অনলাইন

স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দিয়ে 'রোল মডেল' হন সাবরিনা-হেলেনারা

তারিক চয়ন

১ আগস্ট ২০২১, রবিবার, ৪:২৩ অপরাহ্ন

সাবরিনা আরিফ চৌধুরী। হেলেনা জাহাঙ্গীর। নাম দুটির সাথে পাঠককে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার মতো কিছু নেই। ছেলেবুড়ো, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সকলেই এখন তাদের নাম জানেন। সেটা যে শুধু তাদের নেতিবাচক বা অনৈতিক কাজের জন্য তা নয়। আটক করার আগে তারা উভয়েই নিজেদের 'ইতিবাচক' কাজের জন্য সমাজে পরিচিত ছিলেন। সমস্যাটা সে জায়াগাতেই। দীর্ঘদিন তারা ছিলেন সমাজের অনেকের কাছেই 'রোল মডেল' বা আদর্শ।

পেশায় চিকিৎসক সাবরিনা জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুব সরব সাবরিনা প্রায়ই তার স্বামীর (করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার অনুমোদন থাকলেও পরীক্ষা না করে ভুয়া ফলাফল দেয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার জেকেজি হেলথকেয়ারের প্রধান নির্বাহী আরিফুল হক চৌধুরী) সাথে দেশবিদেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার ছবি পোস্ট করতেন। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নাচের ভিডিও পোস্ট করতেন। এছাড়া ইউটিউবে সচেতনামূলক বিভিন্ন ভিডিও পোস্ট করতেন। ব্যাপারটা ছিল এমন 'যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে'। সাবরিনা হয়ে উঠেছিলেন অন্য অনেক কর্মজীবী নারীদের কাছে রোল মডেল। অনেকের মনেই আবার প্রশ্ন ছিল একজন চিকিৎসক তার পেশার ফাঁকে এতোকিছু করার সময়টা পান কিভাবে?

সাবরিনা গ্রেপ্তার হবার পর একে একে বেরিয়ে আসে অনেক অজানা তথ্য। অন্য অনেক আলোচনার পাশাপাশি সাবরিনার 'বস'
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের ‘ইউনিট প্রধান’ ডা. কামরুল হাসান মিলনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি বেশ চর্চা হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। চাউর হয় যে কামরুলের সঙ্গে ‘মাখামাখি’ সম্পর্ক ছিল সাবরিনার। তার অধীনেই রেজিস্ট্রার চিকিৎসক হিসেবে কাজ করতেন ডা. সাবরিনা। অনেকে অভিযোগ করেন মিলনের ছত্রছায়াতেই অনিয়মের চূড়ায় উঠেছিলেন সাবরিনা। সাবরিনা দিনের পর দিন কাজ না করেই নিতেন বেতন। ডা. মিলনের সুনজরে থাকায় ব্যক্তিগত কাজে দিনের পর দিন অফিসে অনুপস্থিত থাকার পরও নাম উঠে যেত হাজিরা খাতায়।

অন্যদিকে রাজনীতি ও ব্যবসা ছাপিয়ে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয় হেলেনা জাহাঙ্গীর। নিজের প্রতিষ্ঠিত তথাকথিত 'জয়যাত্রা টেলিভিশন' এর মাধ্যমে প্রবাসীদের জন্য 'কাজ' করতেন হেলেনা। তিনি জানতেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি টিকে আছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের মাধ্যমে। লাখ লাখ বাংলাদেশী প্রবাসে কাজ করেন। প্রবাসে থাকা মানুষ এবং তাদের পরিবার পরিজনদের আবেগকে কাজে লাগিয়ে তিনি খ্যাতি লাভের চেষ্টা চালান। একেবারে যে অসফল হয়েছেন তাও বলা যাবে না। তিনি নিজেই নিজেকে কখনও মাদার তেরেসা, কখনও পল্লী মাতা, কখনও প্রবাসী মাতা ইত্যাদি উপাধী দেন। এসব ব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গা থেকে অনৈতিক সুবিধা লাভ করেন।

ছোটবেলা থেকেই সমাজসেবা করে আসছেন এমন দাবি করা হেলেনা গুটিকয়েক মানুষকে সাহায্য করে, ছবি তুলে সেই ছবি ফলাও করে প্রচার করে এমপি-মেয়র হবারও চেষ্টা চালিয়েছেন। অনেক অনুষ্ঠানেও আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে হেলেনাকে নিজের সমাজসেবার ফিরিস্তি বর্ণনা করতে দেখা গেছে।

অনেকেই হয়তো বলবেন সাবরিনা বা হেলেনার উপরোক্ত অভিযোগগুলো আদালতে প্রমাণিত হয়নি, কেবল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে এসেছে। কিন্তু এভাবে সমাজের রোল মডেল হয়ে উঠা সাবরিনা আর হেলেনাদের 'আসল রূপ' যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে একে একে উন্মোচিত হচ্ছে তখন সাধারণ নারী তথা আপামর জনসাধারণ কতোটা বিভ্রান্ত হচ্ছেন আর 'রোল মডেল' অনুসরণ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন তা নিয়ে বোধ হয় একটা গবেষণা চালানো যেতেই পারে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status