শেষের পাতা

সিলেটে অক্সিজেন নিয়ে কাড়াকাড়ি

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

১ আগস্ট ২০২১, রবিবার, ৮:১৬ অপরাহ্ন

সিলেটে অক্সিজেন নিয়ে কাড়াকাড়ি চলছে। মৃত্যুপথযাত্রী রোগীর জীবন বাঁচাতে তারা ছুটছেন অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানে। করছেন অক্সিজেনের সিলিন্ডার বহনকারীর জন্য অপেক্ষা। একটি গাড়ি এলে সিলিন্ডার নিয়ে শুরু হয় কাড়াকাড়ি। হুমড়ি খেয়ে পড়েন হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা। সরকারি হাসপাতালে অক্সিজেনের তেমন সংকট না হলেও বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রীতিমতো অসহায়। চাহিদার অর্ধেক অক্সিজেনও তারা পাচ্ছেন না। এজন্য গত দু’দিন ধরে নতুন রোগী ভর্তি করতে পারছেন না। এ কারণে অক্সিজেনের জন্য হাহাকার বেড়েছে সিলেটে। অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে; চাহিদার অর্ধেক সরবরাহ থাকায় সব হাসপাতালকে সময়মতো অক্সিজেন সরবরাহ করা যাচ্ছে না। তরল অক্সিজেনের চেয়ে সিলিন্ডার অক্সিজেন কম আসছে সিলেটে। জুলাই মাসজুড়ে সিলেটে করোনার তাণ্ডব চলছে। রোগী বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। করোনায় মৃত্যুর মিছিলও চলছে। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে উপচে পড়ছে করোনা রোগীরা। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত রোগী ভর্তি করেও হাসপাতাল- ক্লিনিকে জায়গা হচ্ছে না। এতে করে রাস্তায় গাড়িতে, এম্বুলেন্সে মারা যাচ্ছেন রোগীরা। এই অবস্থায় গত দু’দিন ধরে সিলেটে নতুন করে অক্সিজেন সংকট তীব্র হয়েছে। অক্সিজেন সরবরার স্বাভাবিক থাকায় হাসপাতালে রোগী ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু এখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চাহিদার অর্ধেক অক্সিজেন পাওয়ায় ভর্তি থাকা রোগীদের মধ্যে অক্সিজেন সরবরাহ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। সিলেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. নাসিম হোসাইন গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ‘আমরা সাহস নিয়েই ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত করোনা রোগী হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি। কিন্তু গত দুই দিন ধরে অক্সিজেনের সংকট দেখা দিয়েছে। চাহিদার অর্ধেক অক্সিজেন সরবরাহ করার কারণে অনেক হাসপাতালে নতুন করে রোগী ভর্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। আর যেসব রোগী ভর্তি রয়েছেন তাদেরকেও চিকিৎসা দিতেও চিকিৎসকরা হিমশিম খাচ্ছেন।’ তিনি বলেন- ‘করোনা রোগীদের জন্য অক্সিজেন সাপোর্ট খুব জরুরি। সিলেটে দ্রুত অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক না করলে হাসপাতালে রোগী ভর্তি করা সম্ভব হবে না। এজন্য অক্সিজেন সরবরাহ প্রতিষ্ঠানকে আরও বেশি দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।’ সিলেটে জুলাই মাসে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়েছে প্রায় ৮ গুণ। দু’মাস আগেও যেখানে ৪-৫ হাজার কিউবিট মিটার অক্সিজেনের প্রয়োজন হতো এখন সেখানে লাগছে ৩০ থেকে ৩২ হাজার কিউবিক মিটার। কিন্তু চাহিদার অর্ধেকের একটু বেশি অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে সিলেটে। ফলে ১২-১৩ হাজার কিউবিক মিটার অক্সিজেনের ঘাটতি থাকছে। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- বর্তমানে অক্সিজেনের চাহিদা গোটা বাংলাদেশেই সমানভাবে বেড়েছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে সিলেটে সেভাবে অক্সিজেন সরবরাহ দেওয়া যাচ্ছে না। তবে- কম হলেও নিয়মিত ভাবে প্রতিদিন অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে বলে তারা জানান। সিলেটের আম্বরখানা ফ্রিডম জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন- গত শুক্রবার থেকে তারা অক্সিজেন পাচ্ছেন না। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান লিন্ডের কাছে খালি সিলিন্ডার পাঠানো হলেও গতকাল বিকাল পর্যন্ত তারা অক্সিজেন ভর্তি করা সিলিন্ডার পাননি। প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য লিন্ডার কার্যালয়ে বসে আছেন। তারা জানিয়েছেন- মানুষের জীবন বাঁচাতে তারা অপারেশন থিয়েটার বন্ধ করে দিয়ে পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে থাকা অক্সিজেন সিলিন্ডার রোগীদের মধ্যে সরবরাহ করা হচ্ছে। এদিকে- আরও কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের লোকজন অক্সিজেন গাড়ির জন্য লিন্ডার কার্যালয়ে অপেক্ষায় থাকছেন। গাড়ি এলে তারা অক্সিজেন নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু করেন। হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানান- রোগীর জীবন বাঁচানো আগে। অক্সিজেনের অভাবে রোগী মারা যাচ্ছে; এ কারণেই সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সিলিন্ডার আসার অপেক্ষায় থাকতে হয়। লিন্ডে সিলেটের এজেন্ট আলী হোসেন অক্সিজেন সংকটের কথা মানবজমিন’র কাছে স্বীকার করেছেন। তিনি জানান- ‘সিলেটে চাহিদার অর্ধেক অক্সিজেন সিলিন্ডার পাচ্ছেন। এ কারণে সবাইকে কিছু কিছু সিলিন্ডার দিয়ে পরিস্থিতি চালু রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।’ অক্সিজেন সংকটের কারণ হিসেবে তিনি বলেন- ‘সিলেটে গাড়ি আসছে কম। গত দু’দিনে মাত্র দু’টি গাড়ি এসেছে। কিন্তু চাহিদা হচ্ছে ৫ থেকে ৬ গাড়ি সিলিন্ডার অক্সিজেনের। এ কারণে সবাইকে চাহিদার অর্ধেক সিলিন্ডার দেয়া হচ্ছে। অক্সিজেন সংকট দূর করতে তিনি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে জানান।’ সিলেটের সরকারি হাসপাতালগুলোতে তরল অক্সিজেন দেয় স্প্রেক্টা কোম্পানি। বিশেষ করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল, শামসুদ্দিন সহ বিভাগের অপর তিন জেলা হাসপাতালে এই হাসপাতাল থেকে অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে। স্প্রেক্টা সিলেটের এজেন্ট মাসুদ আহমদ জানিয়েছেন- গোটা বাংলাদেশে এক সঙ্গে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার এখন সংকট চলছে। তবে- সরকারি হাসপাতাল ও বেসরকারি পর্যায়ে কোভিড হাসপাতালে যাতে সংকট না হয় সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। ওসমানী ও শামসুদ্দিনে প্রতি একদিন পরপর তারা অক্সিজেন সরবরাহ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি জানান- সিলেটে বর্তমানে তার কোম্পানি থেকে অক্সিজেনের চাহিদা রয়েছে প্রায় ২০ হাজার কিউবিক মিটারের। এখন তারা সরবরাহ করতে পারছেন ১০-১২ হাজার কিউবিক মিটার। ৭-৮ হাজার কিউবিক মিটার অক্সিজেন সংকট রয়েছে বলে জানান।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status