকিয়ে গেলাম। এটা পেটের দেয়ালে গলে গিয়েছে এবং চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।

টম’কে প্রাথমিকভাবে কেমোথেরাপি দেয়া হয়। এতে তার টিউমারের আকার সামান্য ছোট হয়ে আসে। নয় মাস পরে আবার স্ক্যান করে দেখা যায়, তা আগের চেয়ে বড় হয়ে গেছে। পেটের ভিতরে অন্ত্রের বাইরে ছড়িয়ে পড়েছে। তার ওপর উপরে উল্লেখিত পরীক্ষা চালানো হয়। দেয়া হয় নিভোলামাব এবং ইপিলিমামাব। পরে স্ক্যান করে দেখা যায়, তার টিউমার একেবারে অদৃশ্য হয়ে গেছে। টম বলেন, এতে আমার কার্যত কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি। বিশেষ করে কেমোথেরাপি আমার কাছে এক অত্যন্ত কষ্টের বিষয়। আমি এখন অবিশ্বাস্য সৌভাগ্যবান মনে করছি নিজেকে। এখন আমি অনেকটাই স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারি। ক্রিকেট, গলফ খেলি। নিয়মিত হাসপাতালে যাই চেকআপ করাতে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status