প্রথম পাতা

যে কৌশলে ব্ল্যাকমেইল করতেন হেলেনা

আল-আমিন

১ আগস্ট ২০২১, রবিবার, ৮:১৯ অপরাহ্ন

ক্ষমতাসীন দলের বড় নেতা এবং বিভিন্ন রকম পরিচয় দিয়ে প্রায় ২৭ জন ব্যক্তিকে নিজের ট্র্যাপে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে কথিত চাকুরিজীবী লীগের মূল কর্ণধার হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে। নানা ছুতোই হেলেনা ওইসব ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক করেন। ধীরে ধীরে সম্পর্ক গভীর করে তিনি তাদের ব্ল্যাকমেইল করতেন। যারা ভুক্তভোগী তারা ইতিমধ্যে র‌্যাব’র কাছে যোগাযোগ করেছেন। ভুক্তভোগীদের মধ্যে রয়েছেন ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, চিকিৎসক, অভিনেতা, রাজনীতিবিদ, আমলাসহ একাধিক পেশাজীবী লোকজন। নিজের মান-সম্মানের ভয়ে তারা কাউকে এতোদিন কিছু বলতে পারেননি। বিষয়টি তারা চেপে গেছেন। ভুক্তভোগীরা হেলেনার দ্বারা প্রতারণার শিকার হওয়ার পর হেলেনাকে জিজ্ঞাসা করলে হেলেনা তাদের ‘মিডিয়া প্রচার’ করার হুমকি প্রদান করেন। এই হুমকিতেই তারা চেপে যান। বিষয়টি খতিয়ে দেখছে র‌্যাব। এছাড়াও র‌্যাব’র মাঠ পর্যায়ের তদন্তকারী কর্মকর্তারা হেলেনার ৫টি গার্মেন্টস এবং ১৫টি ফ্ল্যাটের সন্ধান পেয়েছেন। তার এই সম্পদের উৎস খোঁজার তথ্য নেয়ার জন্য মাঠে নেমেছে র‌্যাব। হেলেনা প্রথমে নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচয় দিলেও তার আয়ের সঙ্গে সম্পদের পরিমাণ মিলাতে পারেননি তদন্তকারী কর্মকর্তারা। এছাড়াও হেলেনা বিভিন্নস্থানে সুবিধা পাওয়ার জন্য নানারকম পরিচয় দিতেন। বিশেষ করে ফিল্ম ক্লাবে তার কর্মকাণ্ডে ওই ক্লাবের সদস্যরা অনেকটা বিরক্ত ছিলেন।

গত বৃহস্পতিবার রাতে গুলশানের ৩৬ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাসা থেকে দীর্ঘ প্রায় চার ঘণ্টা অভিযান শেষে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আটক করে র?্যাব। এ সময় তার বাসা থেকে বিদেশি মদ, অবৈধ ওয়াকিটকি সেট, ক্যাসিনো সরঞ্জাম ও হরিণের চামড়া উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও রাতে গুলশানের বাসা থেকে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আটকের পর র‌্যাব তার মিরপুরে জয়যাত্রা টিভি ও জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে অভিযান চালায়।

সূত্র জানায়, অভিযানে দুই কার্যালয় থেকে বেশকিছু কাগজপত্র জব্দ করেছে আভিযানিক দল। আটকের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র?্যাব সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। শুক্রবার রাজধানীর গুলশান থানায় তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে র‌্যাব বাদী হয়ে ২টি মামলা দায়ের করে। এর মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় ঢাকা মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরী ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মামলার বাদী র‌্যাব। মামলার তদন্ত র‌্যাব করতে চাই বলে সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে। তারা প্রয়োজনে মামলার তদন্তের জন্য স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদন দেবেন।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে র‌্যাব’র অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কেএম আজাদ গতকাল মানবজমিনকে জানান, ‘হেলেনা জাহাঙ্গীর একজন বহুমুখী প্রতারক। তার বিশাল সম্পদের উৎস জানা গেছে। কোন আয় থেকে এতগুলো সম্পদ তিনি অর্জন করেছেন তা তথ্যানুসন্ধান চলছে।’

