প্রথম পাতা

স্বামী-স্ত্রীর ডেঙ্গু-করোনা গর্ভে সন্তানের মৃত্যু

মর্মান্তিক

ফাহিমা আক্তার সুমি

৪ আগস্ট ২০২১, বুধবার, ৮:৩৯ অপরাহ্ন

প্রতীকী ছবি

করোনা ও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত নিগার সুলতানা (৩৬)। এ অবস্থায় গর্ভেই মারা গেছে তার পাঁচ মাসের অনাগত সন্তান। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তার দ্বিতীয় সন্তানটি ডিসেম্বরে ভূমিষ্ঠ হওয়ার কথা ছিল। গর্ভের সন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় তিনি। একইসঙ্গে বড্ড একা তিনি। করোনার ভয়ে তার পাশে নেই আত্মীয়-স্বজন। মানসিক ও শারীরিকভাবে তিনি অনেকটা ভেঙে পড়েছেন। করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তার স্বামী আজাদুল আজাদ আরেকটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনের বার্ন ইউনিটের ভবনটিতে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হয়। সেখানে পাঁচতলার ৬০২ নম্বর শয্যায় পাঁচদিন ধরে চিকিৎসারত রয়েছেন সুলতানা। করোনার ভয়ে স্বজনরা আসছেন না তার কাছে। স্বামীর পাশাপাশি তার দুই ভাইও করোনায় আক্রান্ত। ব্যক্তিগত গাড়িচালক ও গৃহকর্মী তাদের দেখাশোনা করছেন। বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ায় দেখাশোনার জন্য অপর একজন নারীকেও রেখেছেন তার পাশে। এদিকে সুলতানা হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ঠিকমতো কথা বলতেও পারছেন না। গর্ভের সন্তান হারানোর কষ্ট তাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। বিছানা ছেড়ে ওঠে বসতেও তার কষ্ট হয়। শোক আর অসুস্থতায় যেন তিনি নিজেকে সামলাতে পারছেন না। বার বার তার বড় সন্তানের কথা মনে পড়ছে।
গাড়িচালক আহাদ হাসান বলেন, ঈদের পর হঠাৎ তাদের দু’জনার কাশি, জ্বর ও সর্দি হয়। এরপর তৃতীয় দিনে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেয়া হয়। তারা স্বামী-স্ত্রী দু’জনেরই পজেটিভ আসে। বাসায় তাদের প্যারাসিটামল খাওয়ানো হয়। অবস্থা ভালো বোঝা না গেলে তাদের দুজনকে পান্থপথ পদ্মা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ২৯শে জুলাই। ৩০ তারিখ সকাল থেকে ব্লিডিং হতে থাকে। এই হাসপাতালে তার অবস্থা খারাপ দেখে ঢাকা মেডিকেলে পাঠিয়ে দেন চিকিৎসকরা। তিনি পাঁচ মাসের গর্ভবতী ছিলেন। এরপর তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসি। সেখানে তিন ঘণ্টা বাইরে অবস্থান করি। ডাক্তার এই রোগীকে প্রথমে ভর্তি করতে চায়নি। পরে অনেক জায়গায় যোগাযোগ করে তাকে ভর্তি করানো হয়। তারপর অপারেশন করে মৃত বাচ্চা প্রসব করানো হয়।  
তিনি আরও বলেন, কখনো বুঝতে পারিনি এমন হবে। এখন মোটামুটি সুস্থ আছেন। নিজ হাতে মৃত বাচ্চাটাকে দাফন করে আসছি। একা আর কতো, দৌড়াতে পারছি না। দুই হাসপাতালে দুইজন ভর্তি। অনেক বিপদের মধ্যে আছি। তাদের গৃহকর্মী ও আমি দুইজনকে দেখাশোনা করছি। তাদের অনেক আত্মীয়-স্বজন আছে কিন্তু তারা কেউ ভয়ে আসেনি। ম্যাডামের দুই ভাইও করোনায় আক্রান্ত। তাদের প্রথম সন্তান সাফওয়ান। এটা ছিল দ্বিতীয় বাচ্চা। ঝিনাইদহে তাদের গ্রামের বাড়ি। বারো বছর ধরে ঢাকার বনশ্রীতে থাকেন তারা। স্যারের অবস্থা এখন মোটামুটি ভালো। পদ্মা জেনারেল হাসপাতালে প্রায় ৬০ হাজার টাকা চিকিৎসার জন্য ব্যয় হয়েছে। পাঁচ দিনে পঁচিশ হাজার টাকা খরচ হয়েছে শুধু ম্যাডামের বিভিন্ন পরীক্ষা ও ইনজেকশনের জন্য। যখন ডেঙ্গু চিকিৎসা করেছে তখন করোনা চিকিৎসা বন্ধ রেখেছিলেন চিকিৎসকরা। ম্যাডামকে আট ব্যাগ শুধু ব্লাড দেয়া হয়েছে। একদিকে করোনা ও ডেঙ্গু এরমধ্যে অতিরিক্ত ব্লাড যাওয়ায় ম্যাডামের শরীর অনেক দুর্বল।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status