প্রথম পাতা

মৃত্যু ছাড়িয়েছে ২১,০০০

ক্যাম্পেইনে কারা টিকা পাচ্ছেন

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ

৩ আগস্ট ২০২১, মঙ্গলবার, ৮:১৯ অপরাহ্ন

করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমণ ও মৃত্যুতে দেশে প্রায় প্রতিদিনই রেকর্ড হচ্ছে। অদৃশ্য এই শত্রুকে প্রতিরোধে দুনিয়াব্যাপী চলছে ভ্যাকসিন কার্যক্রম। বাংলাদেশেও টিকাদান কর্মসূচি চলছে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন মাসে অন্তত প্রায় ২ কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার। তাহলে করোনার ভয়াবহ থাবা থেকে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব। পাশাপাশি মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে হবে। অন্যদিকে সরকারও টিকাদানে গতি বাড়াতে চায়। দ্রুত বেশি মানুষকে টিকা দিতে স্বাস্থ্য বিভাগ প্রতি মাসে ১ কোটি ডোজ টিকা দেয়ার পরিকল্পনা করছে। আর দ্রুত টিকার আওতায় আনতে ৭ই আগস্ট থেকে ১৪ই আগস্ট পর্যন্ত ১ কোটি মানুষকে গণটিকা দেয়ার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। এই লক্ষ্যে ২৫ বছর পূর্ণ হওয়া দেশের যেকোনো নাগরিককে নিবন্ধনের সুযোগ দেয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে ১৮ ঊর্ধ্বদের টিকা দেয়ার কার্যক্রম শুরু হবে ক্যাম্পেইনে। ইউনিয়ন পর্যায়ে হবে টিকাদান ক্যাম্পেইন। বয়স্ক ও অসুস্থদের অগ্রাধিকার থাকবে টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে। ১৮ বছরের নাগরিকরাও ৮ই আগস্ট থেকে টিকা পাওয়ার লাইনে দাঁড়াতে পারবেন। কিন্তু এই বয়সের নাগরিকরা কি শুরুতে টিকা পাবেন? এই প্রশ্নটি সামনে এসেছে। কারণ স্থানীয় পর্যায়ে ১৮ বছরের বেশি বয়সী সবাইকে টিকা নিতে কেন্দ্রে আসার জন্য প্রচারণা চালানো হচ্ছে। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, ক্যাম্পেইনে বয়স্ক ও অসুস্থদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। সম্মুখসারির যোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের যারা আটারো ঊর্ধ্ব তাদেরও টিকা গ্রহণের সুযোগ দেয়া হবে। যেভাবে স্থানীয় পর্যায়ে প্রচারণা চলছে তাতে আঠারো  ঊর্ধ্ব সবাই টিকার জন্য ভিড় করলে হ-য-ব-র-ল অবস্থা তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। কারণ কেন্দ্রে অনেক মানুষের সমাগম হলে সবাইকে টিকা দেয়া নিয়ে জটিলতা তৈরি হতে পারে। কারণ সরকার এক কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে এক সপ্তাহে। তবে কতো মানুষ টিকা নিতে চায় বা নেবে এর কোনো সম্ভাব্য পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া কোনো কেন্দ্রে কতো টিকা দেয়া হবে এ তথ্য এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

দেশে প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন মোট জনসংখ্যার ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং পূর্ণ ডোজ সম্পন্ন করেছেন ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ (বিবিএস-এর তথ্য অনুযায়ী জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯১ লাখ ১০ হাজার)। এখন হাতে টিকা আছে মাত্র ১ কোটি ১৫ লাখের কিছু বেশি। দেশে চলতি ১লা আগস্ট পর্যন্ত  বিভিন্ন ভ্যাকসিন মিলে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন মোট ১ কোটি ৩৪ লাখ ৫৯ হাজার ৮১১ জন। এর মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৯১ লাখ ৮ হাজার ১৪৪ জন। অন্যদিকে  দ্বিতীয় ডোজ (পূর্ণ ডোজ) সম্পন্ন করেছেন তাদের সংখ্যা ৪৩ লাখ ৫১ হাজার ৬৬৭ জন। ১লা আগস্ট বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত নিবন্ধনকারীর সংখ্যা ১ কোটি ৫৫ লাখ ৪ হাজার ১৫ জন।

