শেষের পাতা

সিলেটে এক মাসে মৃত্যু ২১৫ শনাক্ত সাড়ে ১৩ হাজার

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

২ আগস্ট ২০২১, সোমবার, ৮:৪৯ অপরাহ্ন

বড়লেখার গ্রামতলা গ্রামের বৃদ্ধা লালচাঁন বিবিকে নিয়ে গত শনিবার সিলেটের ১০ হাসপাতালে ঘুরলেন স্বজনরা। আইসিইউ বেড পাওয়া তো
দূরের কথা, কোথাও অক্সিজেন সম্বলিত বেড খুঁজে পেলেন না। খবর মিললো বিয়ানীবাজারে ভর্তির সুযোগ রয়েছে। সেখানে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করার সাড়ে ৩ ঘণ্টার মাথায় মৃত্যু হয় শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকা ওই বৃদ্ধার। খবরটি দাগ কেটেছে সিলেটের মানুষের। শুধু বৃদ্ধা লালচাঁন বিবিই নয়; সিলেটে চিকিৎসা না পেয়ে অনেকেই রাস্তায় গাড়িতে কিংবা এম্বুলেন্সেই মারা যাচ্ছেন। আর একের এপর এক বাস্তব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছেন সিলেটের মানুষ। যতই দিন যাচ্ছে সিলেটের পরিস্থিতি আরও কঠিন হচ্ছে। পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কোনো সুখবর মিলছেও না। গতকালের পরিসংখ্যানও আরও ভয়াবহ। সিলেটে একদিনে প্রায় ১ হাজার করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন সিলেটে। মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। জুলাই মাস। এক ‘ভয়ঙ্কর’ সময় অতিবাহিত করেছেন সিলেটের মানুষ। দু’বছরের করোনা যুদ্ধে সিলেটের মানুষ সবচেয়ে নাজুক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। এই একমাসেই সিলেটে মৃত্যু হয়েছে ২১৫ জনের। করোনায় শনাক্ত হয়েছেন প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার। গত দুই বছরের পরিসংখ্যানে সিলেটকে এমন কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়নি। জুনের শেষ দিকে এসে সিলেটে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। সিলেটকে যখন করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট গ্রাস করছিলো তখনই শুরু হলো লকডাউন। ফলে ১লা জুলাই থেকে লকডাউনকে সিলেটের জন্য ‘আশীর্বাদ’ হিসেবেই আখ্যায়িত করেছিলেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। আশা প্রকাশ করেছিলেন; লকডাউনের কারণে সিলেটের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। কিন্তু ঘটলো ঠিক তার উল্টো। বরং জুলাই মাসজুড়ে সিলেটে সবচেয়ে বেশি তাণ্ডব চালিয়ে মহামারি করোনাভাইরাস। করোনার কারণে বিপর্যস্ত সিলেট। জুলাইয়ে প্রথম তারিখ থেকে শুরু হওয়া লকডাউন কার্যকরে সিলেটে অনেক বেশি বেগ পেতে হয়েছিলো সিলেটের প্রশাসনকে। কিন্তু ঈদের পর শুরু হওয়া লকডাউনে তেমন বেগ পেতে হয়নি। বরং করোনার কঠিন পরিস্থিতির কারণেই সিলেটের মানুষ স্বপ্রণোদিত হয়ে লকডাউন পালন করেন। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া এখন সচেতন মানুষ অনেকেই বের হচ্ছেন না। সিলেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার কেন্দ্রিক স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে। সেই বিষয়টি ইতিমধ্যে আমলে নিয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তারা নিত্যপণ্যের বাজার কর্তৃপক্ষকে বেলা ২টার মধ্যে বন্ধ করে দিতে নির্দেশনা দিয়েছেন। তবে- গতকাল গণপরিবহন চলার কারণে সিলেটে পদে পদে লঙ্ঘিত হয়েছে লকডাউন। মানুষের যাতায়াত ছিল বেশি। পরিসংখ্যান বলছে- গত ১লা জুলাই পর্যন্ত সিলেটে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৪৭৮ জন। ওই সময় সিলেট জেলার ৩৯১ জন, সুনামগঞ্জের ৩৩ জন, মৌলভীবাজারের ৩৫ জন ও হবিগঞ্জ জেলার ১৯ জন মারা গিয়েছিলেন। শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ২৫ হাজার ৯৮১ জন। সিলেটে ১৭ হাজার ১৯৪ জন, সুনামগঞ্জে ৩ হাজার ৬ জন, মৌলভীবাজারে ৩ হাজার ২৫ জন ও হবিগঞ্জে ২ হাজার ৭৫৬ জন শনাক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু লকডাউন শুরু হওয়ার পর পরই সিলেটে বদলে যায় পরিস্থিতি। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে করোনার শনাক্তের হার। সেই সঙ্গে চলে মৃত্যুর মিছিলও। ৩১শে জুলাই মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৯৩ জনে। এরমধ্যে সিলেট জেলাতে মারা গেছেন ৫৫৪ জন। বাকিদের মধ্যে সুনামগঞ্জের ৪৯ জন, মৌলভীবাজারের ৬০ জন ও হবিগঞ্জের ৩০ জন রয়েছেন। এক মাসে সিলেট বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে সিলেট জেলায়। এখানে মারা গেছেন ১৬৩ জন। মৌলভীবাজারে ২৫ জন, সুনামগঞ্জে ১৫ জন ও হবিগঞ্জে ১১ জন মারা গেছেন। এক মাসে সিলেট জেলাতেই সংক্রমিত হয়েছেন ৭ হাজার ৭৪৩ জন। এ ছাড়া মৌলভীবাজারে ২ হাজার ৩৯৪ জন, হবিগঞ্জে ১ হাজার ৭৯৩ জন ও সুনামগঞ্জে ১ হাজার ৫৯৯ জন সংক্রমিত হয়েছেন। জুলাই মাসের শুরুতে সিলেটে হাসপাতালে রোগী ভর্তির জায়গায় ছিল। কিন্তু ১০ই জুলাইয়ের পর থেকে সিলেটে আইসিইউ সংকট দেখা দেয়। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আইসিইউ বাড়িয়ে প্রায় ১৩০টি করা হলেও স্থান সংকুলান হচ্ছে না। আইসিইউর জন্য প্রায় তিনগুণ রোগী অপেক্ষায় থাকছেন। হাসপাতাল ও ক্লিনিকে এখন সাধারণ আইসোলেশন ওয়ার্ডেও বেড মিলছে না। সিলেটে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটের পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায়। তিনি জানিয়েছেন- করোনা নিয়ন্ত্রণে সিলেটের মানুষের জন্য গণটিকা প্রদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। টিকা গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত সবাইকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে বলে জানান তিনি।
একদিনে আক্রান্ত ৯৯৬: সিলেটে এক দিনে গতকাল আক্রান্ত হয়েছেন ৯৯৬ জন। এটাই হচ্ছে সিলেটে সর্বোচ্চ রেকর্ড। নতুন শনাক্তদের মধ্যে সিলেট জেলাতেই রয়েছেন ৩৯৯ জন। সুনামগঞ্জে ১০৬ জন, মৌলভীবাজারে ১৪০ জন ও হবিগঞ্জে ৩৪০ জন শনাক্ত হয়েছেন। সিলেটে মৃতের সংখ্যা এখন ৭০২ জন। এরমধ্যে সিলেট জেলায় ৫৬১ জন, সুনামগঞ্জে ৫১ জন, মৌলভীবাজারে ৬০ জন ও হবিগঞ্জে ৩০ জন মারা গেছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status