প্রথম পাতা
দিনে অন্তত ৬ লাখ টিকা দেয়ার পরামর্শ
ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
৩১ জুলাই ২০২১, শনিবার, ৮:০৯ অপরাহ্ন
দেশে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমণ ও মৃত্যুতে প্রায় প্রতিদিনই রেকর্ড হচ্ছে। অদৃশ্য এই শত্রুকে প্রতিরোধে চলছে ভ্যাকসিন কার্যক্রম। উন্নত দেশেগুলো এই কর্মসূচিতে বেশ এগিয়ে গেলেও বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি চলছে খুব ধীর গতিতে। আইএমএফ ও বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন প্রতিদিন অন্তত ৬ লাখ মানুষকে টিকা দিতে হবে। অর্থাৎ মাসে প্রায় ২ কোটি মানুষকে টিকা দিতে হবে। তাহলে করোনার ভয়াবহ থাবা থেকে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব। পাশাপাশি মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে হবে। অন্যদিকে সরকারও টিকাদানে গতি বাড়াতে চায়। দ্রুত বেশি মানুষকে টিকা দিতে স্বাস্থ্য বিভাগ প্রতি মাসে ১ কোটি ডোজ দেয়ার পরিকল্পনা করছে। এই লক্ষ্যে ২৫ বছর পূর্ণ হওয়া দেশের যেকোনো নাগরিককে নিবন্ধনের সুযোগ দেয়া হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়েও চলবে টিকাদান। ১৮ বছরের নাগরিকরাও ৮ই আগস্ট থেকে টিকা পাওয়ার লাইনে দাঁড়াতে পারবেন। দেশে এ পর্যন্ত প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলে মোট ১ কোটি ২৮ লাখ ৫০ হাজার ৮৩৪ ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। নিবন্ধন করেছেন ১ কোটি ৪১ লাখ মানুষ।
কত মানুষকে প্রতিদিন ভ্যাকসিন দিলে দেশ করোনা থেকে সুরক্ষা পাবো জানতে চাইলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া) সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক মানবজমিনকে বলেন, প্রথমে সরকারকে ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা করতে হবে। কত দিনের মধ্যে মানুষের হার্ড ইমিউনিটি তৈরি করবে। এর জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। কীভাবে কতোদিনে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে তা জনগণকে জানাতে হবে। থাকতে হবে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন পদ্ধতি। তিনি কৌশলগত পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে বলেন, জনগণকে সম্পৃক্ত করে ওয়ার্ডে ও ইউনিয়নে সবাইকে টিকা দিতে হবে। এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে। বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষকে আগে টিকার আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি চিকিৎসার সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরও অগ্রাধিকার দিতে হবে টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে। এই জনস্বাস্থ্যবিদ বলেন, সারা দেশে টিকাদান কেন্দ্রে প্রতিটি ইউনিয়নের মেম্বারদের দায়িত্ব হবে সবাই টিকা পেলো কি না তা নিশ্চিত করা। অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, সরকারের লক্ষ্য রাখতে হবে যে সবাইকে ১৩ মাসের মধ্যে টিকাদান সম্পন্ন করা। এটা শুরু হবে সরকার যে ৭ই আগস্ট থেকে গণটিকাদানের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সেই সময় থেকে। তাহলে ১৪তম মাসে হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করা সম্ভব হতে পারে। তিনি বলেন, এই ১৩ মাসে সরকারকে টিকা সংগ্রহ নিশ্চিত করতে হবে। যাতে এই সময়ে দেশে ২৫ কোটি টিকা আসে। তখন ১৪তম মাসে হার্ড ইমিউনিটি হবে। তিনি আরও জানান, মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে হবে। জনগণকে এই ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক এই উপদেষ্টা জানান, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। শক্তিশালী করতে হবে এই পর্যায়ের চিকিৎসা ব্যবস্থা। প্রতিটি উপজেলায় র্যাপিড অ্যান্টিজেন্ট পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিকে চিহ্নিত করতে হবে। কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করতে হবে। আসু প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি অক্সিজেন মাস্ক ও অক্সিজেন সিলিন্ডারের প্রাপ্যতা সহজ করতে হবে। জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোত আইসিইউ সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
