প্রথম পাতা

ভোগান্তির একই চিত্র

নূরে আলম জিকু

২ আগস্ট ২০২১, সোমবার, ৯:০০ অপরাহ্ন

ছবি: জীবন আহমেদ

লকডাউনের মধ্যেই গতকাল খুলেছে দেশের রপ্তানিমুখী সব শিল্প ও কলকারখানা। এতে কঠোর লকডাউন উপেক্ষা করে কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন শ্রমিকরা। হঠাৎ করে 
কারখানা খোলা ও গণপরিবহন সংকটের কারণে প্রথমদিনে অনেকেই উপস্থিত হতে পারেনি। ফলে গতকালও হাজার হাজার মানুষ ফিরেছেন ঢাকায়। কর্মস্থল অভিমুখী মানুষের চাপ ছিল দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ও শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটেও। গত শনিবার মধ্যরাত থেকে লঞ্চ চলাচল করায় ফেরিঘাটে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের চাপ কিছুটা কমেছে। তবে চাপ বেড়েছে যাত্রীবাহী লঞ্চে। এ ছাড়া ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-কুমিল্লা মহাসড়কে ভিড় দেখা গেছে। গণপরিবহন চলাচল করায় দেশের উত্তরাঞ্চল, পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ সড়ক পথে ঢাকায় ফিরেছেন। এতে নানা ভোগান্তিসহ ঠাসাঠাসি করে ৫ থেকে ৬ গুণ বাড়তি ভাড়া গুনতে হয়েছে যাত্রীদের। গতকালও ঢাকায় ফেরা যাত্রীদের অধিকাংশই পোশাক খাতের শ্রমিক। এতে সড়কে দেখা গেছে ঢাকায় ফেরা মানুষ ও যানবাহনের চাপ। এদিকে, ঢাকামুখী মানুষের চাপ সামাল দিতে সড়কে বেড়েছে গণপরিবহন। বাস, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, ট্রাক, জিএনজি, মোটরবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশায় করে ঢাকায় ঢুকছেন তারা। অনেকে গণপরিবহন না পেয়ে ট্রাকে গাদাগাদি করে বসে, শুয়ে কিংবা দাঁড়িয়ে যাতায়াত করছেন। এদের মধ্যে নারী পুরুষ ও শিশুরা রয়েছেন। অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পাড় থেকে টাঙ্গাইল শহর রাবনা বাইপাস পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। ঢাকার প্রবেশমুখ গাবতলী, সায়েদাবাদ, আব্দুল্লাহপুর এলাকায় মানুষের ভিড় দেখা গেছে। দুপুরের পর গণপরিবহন না পেয়ে অনেকেই হেঁটে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছান। কেউ কেউ সীমাহীন দুর্ভোগের স্বীকার হয়েছেন।
এদিকে, গতকাল সকাল থেকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। ঢাকামুখী যাত্রীদের চাপ বেড়েছে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটেও। ফেরিতে পদ্মা পাড়ি দিয়ে গণপরিবহন, পণ্যবাহী ট্রাক ও ভাড়ায় চালিত বিভিন্ন বাহন দিয়ে ঢাকায় পৌঁছাচ্ছেন তারা। তবে ঘাটে যাত্রীর তুলনায় গণপরিবহন সংখ্যা কম থাকায় বিপাকে পড়েন যাত্রীরা। অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি না মেনে ট্রাকে, কাভার্ড ভ্যানে, মোটরবাইক ও রিকশায় করে এসেছেন। সকালে ঢাকা সদরঘাট ঘুরে দেখা যায়, দক্ষিণাঞ্চল থেকে একের পর এক যাত্রী বোঝাই করে টার্মিনালে ভিড়ছে লঞ্চ। প্রতিটি লঞ্চেই গাদাগাদি করে আসছেন এসব যাত্রীরা। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী নিয়ে আসছে লঞ্চ। এতে উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। ভোলা থেকে ছেড়ে আসা লঞ্চগুলো অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়েই পাড়ি দিয়েছে উত্তাল মেঘনা ও চাঁদপুরের মোহনা।
ভোলার তুলাতুলি থেকে আসা রিফাত হাওলাদার মানবজমিনকে বলেন, ঢাকার সঙ্গে ভোলা জেলার মানুষের যোগাযোগ মাধ্যম লঞ্চ ও ফেরি। বিকল্প কোনো মাধ্যম না থাকায় অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই লঞ্চে করে মানুষ ঢাকায় আসেন। তবে হঠাৎ কারখানা খোলায় শ্রমিকরা বিপাকে পড়েছেন। স্বাস্থ্যবিধি ও করোনা পরিস্থিতি ভুলে যে যেভাবে পারছেন লঞ্চে, ফেরিতে গাদাগাদি করে আসছেন। এতে বাড়তি ভাড়াসহ নানা ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছেন যাত্রীরা। তিনি বলেন, সকালে ভোলা থেকে ছেড়ে আসা লঞ্চগুলো কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। লঞ্চের ডেক, প্রবেশপথ, সিঁড়ি, ছাদ, কেবিনের গলিসহ বাথরুমের সামনেও মানুষ ঠেলাঠেলি করে উঠেছে। কোথাও বসা কিংবা নড়াচড়া করার মতো পরিস্থিতি ছিল না। বেশির ভাগ যাত্রীদের মুখে ছিল না কোনো মাস্ক।
চাঁদপুর থেকে আসা আরাফাত হোসেন রাশেদ চাকরি করেন যাত্রাবাড়ী এলাকার একটি গার্মেন্টে। তিনি বলেন, গতকাল সকালে অফিসে উপস্থিত থাকার কথা। না গেলে চাকরি থাকবে না। চাকরি হারানোর ভয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে ঢাকায় আসা। কয়েকগুণ বাড়তি ভাড়া দিয়ে আসলেও লঞ্চে বসার মতো জায়গা পাইনি। মানুষের ধাক্কাধাক্কিতে মুখের মাস্কও হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের শ্রমিকদের কষ্ট কেউ বুঝতে চায় না। নোয়াখালী থেকে মো. আক্কাস আলী বলেন, ভোররাতে বাসে উঠেছি। করোনার মধ্যে বাসে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচলের কথা থাকলেও ঢাকামুখী মানুষের চাপে তা মানা হয়নি। প্রতিটি সিটে যাত্রী বসেছে। ফাঁকা জায়গায় দীর্ঘপথেও শ্রমিকরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আসছেন। ভাড়াও নিয়েছেন প্রায় ৩ গুণ।
এদিকে কাভার্ড ভ্যানে করে বগুড়ার শিবপুর থেকে এসেছেন নোয়াব আলী। তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে বাড়ি গিয়েছি। লকডাউনে কারখানা বন্ধ থাকায় বাড়িতেই ছিলাম। এলাকায় আয়ের কোনো উৎস নেই। এখন কারখানা খুলছে। পেটে ক্ষুধার যন্ত্রণা মেটাতে কাভার্ড ভ্যানে করে ঢাকায় এসেছি। রোদ আর বৃষ্টিতে ভিজে একটা গাড়িতে ২৭ জন এসেছি। জনপ্রতি ৯শ’ টাকা ভাড়া নিয়েছে। আসতে নানা কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে।

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status