শেষের পাতা

অর্ধেক আসন খালি রেখে হোটেল রেস্তরাঁ চালুর দাবি মালিকদের

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

৩ আগস্ট ২০২১, মঙ্গলবার, ৮:১১ অপরাহ্ন

স্বাস্থ্যবিধি মেনে আপাতত ৫০ শতাংশ আসন খালি রেখে হোটেল-রেস্তরাঁ চালু করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ রেস্তরাঁ মালিক সমিতি। গতকাল রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, করোনাভাইরাসের আঘাতে রেস্তরাঁ সেক্টরটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত বছরের ৮ই মার্চ থেকে করোনাভাইরাসের কারণে সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী রেস্তরাঁ ব্যবসা কখনো ৫০ শতাংশ আসনে বসিয়ে আবার কখনো অনলাইন/টেকঅ্যাওয়ের মাধ্যমে ব্যবসা সীমিত রেখেছি। আমাদের রেস্তরাঁ ব্যবসা শুধুমাত্র অনলাইন ডেলিভারি/টেকঅ্যাওয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে চালানো সম্ভব নয়। রেস্তরাঁ ব্যবসায়ীরা বর্তমানে নানা সমস্যায় জর্জরিত।
এতে জানানো হয়, সারা দেশে ৬০ হাজার রেস্তরাঁয় ৩০ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং প্রায় দুই কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে, যারা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। সারা দেশে শতকরা ৮০ ভাগ রেস্তরাঁ বন্ধ রয়েছে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে হাহাকারের টেলিফোন আসছে। রেস্তরাঁ বন্ধ থাকায় সংশ্লিষ্ট মালিকপক্ষ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যে হৃদয়বিদারক কষ্ট করছে, তা ভাষায় বোঝানো সম্ভব নয়।
রেস্তরাঁ মালিকরা জানান, বর্তমানে টেকঅ্যাওয়ে, পার্সেল ও অনলাইন ডেলিভারি করছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা হোটেল-রেস্তরাঁ অনুপাতে মাত্র ২ থেকে ৩ শতাংশ। আমরা মনে করি, বর্তমানে শুধু অনলাইন ডেলিভারির সুযোগ দিয়ে রেস্তরাঁ বন্ধ রাখার ঘোষণাটি দুরভিসন্ধিমূলক ও দেশীয় ব্যবসায়ীদের কোণঠাসা করার পথও বটে। এখানে দেশি-বিদেশি স্বার্থান্বেষী মহলের হাত রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে রেস্তরাঁ মালিক সমিতির দাবি-
১. পচনশীল (পেরিশেবল) পণ্য বিক্রি করার ক্ষেত্রে লোন দেয়া যাবে না বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের লোন দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে। তাই কোনো ব্যাংক-ই হোটেল-রেস্তরাঁ খাতে লোন দিচ্ছে না।
২. জাতীয় রাজস্ব খাতে রেস্তরাঁ সেক্টরের অনেক অংশীদারিত্ব এবং পর্যটন শিল্পের প্রধান নিয়ামক শক্তি হওয়া সত্ত্বেও শিল্পের মর্যাদা পাওয়া যাচ্ছে না।
৩. হোটেল রেস্তরাঁ ব্যবসাকে চলমান রাখার জন্য রানিং ক্যাপিটাল হিসেবে এসএমই খাত থেকে এই সেক্টরে ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে সহজ শর্তে, স্বল্প সুদে জামানত বিহীন এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দিতে হবে।
৪. যেহেতু রেস্তরাঁ খাতটি একটি সেবা খাত, সেহেতু হোটেল-রেস্তরাঁ মালিক-শ্রমিকদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে করোনার টিকা দেয়া জরুরি। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সু-দৃষ্টি দেবেন, এটি আমাদের প্রাণের দাবি।
৫. হোটেল-রেস্তরাঁ খাতে কর্মরত শ্রমিকদের প্রণোদনা দিতে হবে। এক্ষেত্রে শ্রমিকদের মোবাইলের মাধ্যমে নগদ অর্থ অথবা নির্দিষ্ট কার্ড দেয়ার মাধ্যমে মাসিকভাবে খাদ্য সাহায্য দেয়া যেতে পারে।
৬. হোটেল-রেস্তরাঁ খাতকে শিল্পের মর্যাদা দিতে হবে। যেহেতু হোটেল-রেস্তরাঁ খাতটি পর্যটন শিল্পের প্রধান নিয়ামক শক্তি। এছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কারখানা পরিচালনা করতে যে পরিমাণ নিয়মনীতি বাস্তবায়ন প্রয়োজন তার চেয়ে অধিক নিয়মনীতি বাস্তবায়ন হয়ে থাকে হোটেল-রেস্তরাঁ খাতে।
৭. হোটেল-রেস্তরাঁ খাতকে একাধিক মন্ত্রণালয়ের অধীনে না রেখে একটি নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে শিল্পের মর্যাদা দিতে হবে ও মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
৮. চালু করা ই-কমার্স টেকঅ্যাওয়ে, পার্সেল ও অনলাইন ডেলিভারির ক্ষেত্রে বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কমিশন করা ও একটি সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন করে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা। বর্তমানে ডেলিভারি কোম্পানিগুলো স্বেচ্ছাচারীভাবে ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে, যা আমাদের ব্যবসায়িক স্বাধীনতার স্বকীয়তা বিনষ্ট করছে এবং আমরা মনে করি, এতে সার্বভৌমত্ব ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে বা করছে। যেটিকে ইস্ট ইন্ডিয়ার নীল চাষের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। ইতিমধ্যে অনলাইনে পণ্য ডেলিভারির ক্ষেত্রে সরকার একটি নির্দেশনা দিয়েছে, যা অতি জরুরি ছিল। সে অনুযায়ী হোটেল-রেস্তরাঁর ই-ফুড ডেলিভারির ক্ষেত্রেও সু-নির্দিষ্ট নীতিমালা দেয়া জরুরি ও মনিটরিং ব্যবস্থা জোরালোভাবে করতে হবে, যাতে উভয়পক্ষের স্বার্থ সংরক্ষিত হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status