মাসে কোটি টিকা দেয়ার চিন্তা: সরকার টিকাদানে গতি বাড়াতে চায়। দ্রুত বেশি মানুষকে টিকা দিতে স্বাস্থ্য বিভাগ প্রতি মাসে ১ কোটি ডোজ দেয়ার পরিকল্পনা করছে। এই লক্ষ্যে ২৫ বছর পূর্ণ হওয়া দেশের যে কোনো নাগরিককে নিবন্ধনের সুযোগ দেয়া হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়েও চলবে টিকাদান। কীভাবে টিকা কার্যক্রমকে জোরদার করে বেশি মানুষকে দ্রুত টিকার আওতায় আনা যায়, তা নিয়ে বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে একটি ভার্চ্যুয়াল সভা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, মাসে ১ কোটি বা তার বেশি ডোজ টিকা দেয়া যায় কি না, তা আলোচনা হয়েছে। তবে এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। কী হতে যাচ্ছে, তা খুব শিগগির আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।
অন্যদিকে করোনার সম্মুখসারির যোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যরা বয়স ১৮ বছর হলেই নিবন্ধন করতে পারবেন বলে গত সপ্তাহে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন। পর্যায়ক্রমে সব নাগরিকের জন্য বয়সসীমা কমিয়ে ১৮ বছর করার কথা জাতীয় করোনা টিকা প্রয়োগ পরিকল্পনায় আছে। এভাবে সরকার জনসংখ্যার ৮০ শতাংশকে টিকার আওতায় আনতে চায়। ৭ই আগস্ট থেকে সরকার ইউনিয়ন পর্যায়ে করোনার টিকা দেয়া শুরু করবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে টিকাকেন্দ্রের স্থান ঠিক করবেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের মতো স্থানে টিকাকেন্দ্র হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিকাদান কর্মসূচির পরিচালক ডা. শামছুল হক বলেন, প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে মোট সাড়ে ৪ হাজারের বেশি কেন্দ্র হবে। এ ছাড়া প্রতিটি পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে এবং সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে তিনটি করে টিকাকেন্দ্র করার পরিকল্পনা আছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত টিকা দেয়া চলবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বয়োজ্যেষ্ঠ ও নারীরা টিকা পাবেন। টিকাদানের আগে টিকা গ্রহণে আগ্রহী সবার তথ্য লিখে রাখবেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। টিকাকেন্দ্রে নিবন্ধনের পর টিকা কার্ড দেয়া হবে। এই কার্ড দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার সময় সঙ্গে আনতে হবে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, প্রতিটি ইউনিয়নে সপ্তাহে তিন দিন টিকা দেয়া হবে। একটি কেন্দ্রে দু’জন টিকাদানকারী ও তিনজন স্বেচ্ছাসেবী কাজ করবেন। শেষ টিকা দেয়ার পর এই দলটি কেন্দ্রে এক ঘণ্টা অবস্থান করবে। এই সময়ে তারা নিবন্ধন-সম্পর্কিত তথ্য অনলাইনে তুলে রাখবেন। প্রতিদিনের প্রতিবেদন তৈরি করে নিজ নিজ উপজেলা বা পৌরসভায় পাঠাবেন।
সূত্র মতে, নিবন্ধন করেননি বা করতে পারেননি এমন ব্যক্তিরা জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে টিকা নিতে পারবেন। অন্যদিকে জনপ্রতিনিধিদের টিকা কার্যক্রমে যুক্ত করার কথাও ভাবা হচ্ছে। তাদের মূলত দু’টি কাজে লাগানো হবে। প্রথমত তারা টিকা নেয়ার ব্যাপারে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করবেন। দ্বিতীয়ত টিকাকেন্দ্রে শৃঙ্খলা বজায় রাখার ব্যাপারেও তাদের সহায়তা নেয়া হবে। টিকা দেয়ার আগে প্রতিটি এলাকায় প্রচার-প্রচারণা চালানো হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশে এখন প্রতিদিন গড়ে আড়াই লাখের বেশি মানুষকে টাকা টিকা দেয়া হচ্ছে। প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলে এ পর্যন্ত বিভিন্ন টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে মোট ১ কোটি ২৮ লাখ ৫০ হাজার ৮৩৪ ডোজ। এর মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৮৫ লাখ ২১ হাজার ৩৫০ জন। আর দ্বিতীয় ডোজ টিকা সম্পন্ন হয়েছে ৪৩ লাখ ২৯ হাজার ৪৮৪ জনের । বাংলাদেশ এ পর্যন্ত উপহার ও কেনা মিলিয়ে মোট টিকা পেয়েছে ২ কোটি ৪২ লাখ ৪৫ হাজার ডোজ। ২৯শে জুলাই সাড়ে ৫টা পর্যন্ত নিবন্ধনকারীর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৪০ লাখ ৯০ হাজার ৩৭৩। দেশে টিকাদান কর্মসূচি ২৫শে জানুয়ারি শুরু হলেও গণটিকাদান কার্যক্রম আরম্ভ হয় ৭ই ফেব্রুয়ারি থেকে।
