বিশ্বজমিন

বৃটেনে করোনা আক্রান্ত অন্তঃসত্ত্বা হাসপাতালে ভর্তি বেড়েছে ৭ গুন

মানবজমিন ডেস্ক

১ আগস্ট ২০২১, রবিবার, ১:৪৯ অপরাহ্ন

মে মাস থেকে করোনায় আক্রান্ত অন্তঃসত্ত্বাদের হাসপাতালে ভর্তি সাতগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে শতকরা ৯৯ ভাগই কোনো টিকা নেননি। আবার এদের বেশির ভাগকে ধাত্রীরা টিকা নেয়ার পরামর্শও দেননি। ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডের এক বিশ্লেষণে এ কথা বলা হয়েছে বৃহস্পতিবার। এতে বলা হয়, মে মাসে করোনায় আক্রান্ত অন্তঃসত্ত্বা প্রতি সপ্তাহে ২৮ জন ভর্তি হতেন। কিন্তু তারপর এ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২০০ তে। লন্ডনের একটি ট্যাবলয়েড পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে এ কথা বলা হয়েছে।

এতে মিডলবরো’র ২৭ বছর বয়সী একজন যুবতী স্ট্যাসি নাইটসের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরা হয়। করোনা মহামারির মাঝামাঝি সময়ে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। করোনা হলে শুধু ফ্লুর মতো হয়- এর চেয়ে বেশি কিছু নয়। তাকে একথাই বলা হয়েছিল। ফলে প্রথমে তিনি উদ্বিগ্ন হননি। স্ট্যাসি নাইটস বলেন, অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার তিন মাসের মাথায় জানুয়ারিতে কাজ করতে গিয়ে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হন তিনি। তাকে এম্বুলেন্সে করে নেয়া হয় হাসপাতালে। তার ভাষায়- এতে আমি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ি। মনে হচ্ছিল আমাকে যেন কোনো ট্রেন ধাক্কা মেরেছে। সারাক্ষণ বমি হচ্ছিল। আর তাপমাত্রা ছিল অনেক বেশি।

তার শ্বাস-প্রশ্বাস স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু পরীক্ষায় দেখা গেল তার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। কিডনিতে বিপজ্জনক সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। রক্ত জমাট বাঁধার বড় রকমের ঝুঁকিতে আছেন তিনি। স্বাভাবিকভাবে একজন মানুষের রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি যতটুটু তার মধ্যে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি ৫ গুন। এ অবস্থায় চিকিৎসকরা তাকে স্যালাইনের মাধ্যমে জরুরি চিকিৎসা সেবা দিলেন। রক্ত পাতলা করে এমন ওষুধ দিলেন। রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সচল রাখতে দেয়া হলো স্টেরয়েড। তবে স্ট্যাসি নাইটস’কে আইসিইউতে নেয়া হয়নি। তা সত্ত্বেও তার ওপর এবং তার সন্তানের ওপর তিনদিন পর্যন্ত দৃষ্টি রাখলেন চিকিৎসকরা।

স্ট্যাসি নাইটস বলেন, আমাকে হাসপাতাল থেকে ছাড় দেয়া হলেও এক মাস পর্যন্ত ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে স্টেরয়েড নিতে হয়েছে। এতে আরো অসুস্থ এবং প্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলি। গর্ভস্থ সন্তানের জন্য খুব ভয়ে ছিলাম। কিন্তু ঈশ্বরের কাছে ধন্যবাদ, আমার সন্তান সুস্থ আছে বলে বলা হলো। কখনো ভাবিনি এত অসুস্থ হবো। আমার করোনা হলেও ধাত্রী সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