কতো মানুষকে প্রতিদিন ভ্যাকসিন দিলে দেশ করোনা থেকে সুরক্ষা পাবো জানতে চাইলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া) সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক মানবজমিনকে বলেন, জনগণকে সম্পৃক্ত করে ওয়ার্ডে ও ইউনিয়নে সবাইকে টিকা দিতে হবে। এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে। বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষকে আগে টিকার আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি চিকিৎসার সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরও অগ্রাধিকার দিতে হবে টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে। এই জনস্বাস্থ্যবিদ আরও বলেন, সারা দেশে টিকাদান কেন্দ্রে প্রতিটি ইউনিয়নের মেম্বারদের দায়িত্ব হবে সবাই টিকা পেলো কিনা তা নিশ্চিত করা। অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, সরকারের লক্ষ্য রাখতে হবে যে সবাইকে ১৩ মাসের মধ্যে টিকাদান সম্পন্ন করা। এটা শুরু হবে সরকার যে ৭ই আগস্ট থেকে গণটিকাদানের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সেই সময় থেকে। তাহলে ১৪তম মাসে হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করা সম্ভব হতে পারে। তিনি বলেন, এই ১৩ মাসে সরকারকে টিকা সংগ্রহে নিশ্চয়তা করতে হবে। যাতে এই সময়ে দেশে ২৫ কোটি টিকা আসে। তখন ১৪তম মাসে হার্ড ইমিউনিটি হবে। তিনি আরও জানান, মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে হবে। জনগণকে এই ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

অন্যদিকে সরকার টিকাদানে গতি বাড়াতে চায়। দ্রুত বেশি মানুষকে টিকা দিতে স্বাস্থ্য বিভাগ প্রতি মাসে ১ কোটি ডোজ দেয়ার পরিকল্পনা করছে। এই লক্ষ্যে ২৫ বছর পূর্ণ হওয়া দেশের যেকোনো নাগরিককে নিবন্ধনের সুযোগ দেয়া হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়েও চলবে টিকাদান। করোনার সম্মুখসারির যোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যরা বয়স ১৮ বছর হলেই নিবন্ধন করতে পারবেন বলে গত সপ্তাহে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন। পর্যায়ক্রমে সব নাগরিকের জন্য বয়সসীমা কমিয়ে ১৮ বছর করার কথা জাতীয় করোনা টিকা প্রয়োগ পরিকল্পনায় আছে। এভাবে সরকার জনসংখ্যার ৮০ শতাংশকে টিকার আওতায় আনতে চায়।  ৭ই আগস্ট থেকে সরকার ইউনিয়ন পর্যায়ে করোনার টিকা দেয়া শুরু করবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা,  স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে টিকাকেন্দ্রের স্থান ঠিক করবেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের মতো স্থানে টিকাকেন্দ্র হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিকাদান কর্মসূচির পরিচালক ডা. শামছুল হক বলেন, প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে মোট সাড়ে ৪ হাজারের বেশি কেন্দ্র হবে। এ ছাড়া প্রতিটি পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে এবং সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে তিনটি করে টিকাকেন্দ্র করার পরিকল্পনা আছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত টিকা দেয়া চলবে। অগ্রাধিকারভিত্তিতে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বয়োজ্যেষ্ঠ ও নারীরা টিকা পাবেন। টিকাদানের আগে টিকা গ্রহণে আগ্রহী সবার তথ্য লিখে রাখবেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। টিকাকেন্দ্রে নিবন্ধনের পর টিকা কার্ড দেয়া হবে। এই কার্ড দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার সময় সঙ্গে আনতে হবে। নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, প্রতিটি ইউনিয়নে সপ্তাহে তিন দিন টিকা দেয়া হবে। একটি কেন্দ্রে দুজন টিকাদানকারী ও তিনজন স্বেচ্ছাসেবী কাজ করবেন। শেষ টিকা দেয়ার পর এই দলটি কেন্দ্রে এক ঘণ্টা অবস্থান করবে। এই সময়ে তারা নিবন্ধন-সম্পর্কিত তথ্য অনলাইনে তুলে রাখবেন। প্রতিদিনের প্রতিবেদন তৈরি করে নিজ নিজ উপজেলা বা পৌরসভায় পাঠাবেন।

