বাংলারজমিন

বারোবাজার রেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার ৭ বছর থামেনি স্বজনহারাদের আর্তনাদ

আমিনুল ইসলাম লিটন, ঝিনাইদহ থেকে

২ আগস্ট ২০২১, সোমবার, ৮:১১ অপরাহ্ন

ঠিক ৭ বছর আগে ২০১৪ সালের ১লা আগষ্ট ঝিনাইদহের ইতিহাসে ঘটেছিল ভয়াবহ মর্মন্তুদ ঘটনা। নাম ছিল ফুলহরি ট্র্যাজেডি। সেদিন একটি বরযাত্রীবাহী বাস ট্রেনের ধাক্কায় চুর্ণ বিচুর্ণ হয়ে যায়। বরযাত্রা পরিণত হয় শবযাত্রায়। ঝরে যায় ১২টি তাজা প্রাণ। একসঙ্গে এতো মানুষের মৃত্যুর ঘটনা নাড়া দিয়েছিল পুরো দেশকে। ফুলহরি ট্র্যাজেডির ৭ বছর পার হলেও এখনো তাদের কান্না থামেনি। প্রিয়জনদের হারিয়ে পরিবারের অনেকেই নির্বাক। সেদিনের কথা মনে করে ডুকরে কেঁদে ওঠেন। জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১লা আগষ্ট ঝিনাইদহের বারোবাজার রেলক্রসিংয়ে গেটম্যানের অবহেলায় ট্রেনের ধাক্কায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বরযাত্রীবাহী বাসটি। বাসটি কালীগঞ্জের সাকো মথনপুর থেকে শৈলকুপার ফুলহরি গ্রামে ফিরছিল। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় একই পরিবারের নারী ও শিশুসহ নিহত হন ১২ জন বরযাত্রী। মর্মস্তুদ এই দুর্ঘটনায় নববধূ জোছনা ও বর তাপস কুমার ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও নিহত হন একই পরিবারের ৩ সদস্যসহ শৈলকুপা উপজেলার ফুলহরি গ্রামের ৭ জন। দুর্ঘটনায় আহত হন অন্তত ৬০ জন। এর মধ্যে হাত, পা ও মেরুদণ্ড ভেঙে পঙ্গু হয়ে গেছেন ২২ জন। নিহতদের মধ্যে শুভন কুমার দে ও বিপ্লব কুমারের পরিবারে কোনো পুরুষ নেই। এ ঘটনার পর দায়ের হওয়া মামলা নিষ্পত্তি হয়নি ৫ বছরেও। এমন অবস্থায় পালিত হচ্ছে ফুলহরি ট্র্যাজেডির ৭ম বার্ষিকী। ঘটনার পর বাংলাদেশ রেলওয়ে ও সরকারের পক্ষ থেকে যে সহযোগিতার আশ্বাস মিলেছিল তা পাননি ক্ষতিগ্রস্তরা। বারোবাজার রেলক্রসিংয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর স্টেশন মাস্টার আবু সুফিয়ান তুর্কি ও গেটম্যান আব্দুর রহমানসহ ৩ জনকে বরখাস্ত এবং বাসচালক রমজান আলীকে দায়ী করে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রিপোর্ট জমা দেয়া হয়। তদন্ত রিপোর্টে দায়ীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি দুর্ঘটনা রোধে বেশকিছু সুপারিশ করা হয়। তদন্ত কমিটির সুপারিশে বারোবাজার রেল লাইনের উপর বসা মাছের হাট উচ্ছেদ করার কথা বলা হয়। কিন্তু সে হাট আজো আছে। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সেদিনের নববধূ জোসনা রানী বলেন, সারাজীবন আমাকে দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়াতে হবে। সবার সঙ্গে হয়তো মিলেমিশে এক সময় স্বাভাবিক হবো। কিন্তু প্রতিটা মুহূর্ত আমাকে তাড়িয়ে বেড়াবে ১২ জন মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা। এই দুঃসহ স্মৃতি কীভাবে ভুলে থাকবো সেটাই ভাবছি। বর তাপসের ভাবী লক্ষীরানী জানান, দুর্ঘটনার কারণে শুধু তাদের পরিবার নয় গোটা গ্রামের মানুষের সব আনন্দ মুছে যায়। পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি উল্লেখ করে তিনি জানান, এখনো সন্তানহারা পরিবারে হা-হুতাশ বিরাজ করছে। মাঝে মাঝেই গভীর রাতে ডুকরে ডুকরে কান্নার শব্দ কানে ভেসে আসে। শৈলকুপার ফুলহরি গ্রামের বাসিন্দা জেলা পরিষদের কাউন্সিলর অনিতা রানী জানান, দুর্ঘটনার পর কিছুদিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত পরিবারদের খোঁজখবর নিয়েছিল। এখন আর কেউ খোঁজ নেন না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status