দেশ বিদেশ

একটি সড়কের জন্য ৭০ বছর অপেক্ষা

রাজনগর (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

১ আগস্ট ২০২১, রবিবার, ৬:৫৬ অপরাহ্ন

দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে একটি সড়কের জন্য সংগ্রাম করে আসছেন রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের (১নং ওয়ার্ড) নওয়াগাঁও, শ্যামরকোনা গোবিন্দপুর, জালালপুর ও জগন্নাথপুর (আংশিক) গ্রামের ৫ হাজারেও বেশি মানুষ। দুই উপজেলার টানাহিঁচড়া আর কড়াইয়া হাওর, মনু ও ধলাই নদী বেষ্টিত মানুষগুলোর দুঃখের আর যেন শেষ নেই। জীবন চলছে গৃহবন্দির মতো। সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা নিতে হলেও তাদের ঘুরে আসতে হয় ২৮-৩০ কিলোমিটার পথ। প্রতি বছরই নিজেদের উদ্যোগে ২-৩ বার সড়ক মেরামত করেন এসব এলাকার মানুষজন।
জানা গেছে, উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী নওয়াগাঁও, শ্যামরকোনা গোবিন্দপুর, জালালপুর ও জগন্নাথপুর (আংশিক) গ্রাম নিয়ে এ ওয়ার্ড গঠিত। কামারচাক ইউনিয়নের এ ওয়ার্ডের মধ্যখানে রয়েছে করাইয়া হাওর। ইউনিয়ন পরিষদে আসতে হলে হয়তো হাওরের মধ্য দিয়ে অথবা কমলগঞ্জের চৈত্রঘাট- মৌলভীবাজার সদর হয়ে তাদের আসতে হয়। হাওরের মধ্যদিয়ে মাটির সড়ক থাকলেও সেটি গাড়ি চলাচলের অনুপযোগী। ফলে ওই এলাকার মানুষকে মৌলভীবাজার শহর হয়ে রাজনগর বা কামারচাক ইউনিয়ন পরিষদে আসতে হয়। এতে তাদের ২৮-৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। স্থানীয় লোকজন জানান, ১৯৬০-৬২ সালের দিকে এসব এলাকার মানুষ সড়কের জন্য সংগ্রাম করে প্রায় আড়াই কিলোমিটারের একটি মাটির সড়ক নির্মাণ করেন। এ সড়কের অধিকাংশ জমিই কমলগঞ্জ উপজেলার। আবার এ সড়কের পাশে কমলগঞ্জের বসতি না থাকায় সড়কটি পাকা করছে না সংশ্লিষ্ট এলজিইডি। অপরদিকে ধলাই নদীতে একটি সেতুর জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে এলেও এখনো কোনো সুরাহা হয়নি। ফলে এ ওয়ার্ডের মানুষের যাতায়াতে চরম ভোগান্তি দেখা দিয়েছে।
নওয়াগাঁও গ্রামের আমিনুল ইসলাম বলেন, আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল কিংবা ইউনিয়নের কোনো সুযোগ-সুবিধা নিতে হলে আমাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বর্ষা এলে তো তা শোচনীয় পর্যায়ে পৌঁছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মামুনুর রশিদ বলেন, ১৯৬০-৬২ সাল থেকে এ এলাকার লোকজন সড়ক নিয়ে সংগ্রাম করে আসছেন। প্রতি বছরই সড়ক মেরামত ও খানাখন্দ ভরতে গিয়ে নওয়াগাঁও গ্রামের মানুষের চাঁদা দিতে হয়। স্বেচ্ছায় শ্রম দেয়ার পরও প্রতিবছর এক দেড় লাখ টাকা খরচ হয়। এ সংগ্রাম যেন শেষ হবার নয়। কমলগঞ্জ এলাকা দিয়েই আমাদের যেতে হয়। কমলগঞ্জের এরিয়া পাকা না হওয়ায় আমাদের এরিয়াও পাকা হচ্ছে না। অপরদিকে করাইয়া হাওর দিয়ে নির্মিত মাটির সড়কটি যদি পাকা হতো অথবা ধলাই নদীতে একটি ব্রিজ হতো তাহলেও আমরা কিছুটা স্বস্তি পেতাম।
কামারচাক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজমুল হক সেলিম বলেন, নওয়াগাঁও থেকে চৈত্রঘাট পর্যন্ত কমলগঞ্জের এরিয়া। সাবেক চিফ হুইপ আব্দুশ শহীদ এমপি ও তার ভাই ইউপি চেয়ারম্যান বদরুল ইসলামের সড়কটি পাকাকরণের জন্য যোগাযোগ রাখছি। অপরদিকে করাইয়া থেকে হাওরের মধ্যদিয়ে যে সড়ক গেছে সেখানে আমরা পারিবারিক ভাবে মাটি কাটার কাজ করিয়েছি ২০১২ সালে। এরপর ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে কয়েকবার মাটি কাটানো হয়েছে। বর্তমানে উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ধলাই ব্রিজ এবং ৫ কিলোমিটার পাকা সড়ক নির্মাণ করে করাইয়া-শ্যামরকোনা হয়ে সদর উপজেলার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য প্রকল্প রয়েছে। ধলাই ব্রিজের জন্য এমপি মহোদয় ডিও লেটার দিয়েছেন। আশা করছি কিছুদিনের মধ্যে হয়ে যাবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status