বিশ্বজমিন
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে প্রেসিডেন্ট
মানবজমিন ডেস্ক
১ আগস্ট ২০২১, রবিবার, ৯:৫২ পূর্বাহ্ন
নানা চড়াই উতরাই পাড়ি দিয়ে অবশেষে পেরুর প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন পেদ্রো কাস্তিলো। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তার বিজয় রাজনৈতিকভাবে বিভাজিত দেশটির অভিজাত সম্প্রদায়ের ভিত নড়িয়ে দিয়েছে। অত্যন্ত দরিদ্রপ্রবণ অঞ্চল থেকে উঠে আসা এই নেতা একসময় ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কাস্তিলো জন্মান ১৯৬৯ সালের ১লা অক্টোবর। পেরুর সবচেয়ে দরিদ্রতম এলাকার একটি অর্থাৎ পুনো শহরের পাশে ছোট এক গ্রামে তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। তার পিতা-মাতা ছিলেন নিরক্ষর। নানা কাজে ছোটবেলা থেকেই তাদের সহায়তা করতেন তিনি। প্রতিদিন দুই ঘণ্টার বেশি হেঁটে স্কুলে যেতেন।
পড়াশোনা শেষ করে টানা ২৫ বছর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ছিলেন ইউনিয়ন নেতাও। ইতিপূর্বে সরকারি কোনো পদে থাকারও কোনো অভিজ্ঞতা তার ছিল না। তারপরও চলতি বছর তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হন। তার জয়ের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে সেসব গ্রামীণ জনগণের ভোটই, যাদের মাঝে তিনি বড় হয়ে উঠেছিলেন।
তার নির্বাচনি প্রচারণার সবচেয়ে বহুল প্রচারিত স্লোগানগুলোর একটি ছিল, ধনী দেশে আর গরীব হতে চাই না। দরিদ্র পেরুবাসীর ক্লেষ্ট ফুটে উঠেছে তার কণ্ঠে। এক ভাষণে তিনি বলেছিলেন, আমি জানি স্কুল ঝাড়ু দেওয়ার অভিজ্ঞতা কেমন।
নিজেকে জনগণের মানুষ হিসেবে তুলে ধরেছেন কাস্তিলো। নিজের জন্মস্থান কাজামারকা অঞ্চলের ঐতিহ্যগত সাদা, চওড়া-ঘেরছাড়া টুপি ছাড়া তাকে খুব কমই দেখা যায়। সাথে থাকে ফোলানো যায় এমন একটি পেন্সিল। এটি তার মার্ক্সিস্ট ফ্রি পেরু দলের প্রতীক। পেন্সিলের সাথে তার শিক্ষক জীবনেরও ছাপ আছে।
কাস্তিলোর ভাষ্য, সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে পরিচালিত হচ্ছিল না পেরু। দেশটি থেকে দারিদ্র্য ও অসমতা দূরীকরণে ব্যাপক পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এমনকি নতুন একটি সংবিধান তৈরিরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
অপরদিকে বিরোধীদের মতে, কাস্তিলো হচ্ছেন বাম-ঘরানার চরমপন্থি। তারা অভিযোগ এনেছেন, বিভিন্ন কমিউনিস্ট গেরিলা সংগঠনের সঙ্গে তিনি জড়িত। কাস্তিলো এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বক্তৃতায় তার ভাষার স্বর কিছুটা নরমই দেখা গেছে। তবে সমালোচকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তার কিছু পরিকল্পনা লাতিন আমেরিকার তুলনামূলক স্থিতিশীল দেশটিকে অস্থিতশীল করে তুলতে পারে।
‘সময় এসেছে’
নয় ভাই-বোনের মধ্যে কাস্তিলো তৃতীয়তম সন্তান। ১৯৯৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। ২০০২ সাল থেকেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। মেয়র পদে নির্বাচন করেছিলেন। তবে সফল হননি। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে শিক্ষকদের মজুরি ও পারফরম্যান্স মূল্যায়ন নিয়ে এক ধর্মঘটের সময় আলোচনায় উঠে আসেন তিনি।
শহুরে এলাকাগুলোয় খুব একটা পরিচিতি না থাকা সত্ত্বেও, চলতি বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে নাম লেখান কাস্তিলো। সবাইকে চমকে দিয়ে, ১৭ প্রতিদ্বন্দ্বীকে পেছনে ফেলে জিতে যান নির্বাচনের প্রথম দফা। পরবর্তীতে গত নির্বাচনের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রার্থী কেইকো ফুজিমোরি’কে – সাবেক প্রেসিডেন্ট আলবার্তী ফুজিমোরির মেয়ে – পরাজিত করে হয়ে উঠেন প্রেসিডেন্ট।
মাত্র ৪৪ হাজার ভোট বেশি পেয়ে জিতেছেন কাস্তিলো। ভোট গ্রহণ শেষে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলে গণনা ও পুনর্গণনা। এর মাঝে, ফুজিমোরি’র শিবির থেকে একাধিক কেন্দ্রের ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করা হয়।
