শেষের পাতা

ভয়াল ইউরোপযাত্রা

সিরিয়া-সুদানকেও ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশিরা

কূটনৈতিক রিপোর্টার

১ আগস্ট ২০২১, রবিবার, ৮:১৫ অপরাহ্ন

উন্নত জীবন জীবিকার আশায় সাগর বা দুর্গম জঙ্গল মাড়িয়ে দিয়ে অবৈধভাবে ইউরোপ প্রবেশের চেষ্টায় বাংলাদেশিরা সিরিয়া, আফগানিস্তান, সুদান ও ইরিত্রিয়ার নাগরিকদেরকেও টপকে গেছে। পরিসংখ্যান বলছে, ১২ বছরে ৬২ হাজার বাংলাদেশি অবৈধ পথে ইউরোপে পৌঁছেছেন। ২০১৪ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের ২২ লাখ ২৪ হাজার ২৪৫ জন ঝুঁকিপূর্ণভাবে সাগর ও স্থলপথে ইউরোপে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছেন। একই সময়কালে এভাবে অনুপ্রবেশ করতে গিয়ে প্রাণ হারাতে হয়েছে ২১ হাজার ৭০৭ জনকে। ইউএনএইচসিআর বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত যত লোক অবৈধ পথে ইউরোপে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছে, তার সাড়ে ১৪ শতাংশই বাংলাদেশি; শতকরা হিসাবে এটিই সর্বোচ্চ সংখ্যা। অবৈধ মানব পাচারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার বেড়েছে জানিয়ে জাতিসংঘের রিপোর্টে বলা হয়- ২০১২ থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে ৫ হাজার ৭৩৮টি মামলা হলেও নিষ্পত্তি হয়েছে সাকুল্যে ২৮২টি; সাজা হয়েছে ৭১ জনের। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়া বাংলাদেশিদের মধ্যে তরুণই বেশি। ২১শে জুন এভাবে লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে নৌকাডুবিতে ১৭ বাংলাদেশি প্রাণ হারায়। তিউনিশিয়ার কোস্টগার্ড ভূমধ্যসাগর থেকে বাংলাদেশিসহ ৩৮০ জনকে জীবিত উদ্ধার করে। গত ২৪শে জুন ২৬৭ জনকে উদ্ধার করে তিউনিশিয়ার কোস্টগার্ড, যার মধ্যে ২৬৪ জনই বাংলাদেশি। ১০ই জুন ১৬৪ বাংলাদেশিকে তিউনিশিয়া উপকূল থেকে উদ্ধার করে দেশটির কোস্টগার্ড। এর আগে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার সময় গত ১৮ই মে ৩৬ জন, ২৭ ও ২৮শে মে ২৪৩ বাংলাদেশিকে উদ্ধার করে তিউনিশিয়ার কোস্টগার্ড। এ বছর এভাবে মোট ৩ হাজার ৩৩২ জন বাংলাদেশিকে উদ্ধার বা আটক করা হয়েছে। ইউরোপের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা ফ্রন্টেক্সের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে এভাবে ৬০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি ইউরোপে প্রবেশ করেছে। গত কয়েক বছরে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, ঢাকা, নোয়াখালী, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা এসব জেলা থেকে সবচেয়ে বেশি লোক অবৈধভাবে সাগরপথে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। বাংলাদেশ থেকে সাগরপথে রোহিঙ্গাদের পাচারও থেমে নেই। ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-এর জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত এক বছরে ১ হাজার ৫৯৭ জন রোহিঙ্গা পাচার হয়। ২০২০ সালে অন্তত ২ হাজার ৪০০ রোহিঙ্গা সাগরপথে পাড়ি দিয়েছে। ২০১২ সালে মানব পাচার প্রতিরোধে সরকার মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন করে। ব্র্যাক মাইগ্রেশনের তথ্য অনুযায়ী, মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে ২০১২ থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত ৫ হাজার ৭৩৮টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় দেখা গেছে, ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ পাচারের শিকার। এতে মোট আসামির সংখ্যা সাড়ে ২৪ হাজারেরও বেশি। কিন্তু ৫ হাজার ৭৩৮টি মামলার মধ্যে গত নয় বছরে ২৮২টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৩৬টি মামলায় মাত্র ৭১ জনের সাজা হয়েছে। বাকিরা অব্যাহিত পেয়ে গেছে। বাকি প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মামলা এখনো চলমান। এদিকে মাইগ্রেশন মানব পাচার ও অনিয়মিত অভিবাসন: পরিস্থিতি বিশ্লেষণ, চ্যালেঞ্জ ও করণীয় শীর্ষক ব্র্যাকের এক অনুষ্ঠানে সম্প্রতি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক সচিব নাছিমা বেগম মানব পাচারের মতো জঘন্যতম অপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিষয়ে নয় বছরে ৩৬টি মামলার ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করেন। বলেন, অপরাধীদের লাগাম এখনই টানতে হবে। অনুষ্ঠানে  স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জিএসএম জাফরউল্লাহ পাচাররোধে সরকারের নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) মানব পাচারবিষয়ক সেলের বিশেষ পুলিশ সুপার সাইদুর রহমান বলেন, দেশের ভেতরকার পাচারের মামলাগুলো তদন্ত করা সহজ। কিন্তু বিদেশে পাচারের ঘটনায় অধিকাংশ সময় ভুক্তভোগীরা যথেষ্ট তথ্য দিতে চান না। আবার অনেক মামলার বাদী বা ভুক্তভোগীকেই পাওয়া যায় না। ভূমধ্যসাগর দিয়ে যারা মানব পাচারের শিকার, তারা কোনো অভিযোগ করে না। তবে পুলিশ দেশে-বিদেশে পাচারকারীদের নেটওয়ার্ক খুঁজছে। পাচারকারীরা পার পাবে না। অনুষ্ঠানে তিনজন ভুক্তভোগী মানব পাচারকারীদের বিচার দাবি করেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status