র‌্যাব সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, হেলেনাকে আটকের পর তাকে র‌্যাব সদর দপ্তরে নিয়ে আসা হয়। সেখান তাকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। চতুর হেলেনা এ সময় বিচলিত ছিলেন না। অনেক প্রশ্নের উত্তর তিনি হাসিমুখে দিয়েছেন। আবার অনেক প্রশ্নের উত্তর তিনি দেননি। আবার কিছু প্রশ্ন কৌশলে এড়িয়ে গেছেন।
সূত্র জানায়, র‌্যাব’র মাঠ পর্যায়ের গোয়েন্দারা ৫টি গার্মেন্টস এবং ১৫টি ফ্ল্যাটের সন্ধ্যান পেয়েছেন। গার্মেন্টসগুলো হচ্ছে- মিরপুরের ১১ নম্বরের নিট কনসার্ন ইউনিট, নারায়ণগঞ্জের জেসি এমব্রয়ডারি, নারায়ণগঞ্জের হুমায়রা স্টিকার, নারায়ণগঞ্জের জয় অটো গার্মেন্টস ও  নারায়ণগঞ্জের প্যাক কনসার্ন। প্যাক কনসার্ন যৌথ মালিকানাধীন। এছাড়াও আরও ৮টি গার্মেন্টস তার তৈরি করার পরিকল্পনা ছিল। ইতিমধ্যে ৩ টির তিনি জমি কিনেছেন। চট্টগ্রামের মিরেরসরাইয়ে তার প্যাকেজিং কারখানা করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন ছিল।  

সূত্র জানায়, র‌্যাব’র মাঠ পর্যায়ের তদন্তকারী কর্মকর্তারা তার ১৫টি একক মালিকাধীন ফ্ল্যাটের সন্ধান পেয়েছেন। সেগুলো হচ্ছে- উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ৫ তলা ভবনে ৫ টি, গুলশান-২ এর ৩৬ নম্বর রোডে ৫ নম্বর বাড়িতে ৫টি, গুলশান-২ এর ৮৬ নম্বর রোডে ৭/বি নম্বর বাড়িতে ১ টি, গুলশান  এভিনিউয়ে ১টি, গুলশান নিকেতনে ১টি, মিরপুরের ১১ নম্বরের ৬ নম্বর রোডে ১টি, মিরপুরের কাজীপাড়ায় ১টিসহ তার মোট এখন পর্যন্ত ১৫টি ফ্ল্যাটের সন্ধান পেয়েছেন তারা। এছাড়াও গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকায় ১০০ একর জমির সন্ধান পেয়েছে র‌্যাব। সেই জমি তিনি আরেক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যৌথ মালিকানাধীন হয়ে কিনেছেন। ওই ব্যবসায়ী গুলশান ক্লাবের সাবেক নির্বাচিত এক বড় নেতার ছেলে। ওই নেতা আবার একটি রাজনৈতিক দলের নেতা।

সূত্র জানান, হেলেনা নানা ছুতোই বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও শিল্পপতির সঙ্গে সম্পর্ক করতেন। সম্পর্ক করার ক্ষেত্রে তিনি যেসব ভিআইপির সঙ্গে ছবি তুলেছেন সেইগুলো তাদের তিনি দেখাতেন এবং বলতেন যে, এদের সঙ্গে তার দহরম-মহরম সম্পর্ক আছে। যে কোনো কাজ তিনি তাদের কাছে আদায় করে দিতে পারবেন। তার কথায় অনেক শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী কোটি কোটি টাকা খুইয়েছেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, র‌্যাব হেলেনার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছে যে, নিজ এলাকা কুমিল্লায় নেতাকর্মীদের মাঝে তিনি টাকা ছিটিয়ে গ্রুপিং সৃষ্টি করেছেন। তার এ উদ্দেশ্য ছিল যে, ওই এলাকায় কোন্দল লাগিয়ে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিতসহ এলাকায় প্রভাব বিস্তার করা।

সূত্র জানায়, জয়জাত্রা টেলিভিশনে  লোকবল নিয়োগ দিয়ে পরে কোনো বেতন না দিয়ে চাকরিচ্যুত করেছেন। এমন প্রায় ৭০ জন হেলেনার প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status