লন্ডনের কেন্দ্রীয় একটি হাসপাতালে মেডিসিনের কনসালট্যান্ট ড. কেভিন ও’কানে। তিনি গত সপ্তাহে বলেছেন, তার করোনা ওয়ার্ডে সম্প্রতি ৬ জন অন্তঃসত্ত্বা নারীকে পান। অন্য আইসিইউয়ের চিকিৎসকরাও বলেছেন, তাদের কাছে মোট যে পরিমাণ রোগী গিয়েছেন তার মধ্যে শতকরা প্রায় ১০ ভাগই অন্তঃসত্ত্বা। এ ছাড়া অন্য সব দিক দিয়ে তারা সুস্থ। মিডল্যান্ডসের একজন আইসিইউ ডাক্তার বলেছেন, এই সংখ্যা দ্রুতই বাড়ছে। এক্ষেত্রে মায়েরা মারাত্মক অসুস্থ থাকার কারণে জরুরি সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে অপরিপক্ব সন্তান ভূমিষ্ঠ করাতে হয়।

ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডের গবেষকরা বৃটেনের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা খাতে (এনএইচএস) যেসব তথ্য দিয়েছেন, তাতে বলা হয়েছে, করোনায় আক্রান্ত এসব মায়ের মধ্যে শতকরা ৯৯ ভাগই টিকা নেননি বা টিকা দেয়া হয়নি। প্রতি ১২ জন অন্তঃসত্ত্বার মধ্যে এক জনেরও কম টিকা নিতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। কিন্তু টিকা নেয়ার বিষয়ে এনএইচএসের মাতৃস্বাস্থ্য বিষয়ক স্টাফরা ভুল তথ্য ছড়িয়ে দিয়েছেন বলে কিছু বিশেষজ্ঞ এবৎং অধিকারকর্মী অভিযোগ তুলেছেন। বলা হচ্ছে, ধাত্রীসহ অন্য স্টাফরা অন্তঃসত্ত্বাদের করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি সম্পর্কে বোঝাননি। এ জন্যই সন্তান সম্ভাবা মায়েদের হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বেড়ে গেছে। এতে অপরিপক্ব সময়ে অসুস্থ অবস্থায় জন্ম হচ্ছে নবজাতকের।

সরকারের জয়েন্ট কমিটি অন ভ্যাক্সিনেশন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনের শিশু পুষ্টিবিদ ও সদস্য প্রফেসর এডাম ফিন বলেন, এসব অন্তঃসত্ত্বাকে টিকা সম্পর্কে জানাতে দ্বিধায় ছিলেন ধাত্রীরা। তারা স্বাভাবিকভাবেই সতর্ক থাকেন এবং গর্ভস্থ শিশুকে সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করেন। অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, এই টিকা শিশুর ওপর কি প্রভাব রাখবে সে বিষয়ে তাদেরকে জানানো হয়নি। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বেশ কিছু অন্তঃসত্ত্বাকে টিকা না নিতে পরামর্শ দিয়েছেন ধাত্রীরা। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, এতে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় সকালে অসুস্থতা দেখা দিতে পারে। এতে শিশু বিকলাঙ্গ হতে পারে। অন্যদের বলা হয়েছে, টিকা নিলে গর্ভপাত হতে পারে।

মাতৃমঙ্গল বিষয়ক দাতব্য সংস্থা ‘প্রেগনেন্ট দেন স্ক্রিউড’-এর প্রতিষ্ঠাতা জোলি ব্রিয়ারলে বলেছেন, আমরা জানতে পেরেছি যে, ধাত্রী, স্বাস্থ্য বিষয়ক পরিদর্শকরা অন্তঃসত্ত্বাদের টিকা নেয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। এ ঘটনাকে হতাশাজনক হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ নিয়ে একটি ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। প্রেগনেন্ট দেন স্ক্রিউড বৃটেনে ৯ হাজার অন্তঃসত্ত্বার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছে। তাতে দেখা গেছে, চার ভাগের মধ্যে তিন ভাগের বেশি অন্তঃসত্ত্বাকে টিকা নিতে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে সুপারিশ করতে ব্যর্থ হয়েছেন স্বাস্থ্য বিষয়ক স্টাফরা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status