কাস্তিলো বলেন, সময় এসেছে সমাজের সকল খাতের মানুষ মিলে একসঙ্গে সাম্যবাদী, ন্যায্য ও মুক্ত পেরু গড়ার।
দুর্নীতিতে জর্জরিত রাজনীতি নিয়ে ক্লান্ত পেরুবাসির মন জয় করতে পেরেছেন কাস্তিলো। তবে তার কঠিন সময় সবে শুরু। বিশ্বে মাথাপিছু করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর দেশ পেরু। দেশটিতে চলমান অর্থনৈতিক মন্দায় দরিদ্রসীমার নিচে পতিত হয়েছেন লাখো মানুষ।
কাস্তিলো জানিয়েছেন, জনসেবায় ব্যয় বাড়াতে খনির উপর শুল্ক বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে তার। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, করোনায় মন্দার শিকার ব্যক্তিদের সহায়তায় অর্থ ব্যয় বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে এক বছরের মধ্যে ১০ লাখ কর্মসংস্থান তৈরিরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
খনন, তেল, হাইড্রোইলেকট্রিক বিদ্যুৎ ও গ্যাসসহ বেশকিছু প্রধান অর্থনৈতিক খাতকে জাতীয়করণসহ বেশকিছু ইস্যুতে প্রাথমিকভাবে নেওয়া কঠোর অবস্থান থেকে সরে এসেছেন তিনি। জানিয়েছেন, এসব খাতে ব্যক্তিগত সম্পদের উপর হস্তক্ষেপ করা হবে না।
কাস্তিলোর প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, নতুন সংবিধান রচনা। বর্তমানে দেশটিতে যে সংবিধান কার্যকর তা রচিত হয়েছিল ১৯৯৩ সালে, আলবার্তো ফুজিমোরির শাসনামলে। কাস্তিলো জানান, তিনি মানুষের রঙ, গন্ধ ও স্বাদে ভরা একটি সংবিধান তৈরি করতে চান। তবে, বিভক্ত কংগ্রেসে তার এই প্রস্তাব বাধার সম্মুখীন হতে পারে।
অপরদিকে, কাস্তিলো একজন ক্যাথলিক। সমকামী বিয়ে ও গর্ভপাতের ঘোর বিরোধী তিনি।
তার স্ত্রী লিলা পারেদেসও একজন শিক্ষক। দুই কন্যা সন্তানের পিতা-মাতা তারা। প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের আগে তার পুরো পরিবার রাজধানী লিমা’তে চলে এসেছে। তিনি শপথ গ্রহণ করেন পেরুর ২০০তম স্বাধীনতা দিবসে।
তিনি জানান, অর্থ-সম্পদ বাড়ানোর ইচ্ছা নেই তার। প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে যে বেতন পেতেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবেও তিনি সে পরিমাণ বেতন নেবেন।
(বিবিসি থেকে অনূদিত)
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কাস্তিলো জন্মান ১৯৬৯ সালের ১লা অক্টোবর। পেরুর সবচেয়ে দরিদ্রতম এলাকার একটি অর্থাৎ পুনো শহরের পাশে ছোট এক গ্রামে তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। তার পিতা-মাতা ছিলেন নিরক্ষর। নানা কাজে ছোটবেলা থেকেই তাদের সহায়তা করতেন তিনি। প্রতিদিন দুই ঘণ্টার বেশি হেঁটে স্কুলে যেতেন।
পড়াশোনা শেষ করে টানা ২৫ বছর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ছিলেন ইউনিয়ন নেতাও। ইতিপূর্বে সরকারি কোনো পদে থাকারও কোনো অভিজ্ঞতা তার ছিল না। তারপরও চলতি বছর তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হন। তার জয়ের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে সেসব গ্রামীণ জনগণের ভোটই, যাদের মাঝে তিনি বড় হয়ে উঠেছিলেন।
তার নির্বাচনি প্রচারণার সবচেয়ে বহুল প্রচারিত স্লোগানগুলোর একটি ছিল, ধনী দেশে আর গরীব হতে চাই না। দরিদ্র পেরুবাসীর ক্লেষ্ট ফুটে উঠেছে তার কণ্ঠে। এক ভাষণে তিনি বলেছিলেন, আমি জানি স্কুল ঝাড়ু দেওয়ার অভিজ্ঞতা কেমন।
নিজেকে জনগণের মানুষ হিসেবে তুলে ধরেছেন কাস্তিলো। নিজের জন্মস্থান কাজামারকা অঞ্চলের ঐতিহ্যগত সাদা, চওড়া-ঘেরছাড়া টুপি ছাড়া তাকে খুব কমই দেখা যায়। সাথে থাকে ফোলানো যায় এমন একটি পেন্সিল। এটি তার মার্ক্সিস্ট ফ্রি পেরু দলের প্রতীক। পেন্সিলের সাথে তার শিক্ষক জীবনেরও ছাপ আছে।
কাস্তিলোর ভাষ্য, সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে পরিচালিত হচ্ছিল না পেরু। দেশটি থেকে দারিদ্র্য ও অসমতা দূরীকরণে ব্যাপক পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এমনকি নতুন একটি সংবিধান তৈরিরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
