প্রথম পাতা
এম্বুলেন্সেই মারা গেলেন সুরত আলী, ভাতিজির বেডে জায়গা পেলেন ফুফু
মরিয়ম চম্পা
১ আগস্ট ২০২১, রবিবার, ৮:২০ অপরাহ্ন
হাসপাতালের সামনে সারি সারি এম্বুলেন্স। একটু পর পরই রোগী নিয়ে এম্বুলেন্স থামছে হাসপাতালের সামনে। রোগীদের সবাই করোনা আক্রান্ত বা উপসর্গে ভুগছেন। এসব রোগীর অধিকাংশই ঢাকার বাইরের প্রত্যন্ত জেলা থেকে আসা। এক হাজার শয্যাবিশিষ্ট ‘ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালের সামনে একটি এম্বুলেন্সে বাবা সুরত আলীকে নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে বসে ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। কুমিল্লার লাকসাম উপজেলা থেকে এসেছেন তারা। কিছুক্ষণ পরপর বাবার শ্বাস-প্রশ্বাস ঠিক আছে কিনা পরীক্ষা করে দেখছেন। পাশে থাকা জামাতা শ্বশুরের মুখে-মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। দোয়া পড়ছেন। একটু পরেই চিৎকারের শব্দ। কাছে গিয়ে দেখা যায় ছেলে জাহাঙ্গীর বলছেন, বাবা আর নেই।
পরে মানবজমিনের সঙ্গে কথা হয় জাহাঙ্গীর আলমের। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, গত কোরবানির ঈদের আগের দিন করোনা আক্রান্ত হন তার বাবা সুরত আলী। বয়স ৮৫ বছর। শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে গতকাল খুব ভোরে এম্বুলেন্সযোগে ঢাকায় নিয়ে আসেন। প্রথমে রাজধানীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তির জন্য নিয়ে গেলে হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা পছন্দ না হওয়ায় সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলেন তারা। পরবর্তীতে এক আত্মীয়ের পরামর্শে ডিএনসিসি কোভিড হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এ সময় রোগীর অবস্থা দেখে ডিউটিরত চিকিৎসকরা জানান- তাকে যত দ্রুত সম্ভব আইসিইউতে ভর্তি করতে হবে। কিন্তু ডিএনসিসি হাসপাতালে আইসিইউ’র কোনো শয্যা ফাঁকা নেই। দায়িত্বরত নার্সরা জানিয়েছেন, শয্যা ফাঁকা হলে তবেই রোগীকে ওই শয্যায় ভর্তি করা সম্ভব। পরবর্তীতে অনেক চেষ্টা করে কোভিড ওয়ার্ডের একটি সাধারণ শয্যায় ভর্তির ব্যবস্থা হয়। হাসপাতালে ভর্তির কাগজপত্র জমা দিয়ে ভর্তির আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তেই এম্বুলেসের ভেতরে মারা যান সুরত আলী।
এম্বুলেন্স চালক শাহাবউদ্দিন জানান, এখানে আসার পর তারা একটি আইসিইউ শয্যার জন্য অনেক খোঁজাখুঁজি করেন। কিন্তু কোনো শয্যা ফাঁকা না থাকায় ভর্তি করতে পারছিলেন না। পরবর্তীতে রোগীকে এম্বুলেন্সে রেখে তার জামাতা এবং এম্বুলেন্স চালক একটি সাধারণ শয্যার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু এর মধ্যেই তিনি এম্বুলেন্সে মারা গেছেন। ৭০ বছর বয়সী মানিক্কি বেগম। স্থায়ী বসবাস ঢাকার দোহারে। এসেছেন নারায়ণগঞ্জ থেকে। হাসপাতালের সামনেই সকাল সাড়ে ১১টা থেকে একটি এম্বুলেন্সের মধ্যে অপেক্ষা করছেন কখন একটি আইসিইউ শয্যা ফাঁকা হবে। মানিক্কি বেগমের ছেলে মো. আবুল হোসেন বলেন, গত তিনদিন আগে মা করোনা আক্রান্ত হন। বর্তমানে তার অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৮১। আইসিইউ শয্যার জন্য গেলে হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন কোনো আইসিইউ শয্যা ফাঁকা নেই। সকাল থেকেই অপেক্ষা করছি যদি একটি শয্যা ভাগ্যক্রমে পেয়ে যাই। পরবর্তীতে জানতে পারি আমাদের মামাতো বোন করোনা আক্রান্ত হয়ে একই হাসপাতালের এইচডিইউতে ভর্তি আছেন। তার শারীরিক অবস্থা এখন আগের চেয়ে কিছুটা ভালো হওয়ায় এইচডিইউ থেকে ছাড়পত্র দিয়ে মায়ের ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়।
সিরাজগঞ্জ থেকে এসেছেন ইদ্রিস আলী খান। বয়স ৬৫ বছর। গত ১০ দিন আগে করোনা আক্রান্ত হলে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে (এ্যাপোলো) ভর্তি ছিলেন। ইদ্রিস আলীর ছেলে মেহেদী হাসান বলেন, বাবার শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় ওখানকার চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন ডিএনসিসি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করতে। গত চারদিন ধরে অপেক্ষা করে অনেক চেষ্টায় একটি আইসিইউ শয্যার ব্যবস্থা হয়েছে। কিডনি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন সালমা বেগম। বয়স ২৩ বছর। এসেছেন চাঁদপুরের শাহরাস্তি থেকে। রাজধানীর একটি হাসপাতালে অপারেশনের পর পর তার প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। পরবর্তীতে কোভিড পজেটিভ হলে চিকিৎসকের পরামর্শে এখানে নিয়ে আসেন। সাধারণ শয্যা ফাঁকা না থাকায় তাকে ওয়েটিং রুমে অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। ডিএনসিসি হাসপাতালের দায়িত্বরত একজন চিকিৎসক জানান, আমাদের আসলে কিছুই করার নেই। প্রতিদিন হাসপাতালটিতে দুই থেকে তিন শ’ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। তাদের সকলকে ভর্তি করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। কোনো রোগীর মৃত্যু হলে অথবা সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়ে চলে গেলে তখনই আমরা আরেকজন রোগীকে ভর্তি করতে পারি।