প্রতিদিন ৬ লাখ মানুষকে টিকা দিতে হবে: ২৭শে জুলাই মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক আপডেট প্রতিবেদনে বলেছে, প্রতিদিন ৬ লাখের বেশি মানুষকে টিকা দিতে পারলেই আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে দেশের ৪০ শতাংশ মানুষ টিকার আওতায় আসবে। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৪০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনতে প্রতিদিন শূন্য দশমিক ৩৬ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে হবে। আইএমএফ’র এ হিসাব ধরলে প্রতিদিন ৬ লাখের মতো মানুষকে টিকা দিতে হবে। আইএমএফ’র প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্তের ভাণ্ডারে এ সংক্রান্ত তথ্য দেয়া হয়েছে। দেশের পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ৪০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনতে প্রতিদিন কতো শতাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকা দিতে হবে, সে চিত্র দেয়া হয়েছে।
কত মানুষকে প্রতিদিন ভ্যাকসিন দিলে দেশ করোনা থেকে সুরক্ষা পাবো জানতে চাইলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া) সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক মানবজমিনকে বলেন, প্রথমে সরকারকে ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা করতে হবে। কত দিনের মধ্যে মানুষের হার্ড ইমিউনিটি তৈরি করবে। এর জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। কীভাবে কতোদিনে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে তা জনগণকে জানাতে হবে। থাকতে হবে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন পদ্ধতি। তিনি কৌশলগত পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে বলেন, জনগণকে সম্পৃক্ত করে ওয়ার্ডে ও ইউনিয়নে সবাইকে টিকা দিতে হবে। এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে। বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষকে আগে টিকার আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি চিকিৎসার সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরও অগ্রাধিকার দিতে হবে টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে। এই জনস্বাস্থ্যবিদ বলেন, সারা দেশে টিকাদান কেন্দ্রে প্রতিটি ইউনিয়নের মেম্বারদের দায়িত্ব হবে সবাই টিকা পেলো কি না তা নিশ্চিত করা। অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, সরকারের লক্ষ্য রাখতে হবে যে সবাইকে ১৩ মাসের মধ্যে টিকাদান সম্পন্ন করা। এটা শুরু হবে সরকার যে ৭ই আগস্ট থেকে গণটিকাদানের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সেই সময় থেকে। তাহলে ১৪তম মাসে হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করা সম্ভব হতে পারে। তিনি বলেন, এই ১৩ মাসে সরকারকে টিকা সংগ্রহ নিশ্চিত করতে হবে। যাতে এই সময়ে দেশে ২৫ কোটি টিকা আসে। তখন ১৪তম মাসে হার্ড ইমিউনিটি হবে। তিনি আরও জানান, মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে হবে। জনগণকে এই ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক এই উপদেষ্টা জানান, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। শক্তিশালী করতে হবে এই পর্যায়ের চিকিৎসা ব্যবস্থা। প্রতিটি উপজেলায় র্যাপিড অ্যান্টিজেন্ট পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিকে চিহ্নিত করতে হবে। কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করতে হবে। আসু প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি অক্সিজেন মাস্ক ও অক্সিজেন সিলিন্ডারের প্রাপ্যতা সহজ করতে হবে। জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোত আইসিইউ সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
মাসে কোটি টিকা দেয়ার চিন্তা: সরকার টিকাদানে গতি বাড়াতে চায়। দ্রুত বেশি মানুষকে টিকা দিতে স্বাস্থ্য বিভাগ প্রতি মাসে ১ কোটি ডোজ দেয়ার পরিকল্পনা করছে। এই লক্ষ্যে ২৫ বছর পূর্ণ হওয়া দেশের যে কোনো নাগরিককে নিবন্ধনের সুযোগ দেয়া হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়েও চলবে টিকাদান। কীভাবে টিকা কার্যক্রমকে জোরদার করে বেশি মানুষকে দ্রুত টিকার আওতায় আনা যায়, তা নিয়ে বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে একটি ভার্চ্যুয়াল সভা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, মাসে ১ কোটি বা তার বেশি ডোজ টিকা দেয়া যায় কি না, তা আলোচনা হয়েছে। তবে এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। কী হতে যাচ্ছে, তা খুব শিগগির আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।
