শেষের পাতা
‘আমরা চার কোটি টাকার জন্য আর বসে থাকবো না’
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
৪ আগস্ট ২০২১, বুধবার, ৮:৪০ অপরাহ্ন
‘আমরা চার কোটি টাকার জন্য আর বসে থাকবো না। আমাদের পারমিশন দেন। আমরা জনগণের সহযোগিতা নিয়ে এটা করে দিবো। ওসমানীতে এখন আর সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন হলেও হবে না। অক্সিজেন প্ল্যান্টও বসাতে হবে।’ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশ্যে সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী মন্তব্য করেন। সিলেটের করোনা পরিস্থিতি খুবই নাজুক। চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাচ্ছে মানুষ। অক্সিজেনের সংকট তীব্র। এই অবস্থায় সিলেটের নগর ভবনে গতকাল দুপুরে জরুরি সভার আহ্বান করেন মেয়র। আর এতে ঢাকা থেকে ভার্চ্যুয়ালি সংযুক্ত হয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। সভায় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানান, ‘সিলেটের করোনার চিকিৎসার পরিধি বাড়াতে কয়েক মাস আগে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে নতুন করে সাড়ে ৪শ’ বেডের আইসোলেশন সেন্টার স্থাপনের প্রস্তাবনা পাঠিয়েছিলো। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবনের ৪ ও ৫ তলায় এই আইসোলেশন সেন্টার স্থাপন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সবকিছু করা হয়েছে। কিন্তু সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা চালু করার জন্য ৪ কোটি টাকার প্রয়োজন। আমার তরফ থেকে গত ১৮ই জুলাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সিলেটের করোনা পরিস্থিতি আইসোলেশন সেন্টার স্থাপনের সহযোগিতা চেয়ে পত্র দেয়া হয়েছে।’ মেয়র জানান, ‘আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও সিদ্ধান্তহীনতার কারণে আইসোলেশন সেন্টারের টাকা মিলছে না। এসব বিষয় আমাদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হবে। পাশাপাশি সিলেটের সকল মন্ত্রী ও এমপিদের এ ব্যাপারে অবগত করা হবে বলে জানান মেয়র।’ এদিকে সিলেটের পরিস্থিতি অবগত হয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, ‘সিলেটে যাতে অক্সিজেনের সরবরাহ থাকে সেটি নিয়ে তিনি ঢাকায় কথা বলবেন। একই সঙ্গে টিকার যাতে সংকট না হয় সেদিকেও নজর রাখা হবে।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিলেটের চাহিদার কথা লিখিত আকারে অবগত করার কথা বলেন। এদিকে বৈঠকে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বিশদ পর্যালোচনা করা হয়। এই আলোচনায় উঠে আসে নানা সংকট ও সীমাবদ্ধতার কথা। বৈঠকে মেয়র সহ সুধীজনেরা জানান- সিলেটের করোনা পরিস্থিতি কোনো ভাবে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে না। সংক্রমণের হারের গড় শতাংশ হচ্ছে ৫০। অর্থাৎ অর্ধেক মানুষ করোনায় আক্রান্ত। লকডাউন দেয়া হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এটা খুবই দুশ্চিন্তার বিষয়। একই সঙ্গে হাসপাতালে বেড সংকট। হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরলেও বেড মিলছে না। চিকিৎসা সংকটের কারণে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালে নতুন করে আইসোলেশন ওয়ার্ড বাড়িয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসার পরিধি বাড়ানো হয়েছে। দেখা দিয়েছে অক্সিজেন সংকট। বৈঠকে পর্যালোচনা করা হয়; সিলেটে অক্সিজেনের চাহিদা প্রায় ৩০ হাজার কিউবিট মিটার। সেখানে অর্ধেক অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে। অক্সিজেনের অভাবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা বাড়ানো গেলে বেসরকারি মেডিকেলে আরও বেশি রোগী ভর্তি করা সম্ভব হতো। উপজেলাগুলোতেও সরকারি ভাবে চিকিৎসার পরিধি বাড়ানো হচ্ছে না। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানান, ‘গোটা বিভাগের করোনা রোগীদের স্রোত এখন সিলেটমুখী। সবাই সিলেটে আসছেন। জেলা কিংবা উপজেলায় সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হলে হয়তো সিলেটে সামাল দেয়া যেতো। কিন্তু জেলা কিংবা উপজেলায় করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে জেলা ও উপজেলায় চিকিৎসা পরিধি বাড়াতে বৈঠক থেকে অনুরোধ জানানো হয়।’ বৈঠকে বিএমএম মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন, করোনা চিকিৎসা পরিধি বাড়াতে হলে সমস্যাগুলো দূর করতে হবে। যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলো লিখিত আকারে বিভিন্ন দপ্তরে পাঠিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখার কথা বলেন তিনি। এদিকে বৈঠকে সিলেটে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৫টি বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এগুলো হচ্ছে; ১. উৎসমুখে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বন্ধে সিলেট সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মাস্ক ও টিকাদানে উদ্বুদ্ধকরণের জন্য প্রচার প্রচারণা অব্যাহত রাখা, ২. সিলেট বিভাগের উপজেলাসমূহের স্বাস্থ্যসেবার মান আরও উন্নীত করা যাতে উপজেলা পর্যায়ে রোগীরা সর্বোচ্চ পর্যায়ে চিকিৎসাসেবা পেতে পারেন, ৩. সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অক্সিজেন সঞ্চালন ও প্ল্যান্ট স্থাপন করা, ৪. অক্সিজেন কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সিলেট অঞ্চলে অক্সিজেন সাপ্লাই আরও বাড়ানোর ব্যবস্থা করা, ৫. গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ প্রতিবেদন আকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, পরিকল্পনা মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর প্রেরণ করা হবে।