অনলাইন

মুদ্রানীতি জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক হবে না: সিপিডি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

৩ আগস্ট ২০২১, মঙ্গলবার, ৯:৫১ অপরাহ্ন

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) মনে করে, করোনাকালে বিপর্যস্ত অর্থনীতির চাকা সচল করতে এবং জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রস্তাবিত মুদ্রানীতি খুব বেশি সহায়ক হবে না। কারণ মহামারির সময় চলতি অর্থবছরে কি এমন চাহিদার সৃষ্টি হবে, যাতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ বাড়তে পারে?

মঙ্গলবার ‘সাম্প্রতিক মুদ্রানীতি কি অর্থনীতির বর্তমান চাহিদা মেটাতে পারবে? সিপিডির তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় সিপিডি।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। এ সময়ে সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষক তৌফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

সংস্থাটি জানায়, করোনার কারণে প্রায় দেড় বছর বিপর্যস্ত দেশের মানুষের জীবন-জীবিকা। যার প্রভাব পড়েছে পুরো অর্থনীতির খাত-উপখাতে। আর এ অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সম্প্রতি আগামী অর্থবছরের জন্য বাজারে মুদ্রা সরবরাহ নীতি অব্যাহত রেখেই সম্প্রসারণশীল মুদ্রানীতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সিপিডি বলছে, জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়লেও বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ পর্যাপ্ত নয়। করোনার আগে একাধিক বছরে এ অর্থায়ন নিম্নমুখী ছিল। যার প্রভাব পড়েছে সার্বিক বিনিয়োগে। লাগামহীন খেলাপি ঋণ, ব্যাংক খাতে সুশাসনের অভাবের পাশাপাশি বিনিয়োগে স্থবিরতা, উদ্বৃত্ত তারল্য বাড়ছে ব্যাংকগুলোতে, যা জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়িয়ে দেয়ার শংকার পাশাপাশি পুঁজিবাজারসহ অন্য ঝুঁকিপূর্ণ খাতে বিনিয়োগেরও শংকা বাড়াচ্ছে।

তারা বলছে, বেসরকারি বিনিয়োগ, ব্যাপক মুদ্রার যোগান কিংবা মূল্যস্ফীতি, চলতি অর্থবছরের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেয়া মুদ্রানীতিতে বেঁধে দেয়া লক্ষ্যমাত্রা অপূর্ণই থেকে যাবে। মুদ্রানীতির আলোচনায় ব্যাংক খাতে অধিক তারল্য, প্রবাসী আয় বাড়াতে সরকারের দেয়া ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনার অপব্যবহার আর নগদ প্রণোদনা প্যাকেজের সঠিক বণ্টন না হবার মতো বিষয়গুলোও আলোচনায় উঠে আসে। এ অবস্থায় করোনার এই সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে মুদ্রানীতির গুণগত বাস্তবায়ন নিশ্চিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নতুন পথ খোঁজার পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি।

সংস্থাটি বলছে, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে জীবন ও জীবিকার মেলবন্ধনের জন্য অন্তত ৭০ ভাগ মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে হবে। আর এ জন্য সরকারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক।

মূল প্রবন্ধে ফাহমিদা খাতুন বলেন, ২০১৪ এর পরবর্তী তিন বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির তুলনায় বেসরকারি ঋণ প্রবাহ বেশ কম ছিল। ২০১৯ সালের পর থেকে সেই গতি ১০ শতাংশের নিচে নেমে গেছে। ফলে সম্প্রতি ঘোষণা করা মুদ্রানীতিতে প্রায় ১৫ শতাংশ ঋণ প্রদানের লক্ষ্য বাস্তবসম্মত নয়। ঋণের বাজারে চাহিদাও কমেছে। করোনামুক্ত বা কমে যাওয়ার অপেক্ষায় আছেন বেশিরভাগ উদ্যোক্তা। এর ফলে গত কয়েক বছরে ব্যাংকের তারল্য অনেক বেড়েছে।

মহামারিতে ৫.৩ শতাংশ মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সিপিডি। তারা দাবি করেন, করোনায় নিম্নবিত্তের আয় আরও কমেছে। বেড়েছে অনেক পণ্যের দাম। তাই এ লক্ষ্য বাস্তবতা বিবর্জিত।

সিপিডির গবেষক তৌফিকুল ইসলাম বলেন, আগামী কয়েক মাস অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের মধ্যে বিশাল জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনতে পারলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করবে। অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জোর দিতে হবে।

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত নতুন মুদ্রানীতিতে তাদের সম্প্রসারণমূলক অবস্থান পুনর্বিবেচনা করা। বেসরকারিখাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৪.৮ শতাংশ অর্জন কঠিন হবে। এ পরিস্থিতিতে, ঋণ প্রবাহ ১২ শতাংশ পর্যন্ত সংশোধন করা যেতে পার।

সিপিডি বলছে, প্রণোদনার ঋণের টাকা ফেরত আসবে কি না, তা নিয়ে চিন্তিত ব্যাংকগুলো। কারণ, ইচ্ছা করে ঋণখেলাপি হওয়ার প্রবণতা এ দেশে আছে। করোনার মতো সংকটের সুযোগে অনেকে ইচ্ছা করে ঋণখেলাপি হয়ে যেতে পারেন। বিষয়টি কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, তা নিয়ে সম্প্রতি ঘোষিত মুদ্রানীতিতে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, প্রণোদনার টাকা বড় উদ্যোক্তারা ব্যবহার করতে পারছেন। কিন্তু ছোট উদ্যোক্তারা প্রণোদনার অর্থ তেমন পাচ্ছেন না। ফলে ছোটরা ঘুরে দাঁড়াতে পারছেন না, তারা পেছনে পড়ে যাচ্ছেন। মহামারির সময় এতে বৈষম্য বেড়ে যাবে এমন আশঙ্কা আছে।

সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, করোনার সময়ে বিভিন্ন পরিবারের আয় কমেছে, তাদের সহায়তায় বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় আসছে। ২ শতাংশ প্রণোদনাও এতে কাজ করছে। রেমিট্যান্সের টাকা বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা উচিত।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status