অন্যদিকে করোনার সম্মুখসারির যোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যরা বয়স ১৮ বছর হলেই নিবন্ধন করতে পারবেন বলে গত সপ্তাহে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন। পর্যায়ক্রমে সব নাগরিকের জন্য বয়সসীমা কমিয়ে ১৮ বছর করার কথা জাতীয় করোনা টিকা প্রয়োগ পরিকল্পনায় আছে। এভাবে সরকার জনসংখ্যার ৮০ শতাংশকে টিকার আওতায় আনতে চায়। ৭ই আগস্ট থেকে সরকার ইউনিয়ন পর্যায়ে করোনার টিকা দেয়া শুরু করবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে টিকাকেন্দ্রের স্থান ঠিক করবেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের মতো স্থানে টিকাকেন্দ্র হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিকাদান কর্মসূচির পরিচালক ডা. শামছুল হক বলেন, প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে মোট সাড়ে ৪ হাজারের বেশি কেন্দ্র হবে। এ ছাড়া প্রতিটি পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে এবং সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে তিনটি করে টিকাকেন্দ্র করার পরিকল্পনা আছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত টিকা দেয়া চলবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বয়োজ্যেষ্ঠ ও নারীরা টিকা পাবেন। টিকাদানের আগে টিকা গ্রহণে আগ্রহী সবার তথ্য লিখে রাখবেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। টিকাকেন্দ্রে নিবন্ধনের পর টিকা কার্ড দেয়া হবে। এই কার্ড দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার সময় সঙ্গে আনতে হবে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, প্রতিটি ইউনিয়নে সপ্তাহে তিন দিন টিকা দেয়া হবে। একটি কেন্দ্রে দু’জন টিকাদানকারী ও তিনজন স্বেচ্ছাসেবী কাজ করবেন। শেষ টিকা দেয়ার পর এই দলটি কেন্দ্রে এক ঘণ্টা অবস্থান করবে। এই সময়ে তারা নিবন্ধন-সম্পর্কিত তথ্য অনলাইনে তুলে রাখবেন। প্রতিদিনের প্রতিবেদন তৈরি করে নিজ নিজ উপজেলা বা পৌরসভায় পাঠাবেন।
সূত্র মতে, নিবন্ধন করেননি বা করতে পারেননি এমন ব্যক্তিরা জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে টিকা নিতে পারবেন। অন্যদিকে জনপ্রতিনিধিদের টিকা কার্যক্রমে যুক্ত করার কথাও ভাবা হচ্ছে। তাদের মূলত দু’টি কাজে লাগানো হবে। প্রথমত তারা টিকা নেয়ার ব্যাপারে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করবেন। দ্বিতীয়ত টিকাকেন্দ্রে শৃঙ্খলা বজায় রাখার ব্যাপারেও তাদের সহায়তা নেয়া হবে। টিকা দেয়ার আগে প্রতিটি এলাকায় প্রচার-প্রচারণা চালানো হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশে এখন প্রতিদিন গড়ে আড়াই লাখের বেশি মানুষকে টাকা টিকা দেয়া হচ্ছে। প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলে এ পর্যন্ত বিভিন্ন টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে মোট ১ কোটি ২৮ লাখ ৫০ হাজার ৮৩৪ ডোজ। এর মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৮৫ লাখ ২১ হাজার ৩৫০ জন। আর দ্বিতীয় ডোজ টিকা সম্পন্ন হয়েছে ৪৩ লাখ ২৯ হাজার ৪৮৪ জনের । বাংলাদেশ এ পর্যন্ত উপহার ও কেনা মিলিয়ে মোট টিকা পেয়েছে ২ কোটি ৪২ লাখ ৪৫ হাজার ডোজ। ২৯শে জুলাই সাড়ে ৫টা পর্যন্ত নিবন্ধনকারীর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৪০ লাখ ৯০ হাজার ৩৭৩। দেশে টিকাদান কর্মসূচি ২৫শে জানুয়ারি শুরু হলেও গণটিকাদান কার্যক্রম আরম্ভ হয় ৭ই ফেব্রুয়ারি থেকে।
প্রতিদিন ৬ লাখ মানুষকে টিকা দিতে হবে: ২৭শে জুলাই মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক আপডেট প্রতিবেদনে বলেছে, প্রতিদিন ৬ লাখের বেশি মানুষকে টিকা দিতে পারলেই আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে দেশের ৪০ শতাংশ মানুষ টিকার আওতায় আসবে। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৪০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনতে প্রতিদিন শূন্য দশমিক ৩৬ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে হবে। আইএমএফ’র এ হিসাব ধরলে প্রতিদিন ৬ লাখের মতো মানুষকে টিকা দিতে হবে। আইএমএফ’র প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্তের ভাণ্ডারে এ সংক্রান্ত তথ্য দেয়া হয়েছে। দেশের পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ৪০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনতে প্রতিদিন কতো শতাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকা দিতে হবে, সে চিত্র দেয়া হয়েছে।