সূত্র মতে, নিবন্ধন করেননি বা করতে পারেননি এমন ব্যক্তিরা জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে টিকা নিতে পারবেন। অন্যদিকে জনপ্রতিনিধিদের টিকা কার্যক্রমে যুক্ত করার কথাও ভাবা হচ্ছে। তাদের মূলত দুটি কাজে লাগানো হবে। প্রথমত তারা টিকা নেয়ার ব্যাপারে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করবেন। দ্বিতীয়ত টিকাকেন্দ্রে শৃঙ্খলা বজায় রাখার ব্যাপারেও তাদের সহায়তা নেয়া হবে। টিকা দেয়ার আগে প্রতিটি এলাকায় প্রচার-প্রচারণা চালানো হবে।

ইউনিয়ন টিকাদান কেন্দ্র সম্পর্কে জানতে চাইলে গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সালাম মানবজমিনকে বলেন, তাদেরকে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এই সম্পর্কে ডেকেছেন। টিকার বিষয়ে ইউনিয়নে মাইকিং হচ্ছে। প্রস্তুতি চলছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বাংলাদেশ এ পর্যন্ত উপহার ও কেনা মিলিয়ে মোট টিকা পেয়েছে ২ কোটি ৫০ লাখ ২৭ হাজার ১৪০ ডোজ। দেশে টিকাদান কর্মসূচি ২৫শে জানুয়ারি শুরু হলেও গণটিকাদান কার্যক্রম আরম্ভ হয় ৭ই ফেব্রুয়ারি থেকে।

করোনায় আরও ২৪৬ জনের মৃত্যু, প্রাণহানি ২১ হাজার ছাড়ালো  
দেশে করোনায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ২১ হাজার ১৬২ জনে। নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১৫ হাজার ৯৮৯ জন। সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত ১২ লাখ ৮০ হাজার ৩১৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ৯১ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫ হাজার ৪৮২ জন এবং এখন পর্যন্ত  ১১ লাখ ৮ হাজার ৭৪৮ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে আরও জানানো হয়, ৬৯৭টি পরীক্ষাগারে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৫ হাজার ৯৩৭টি নমুনা সংগ্রহ এবং ৫৩ হাজার ৪৬২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৭৮ লাখ ৪৩ হাজার ৮৮৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ৯১ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৬ দশমিক ৬০ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ২৪৬ জনের মধ্যে পুরুষ ১৩৭ জন আর নারী ১০৯ জন। দেশে সরকারি হিসেবে এখন পর্যন্ত করোনাতে আক্রান্ত হয়ে পুরুষ মারা গেলেন ১৪ হাজার ২৭৯ জন আর নারী মারা গেলেন ৬ হাজার ৮৮৩ জন। বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৯১ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে রয়েছেন ৩ জন, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ১৬ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৩২ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ৭১ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৭১ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৩৩ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১৩ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৪ জন, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ১ জন,  শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে মারা গেছে ২ জন। তাদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের আছেন ৭৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ৬৪ জন, রাজশাহী বিভাগের ২২ জন, খুলনা বিভাগের ৩০ জন, বরিশাল বিভাগের ১৬ জন, সিলেট বিভাগের ১৪ জন, রংপুর বিভাগের ১৪ জন আর ময়মনসিংহ বিভাগের আছেন ১০ জন। মারা যাওয়া ১৪৬ জনের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন ১৮১ জন, বেসরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন ৪৯ জন, বাসায় মারা গেছেন ১৫ জন আর হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে ১ জনকে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status