প্রথম পাতা

সরজমিন

কাঁদছে জোড়পুকুরিয়া করোনা টেস্টের জন্য মাইকিং

সাহাজুল সাজু, গাংনী (মেহেরপুর) থেকে

৩১ জুলাই ২০২১, শনিবার, ৮:০৮ অপরাহ্ন

কাঁদছে জোড়পুকুরিয়া গ্রাম। মসজিদের মাইকে ভেসে আসছে শোক সংবাদ। পরবর্তীতে কার মৃত্যু সংবাদ মসজিদের মাইকে ঘোষণা হবে এ আতঙ্ক সবার মাঝে। মেহেরপুরের গাংনীর এই জোড়পুকুরিয়া গ্রামেই দুই মাসে মারা গেছেন ২৪ জন। গ্রামের কবরস্থানে একই সারিতে জায়গা হয়েছে তাদের। বাঁশ দিয়ে ঘেরা কবরের আশেপাশে যেতে চান না কেউ। এমন পরিস্থিতিতেও গ্রামবাসী করোনা টেস্টে অনিচ্ছুক। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। মাইকিং করা হচ্ছে গ্রামে। করোনা অক্রান্ত হয়ে গাংনী সাহারবাটী ইউনিয়নের জোড়পুকুরিয়া গ্রামের মকছেদ আলী (৪৫) মারা যান। আর করোনা উপসর্গ নিয়ে ২ মাসে মারা গেছেন একই গ্রামের ইকতার আলী (৭৫), নকিম উদ্দীন (৫০), রোজিনা খাতুন (৬৫), তছির উদ্দীন (৮০), আবদুল খালেক মহুরা (৮০), হালিমা খাতুন (৭৫), জমেলা খাতুন (৭৮), পল্টু আলী (২৭), করিম আলী (৮৫), রাবেয়া খাতুন (৬০), আবদুল হামিদ (৭৫)।
খুবই উদ্বেগে দিন কাটছে এই গ্রামের মানুষের। একজনের লাশ দাফন সম্পন্ন করে বাড়ি ফেরার আগেই আরেকজনের মৃত্যুর খবর শুনতে পান তারা। গ্রামের ইতিহাসে এতো কম সময়ে এতো মানুষের মৃত্যুর ঘটনা এর আগে আর কখনো ঘটেনি। তাই করোনা-ভীতি ছড়িয়েছে গ্রামের সবার মধ্যে। তবুও করোনা উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ মানুষেরা করোনা পরীক্ষায় আগ্রহী নন। নানা ধরনের গুজব ও ভীতিতে করোনা পরীক্ষা থেকে দূরে সরে আছেন গ্রামের মানুষ। এত গেল জোড়পুকুর গ্রামের কথা। একই উপজেলার ধানখোলা ইউনিয়নের গাঁড়াডোব গ্রামে ২ মাসে মৃত্যু হয়েছে ২১ জনের। এর মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন গাঁড়াডোব গ্রামের লাভলু হোসেনের স্ত্রী মিলি খাতুন (৪৫), মৃত আবদুর রশীদের ছেলে বাবর আলী (৩৩), মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে আনারুল ইসলাম (৭০), সেন্টু আলীর মেয়ে কবিতা খাতুন (২৫)। এছাড়াও সর্দি-জ্বর ও বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছেন একই গ্রামের বছের আলী (৮০), মৃত গোলাম রসুলের ছেলে আবদুল হালিম (৩২), একই গ্রামের মৌসুমী খাতুন (৩৫), মাছিরন নেছা (৫৫), গোপাল দাশের স্ত্রী মেকলি দাশী (৬৫), আবদুল মান্নানের স্ত্রী সুফিয়া খাতুন (৪৫), একই গ্রামের ফজলুল হক (৬২), সুরমান আলী (৬৫), কোরবান আলী (৬৪), কেরামত আলী (৫০) ও তার মা আবেদা খাতুন (৮০), একই গ্রামের রাশেদা খাতুন (৬০) ও মেহেরন নেছা (৭৯)। করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে গ্রামের মানুষের অসচেতনতাকেই দায়ী করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। গাঁড়াডোব গ্রামে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া বাবর আলীর চাচাতো ভাই আব্দুল মোমিন জানান, নানা ধরনের গুজবে ডুবে আছে গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ। ফলে তারা টেস্ট করছেন না। কেবল শ্বাস নিতে সমস্যা হলেই হাসপাতালে যাচ্ছেন। গ্রামে কবর খোঁড়ার দায়িত্ব পালনকারী আহাদুল ইসলাম বলেন, একাধিক কবর খুঁড়তে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের। ভয়ও কাজ করে।
মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডা. নাসির উদ্দীন বলেন, ঠাণ্ডা কাশি যাদের হচ্ছে তারা যদি সচেতন হয় তাহলে করোনা অনেক নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাদেরকে হাসপাতালে আসতে হবে। প্রয়োজনে টেস্ট করাতে হবে। তিনি বলেন, অনেকে তথ্য গোপন করছে বিধায় অন্যরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
করোনার চিকিৎসা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরীক্ষায় যদি কেউ পজেটিভ হন তাহলে তার সুচিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করা সম্ভব। কিন্তু গোপন করলে তিনি যেমন শারীরিকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। তেমনি তার মাধ্যমে অন্য মানুষের শরীরেও ছড়িয়ে পড়ছে রোগটি। ভয়ভীতি উপেক্ষা করে পরীক্ষা ও চিকিৎসা নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। ইতিমধ্য গাঁড়াডোব গ্রামে করোনা পরীক্ষার জন্য গণহারে নমুনা নেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। তবে পরীক্ষা করতে অনেকেই অনীহা দেখাচ্ছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status