প্রথম পাতা

লস অ্যানজেলেসের রোডশো’তে সালমান এফ রহমান

সহায়তা নয় বিনিয়োগ চায় বাংলাদেশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

১ আগস্ট ২০২১, রবিবার, ৮:১৯ অপরাহ্ন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্যতম অংশীদার। আমরা দেশটির সহায়তা নয়, বিনিয়োগ চাই। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে অংশীদার হওয়ার সক্ষমতা রয়েছে বাংলাদেশের। এ কারণে কোনো অনুদান কিংবা সহায়তা নয়, বাংলাদেশ হতে চায় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অংশীদার।
গত শুক্রবার লস অ্যানজেলেসে স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে ৫টায় ইন্টারকন্টিনেন্টাল লস অ্যানজেলেস ডাউনটাউন হোটেলের উইলশায়ার গ্রান্ড বলরুমে শেয়ারবাজার বিষয়ক রোডশো’র তৃতীয় পর্ব উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, রপ্তানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বেপজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম, ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান, সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন এবং আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম সারওয়ার।
অর্থনীতি নিয়ে রোডশো’তে একাধিক বক্তা বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে চীন, ভারত, ইউরোপ ও জাপানের বাজারে পণ্য রপ্তানিতে মিলবে শুল্কমুক্ত সুবিধা। লস অ্যানজেলেসের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে রোডশো’র মূল বিষয়বস্তু ‘রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার: পটেনশিয়াল ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট’।
অনুষ্ঠানে সালমান এফ রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্যতম অংশীদার। আমরা দেশটির সহায়তা নয়, বিনিয়োগ চাই। ভারতের চেয়ে বাংলাদেশে যৌথ উদ্যোগের কোম্পানি একেবারে সহজ। তিনি বলেন, প্রবাসীদের বিনিয়োগে এগিয়ে আসা উচিত। আর প্রবাসীদের সব ধরনের জটিলতা কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বিমানবন্দরে অনাবাসী বাংলাদেশিদের জন্য গেট রাখার বিষয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত যৌক্তিক। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, চতুর্থ ও পঞ্চম শিল্পবিপ্লব মাথায় রেখে সব ঢেলে সাজানো হচ্ছে। শিল্পখাতে বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। শিল্পখাতের সেবা গ্রাহকের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে।
অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির সক্ষমতা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। অভ্যন্তরীণ বিশাল বাজার রয়েছে; মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। কম মূল্যে শ্রমিক, বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং অন্যান্য সেবা মিলছে। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক দিক থেকে বিশ্বের প্রথম অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র। সে কারণে রপ্তানিতে বিভিন্ন দেশে উচ্চ শুল্ক দিতে হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে সুবিধা পাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগ করলে চীন, ভারত, ইউরোপ ও জাপানের বাজার থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধা নিতে পারবে।
অনুষ্ঠানে অ্যালায়েন্স ক্যাপিটাল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার আসাদুল ইসলাম রিপনের এক প্রশ্নের জবাবে শিবলী বলেন, দেশের শেয়ারবাজার অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। ইক্যুইটি মার্কেটের পাশাপাশি বন্ড, স্মলক্যাপ এবং অন্যান্য পণ্য আসছে। অর্থাৎ পণ্যের বহুমুখীকরণ হচ্ছে। তিনি বলেন, সামগ্রিকভাবে মূল্যায়ন করলে আগামী বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্ভাবনা বিশাল। কিন্তু আমাদের অর্থনীতির যে অর্জন ও সম্ভাবনা রয়েছে, উন্নত দেশগুলোর বিনিয়োগকারীদের কাছে তা তুলে ধরা হয়নি, যে কারণে আমাদের ওইভাবে বিদেশি বিনিয়োগ আসেনি। এ কারণে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য আমরা এ ধরনের রোডশো’র উদ্যোগ নিয়েছি। কেউ কেউ বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে রোডশো কেন? আমাদের জবাব হচ্ছে সহায়তা নয়, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ চাই।
অনুষ্ঠানে প্রবাসীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিভিন্ন জটিলতা নিরসন হলে বাংলাদেশে ৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগে প্রস্তুত তারা। এ সময়ে বিমানবন্দরে অনাবাসী বাংলাদেশিদের (এনআরবি) জন্য আলাদা গেট দাবি করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে স্থিতিশীল বাংলাদেশ। এ অবস্থায় বাংলাদেশে বিনিয়োগ লাভজনক।
বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্ভাবনা তুলে ধরে বিদেশি ও প্রবাসীদের বিনিয়োগ আকর্ষণে যুক্তরাষ্ট্রের চারটি গুরুত্বপূর্ণ শহরে ১০ দিনের রোডশো’র আয়োজন করা হয়েছে। এরই মধ্যে নিউ ইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে রোডশো শেষ হয়েছে। আগামী ৩০শে জুলাই লস অ্যানজেলেস এবং ২রা আগস্ট সানফ্রান্সিসকোতে হবে এ কর্মসূচি। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এর আয়োজন করেছে।
ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মুর্শেদ বলেছেন, বাংলাদেশ আসলে কী করছে, কতোটা উন্নতি করছে- সে বিষয়ে সম্যক ধারণা দিয়েছেন পূঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান। আক্ষরিক অর্থে বাংলাদেশ কতোটা উন্নতি করেছে তা দেখতে বিদেশি এবং অনাবাসী বাংলাদেশিদের যত দ্রুত সম্ভব দেশে আসার আমন্ত্রণ জানান তিনি।
ওয়ালটন এমডি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা দেখে যে কারও আত্মবিশ্বাস বাড়বে। ইলেকট্রনিক্স ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরে বাংলাদেশের উন্নয়নে ওয়ালটন শোকেস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেইসঙ্গে আমি বলতে পারি যে, পাঁচ ভাইয়ের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ৭শ’ একরের বেশি জায়গাজুড়ে গড়ে ওঠা ওয়ালটন কারখানা ঘুরে দেখলে আপনাদের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়বে। তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সক্ষমতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এজন্য তিনি সবাইকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করা আহ্বান জানান।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status