এক্সক্লুসিভ

কলাতিয়ার ক্যাকটাস ভুবনের অন্যরকম গল্প

স্টাফ রিপোর্টার

৪ আগস্ট ২০২১, বুধবার, ৬:৫৮ অপরাহ্ন

মানুষ মাত্রই সৌন্দর্যপ্রেমী। নিজের ঘর ও আশপাশ সাজাতে বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। ঘর সাজাতে নান্দনিকতার নতুন মাত্রা যোগ করে ক্যাকটাস। এই ক্যাকটাসের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কিন্তু শখের ক্যাকটাস নিয়ে তৈরি বাগানের অন্যরকম গল্প মুগ্ধতা ছড়িয়েছে কলাতিয়ার ‘ক্যাকটাস ভুবন’। কলাতিয়ার ফতেহনগর গ্রামে গড়ে উঠেছে নান্দনিক এই ক্যাকটাস গার্ডেন। সেখানে একটি পরিবারের চার সদস্য গড়ে তুলেছেন প্রায় ছয়শ’ প্রজাতির ক্যাকটাসের ভুবন। এর কারিগর আমিনুল ইসলাম দিপু, স্ত্রী ফরিদা পারভীন চৈতি, ছেলে নাতিক আল সাহিব দীপ্ত ও মেয়ে অতসি ইসলাম।

এই পরিবারের গড়া আট বিঘার জমির বাগানে প্রায় ছয় শতাধিক ধরনের ক্যাকটাস ছাড়াও জবা ফুল রয়েছে ৩৬ প্রজাতির। দেশি-বিদেশি অর্কিড রয়েছে ১২০ প্রজাতির। শাপলা ও পদ্ম গাছ ২৭ প্রজাতির। চেইন অফ গ্লোরি গাছ রয়েছে ২ প্রজাতির। বট, হিজল, তমাল, পাকুড় এবং তেঁতুলের বনসাই রয়েছে।

মূলত স্মৃতি ফরিদা পারভীনের সখেই এই বাগান গড়া শুরু করেন তিনি। ধীরে ধীরে একটি বৃহৎ পরিসরে এই স্বপ্নকে নিয়ে যেতে চান আগামীতে। সখ থেকে বর্তমানে আয়ের উৎস হিসাবেও কাজ করছে এই ক্যাকটাস গার্ডেন।
আমিনুল ইসলাম বলেন, কেরানীগঞ্জের কলাতিয়ার ক্যাকটাস ভুবন গড়ে তুলেছি। এটি আমার শখের বশে গড়ে তোলা বাগান। আমার বাবা আমাকে গাছ ও বীজ এনে দিতেন সেসব থেকে গাছ ও ফুলের প্রতি আগ্রহ জন্মেছে। আমি ৩৫ বছর এ সবের সঙ্গে যুক্ত। তবে ক্যাকটাসের আগ্রহ আমার স্ত্রীর। আমার বাগানে ৫৮০ প্রজাতির ক্যাকটাস রয়েছে।

তিনি বলেন, আমার ইচ্ছা আছে আরও ৫০০ প্রজাতির ক্যাকটাস সংগ্রহ করার। বিশ্বে ক্যাকটাস ও স্যাকুলেন্ট আছে মোট ২০০০ প্রজাতির। দেশের বাইরে থেকে যে চারাগুলো আনা হয় সেসব চারা বেশিদিন বাঁচে না তাই আমি চেষ্টা করছি যদি দেশেই মাতৃগাছ থেকে চারা উৎপাদন করতে। ক্যাকটাসগুলো দেখেছি ৯০-৯৫ ভাগ চারা বাঁচানো সম্ভব। কারণ এসব আমাদের দেশের আবহাওয়ার সঙ্গে মানানসই।

দিপু সিমেন্স বাংলাদেশ লিমিটেডের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ছিলেন। দু’ বছর বিএডিসিতে ক্যাকটাস বিষয়ে উপদেষ্টা হিসাবে কর্মরত আছেন। দিপুর ক্যাকটাসের মাটি তৈরি সহ সকল কাজ নিজেই করেন। তার আমার একটি গ্রিন হাউজ রয়েছে। যেখানে এসব মাতৃগাছ থেকে চারাগাছ তৈরি করে থাকেন। দেশ বিদেশ থেকে সংগ্রহের পাশাপাশি অনেক বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষীরাও ক্যাকটাস উপহার দিয়ে থাকেন বলে জানিয়েছেন আমিনুল ইসলাম।

তিনি বলেন, প্রসেস জানলে সব ধরনের চারাই ভালো হয়। কিছু গাছ থেকে বীজ হয়, কিছু গাছ থেকে বাড হয়। তবে এসব ক্ষেত্রে সময় লাগে অনেক। চারার সাইজ বড় হলে পটিং করতে হয়। আপাতত তিন হাজার চারা তৈরি করছি। আগের করা চারার বেশির ভাগই বিক্রি হয়ে গেছে। প্রতিমাসে প্রায় ৩০/৩৫ হাজার টাকা আয় হয় এসব উৎপাদিত চারা থেকে। এসবের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।

কিছু ক্যাকটাস ঘরে রাখা যায়। আবার কিছুর সূর্যের আলো প্রয়োজন হয়। কিছু ক্যাকটাসের ফুল খুব সুন্দর। বাসায় রাখার ক্ষেত্রে বৃষ্টির পানির হাত থেকে এদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে, পলিথিনের শেড দিয়ে। আবার যারা বাণিজ্যিকভাবে ক্যাকটাসের চাষ করবেন তাদেরকেও তিনি মাটি তৈরির পদ্ধতি থেকে শুরু পরিচর্যার খুঁটিনাটি পরামর্শ দেন বলে জানান ক্যাকটাসপ্রেমী দিপু।

বর্তমানে ৮ বিঘা জায়গার উপর গড়ে উঠেছে এই ক্যাকটাস বাগান। শুধু তাই নয়, তার ছোট বোন রুমানা আক্তার ও ঊর্মি আজাদও বাণিজ্যিকভাবে ক্যাকটাস নিয়ে কাজ করছেন। ‘ক্যাকটাস ভুবন’ পেজের মতো তাদের নিজস্ব পেজও আছে। রুমানা আক্তার ‘Cactus Bhubon’ পেজের দায়িত্বে আছেন।

নানান জাতের ক্যাকটাস
ফিশ হুক ক্যাকটাস, ওল্ড মেন ক্যাকটাস, ওল্ড লেডি ক্যাকটাস, গোল্ডেন ব্যারেল, এস্ট্রোফাইটাম ক্যাকটাস, কটন কোরাল ক্যাকটাস, ব্রেইন ক্যাকটাস, ক্লাইম্বিং অনিয়ন, ব্লোসফেলডিয়া লিলিপুটানা, লিথোপ ক্যাকটাস, ডিস্কো ক্যাকটাস, ইচিনো ক্যাকটাস, ইচিনোপসিস ক্যাকটাস, নোটো ক্যাকটাস, হেমাটো ক্যাকটাস, লবিভিয়া ক্যাকটাস, লোফোফোরা ক্যাকটাস, টার্স ক্যাপ ইত্যাদি। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন ধরনের স্টেপলিয়া, সাকুলেন্ট, অষড়ব (এলোই)।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status