পরে মানবজমিনের সঙ্গে কথা হয় জাহাঙ্গীর আলমের। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, গত কোরবানির ঈদের আগের দিন করোনা আক্রান্ত হন তার বাবা সুরত আলী। বয়স ৮৫ বছর। শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে গতকাল খুব ভোরে এম্বুলেন্সযোগে ঢাকায় নিয়ে আসেন। প্রথমে রাজধানীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তির জন্য নিয়ে গেলে হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা পছন্দ না হওয়ায় সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলেন তারা। পরবর্তীতে এক আত্মীয়ের পরামর্শে ডিএনসিসি কোভিড হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এ সময় রোগীর অবস্থা দেখে ডিউটিরত চিকিৎসকরা জানান- তাকে যত দ্রুত সম্ভব আইসিইউতে ভর্তি করতে হবে। কিন্তু ডিএনসিসি হাসপাতালে আইসিইউ’র কোনো শয্যা ফাঁকা নেই। দায়িত্বরত নার্সরা জানিয়েছেন, শয্যা ফাঁকা হলে তবেই রোগীকে ওই শয্যায় ভর্তি করা সম্ভব। পরবর্তীতে অনেক চেষ্টা করে কোভিড ওয়ার্ডের একটি সাধারণ শয্যায় ভর্তির ব্যবস্থা হয়। হাসপাতালে ভর্তির কাগজপত্র জমা দিয়ে ভর্তির আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তেই এম্বুলেসের ভেতরে মারা যান সুরত আলী।
এম্বুলেন্স চালক শাহাবউদ্দিন জানান, এখানে আসার পর তারা একটি আইসিইউ শয্যার জন্য অনেক খোঁজাখুঁজি করেন। কিন্তু কোনো শয্যা ফাঁকা না থাকায় ভর্তি করতে পারছিলেন না। পরবর্তীতে রোগীকে এম্বুলেন্সে রেখে তার জামাতা এবং এম্বুলেন্স চালক একটি সাধারণ শয্যার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু এর মধ্যেই তিনি এম্বুলেন্সে মারা গেছেন। ৭০ বছর বয়সী মানিক্কি বেগম। স্থায়ী বসবাস ঢাকার দোহারে। এসেছেন নারায়ণগঞ্জ থেকে। হাসপাতালের সামনেই সকাল সাড়ে ১১টা থেকে একটি এম্বুলেন্সের মধ্যে অপেক্ষা করছেন কখন একটি আইসিইউ শয্যা ফাঁকা হবে। মানিক্কি বেগমের ছেলে মো. আবুল হোসেন বলেন, গত তিনদিন আগে মা করোনা আক্রান্ত হন। বর্তমানে তার অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৮১। আইসিইউ শয্যার জন্য গেলে হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন কোনো আইসিইউ শয্যা ফাঁকা নেই। সকাল থেকেই অপেক্ষা করছি যদি একটি শয্যা ভাগ্যক্রমে পেয়ে যাই। পরবর্তীতে জানতে পারি আমাদের মামাতো বোন করোনা আক্রান্ত হয়ে একই হাসপাতালের এইচডিইউতে ভর্তি আছেন। তার শারীরিক অবস্থা এখন আগের চেয়ে কিছুটা ভালো হওয়ায় এইচডিইউ থেকে ছাড়পত্র দিয়ে মায়ের ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়।
সিরাজগঞ্জ থেকে এসেছেন ইদ্রিস আলী খান। বয়স ৬৫ বছর। গত ১০ দিন আগে করোনা আক্রান্ত হলে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে (এ্যাপোলো) ভর্তি ছিলেন। ইদ্রিস আলীর ছেলে মেহেদী হাসান বলেন, বাবার শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় ওখানকার চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন ডিএনসিসি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করতে। গত চারদিন ধরে অপেক্ষা করে অনেক চেষ্টায় একটি আইসিইউ শয্যার ব্যবস্থা হয়েছে। কিডনি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন সালমা বেগম। বয়স ২৩ বছর। এসেছেন চাঁদপুরের শাহরাস্তি থেকে। রাজধানীর একটি হাসপাতালে অপারেশনের পর পর তার প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। পরবর্তীতে কোভিড পজেটিভ হলে চিকিৎসকের পরামর্শে এখানে নিয়ে আসেন। সাধারণ শয্যা ফাঁকা না থাকায় তাকে ওয়েটিং রুমে অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। ডিএনসিসি হাসপাতালের দায়িত্বরত একজন চিকিৎসক জানান, আমাদের আসলে কিছুই করার নেই। প্রতিদিন হাসপাতালটিতে দুই থেকে তিন শ’ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। তাদের সকলকে ভর্তি করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। কোনো রোগীর মৃত্যু হলে অথবা সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়ে চলে গেলে তখনই আমরা আরেকজন রোগীকে ভর্তি করতে পারি।