অপরদিকে বিরোধীদের মতে, কাস্তিলো হচ্ছেন বাম-ঘরানার চরমপন্থি। তারা অভিযোগ এনেছেন, বিভিন্ন কমিউনিস্ট গেরিলা সংগঠনের সঙ্গে তিনি জড়িত। কাস্তিলো এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বক্তৃতায় তার ভাষার স্বর কিছুটা নরমই দেখা গেছে। তবে সমালোচকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তার কিছু পরিকল্পনা লাতিন আমেরিকার তুলনামূলক স্থিতিশীল দেশটিকে অস্থিতশীল করে তুলতে পারে।
‘সময় এসেছে’
নয় ভাই-বোনের মধ্যে কাস্তিলো তৃতীয়তম সন্তান। ১৯৯৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। ২০০২ সাল থেকেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। মেয়র পদে নির্বাচন করেছিলেন। তবে সফল হননি। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে শিক্ষকদের মজুরি ও পারফরম্যান্স মূল্যায়ন নিয়ে এক ধর্মঘটের সময় আলোচনায় উঠে আসেন তিনি।
শহুরে এলাকাগুলোয় খুব একটা পরিচিতি না থাকা সত্ত্বেও, চলতি বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে নাম লেখান কাস্তিলো। সবাইকে চমকে দিয়ে, ১৭ প্রতিদ্বন্দ্বীকে পেছনে ফেলে জিতে যান নির্বাচনের প্রথম দফা। পরবর্তীতে গত নির্বাচনের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রার্থী কেইকো ফুজিমোরি’কে – সাবেক প্রেসিডেন্ট আলবার্তী ফুজিমোরির মেয়ে – পরাজিত করে হয়ে উঠেন প্রেসিডেন্ট।
মাত্র ৪৪ হাজার ভোট বেশি পেয়ে জিতেছেন কাস্তিলো। ভোট গ্রহণ শেষে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলে গণনা ও পুনর্গণনা। এর মাঝে, ফুজিমোরি’র শিবির থেকে একাধিক কেন্দ্রের ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করা হয়।
কাস্তিলো বলেন, সময় এসেছে সমাজের সকল খাতের মানুষ মিলে একসঙ্গে সাম্যবাদী, ন্যায্য ও মুক্ত পেরু গড়ার।
দুর্নীতিতে জর্জরিত রাজনীতি নিয়ে ক্লান্ত পেরুবাসির মন জয় করতে পেরেছেন কাস্তিলো। তবে তার কঠিন সময় সবে শুরু। বিশ্বে মাথাপিছু করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর দেশ পেরু। দেশটিতে চলমান অর্থনৈতিক মন্দায় দরিদ্রসীমার নিচে পতিত হয়েছেন লাখো মানুষ।
কাস্তিলো জানিয়েছেন, জনসেবায় ব্যয় বাড়াতে খনির উপর শুল্ক বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে তার। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, করোনায় মন্দার শিকার ব্যক্তিদের সহায়তায় অর্থ ব্যয় বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে এক বছরের মধ্যে ১০ লাখ কর্মসংস্থান তৈরিরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
খনন, তেল, হাইড্রোইলেকট্রিক বিদ্যুৎ ও গ্যাসসহ বেশকিছু প্রধান অর্থনৈতিক খাতকে জাতীয়করণসহ বেশকিছু ইস্যুতে প্রাথমিকভাবে নেওয়া কঠোর অবস্থান থেকে সরে এসেছেন তিনি। জানিয়েছেন, এসব খাতে ব্যক্তিগত সম্পদের উপর হস্তক্ষেপ করা হবে না।
কাস্তিলোর প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, নতুন সংবিধান রচনা। বর্তমানে দেশটিতে যে সংবিধান কার্যকর তা রচিত হয়েছিল ১৯৯৩ সালে, আলবার্তো ফুজিমোরির শাসনামলে। কাস্তিলো জানান, তিনি মানুষের রঙ, গন্ধ ও স্বাদে ভরা একটি সংবিধান তৈরি করতে চান। তবে, বিভক্ত কংগ্রেসে তার এই প্রস্তাব বাধার সম্মুখীন হতে পারে।
অপরদিকে, কাস্তিলো একজন ক্যাথলিক। সমকামী বিয়ে ও গর্ভপাতের ঘোর বিরোধী তিনি।
তার স্ত্রী লিলা পারেদেসও একজন শিক্ষক। দুই কন্যা সন্তানের পিতা-মাতা তারা। প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের আগে তার পুরো পরিবার রাজধানী লিমা’তে চলে এসেছে। তিনি শপথ গ্রহণ করেন পেরুর ২০০তম স্বাধীনতা দিবসে।
তিনি জানান, অর্থ-সম্পদ বাড়ানোর ইচ্ছা নেই তার। প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে যে বেতন পেতেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবেও তিনি সে পরিমাণ বেতন নেবেন।
(বিবিসি থেকে অনূদিত)