প্রথম পাতা
সরজমিন দত্তপাড়া
গভীর রাতে ফিরোজের লাশ দাফন, আক্রান্ত মেয়ে নাজমাও
মাহবুব খান বাবুল, সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে
৩১ জুলাই ২০২১, শনিবার, ৮:০৭ অপরাহ্ন
গভীর রাতে করোনায় মৃত ফিরোজ ভূঁইয়ার লাশ আনা হয় গ্রামে। রাতেই কয়েকজন মিলে দাফন সম্পন্ন করে তার। প্রশাসন লাল পতাকা ঝুলিয়ে দিয়েছে তার বাড়ির সামনে। আর এই লাল পতাকার সতর্কবার্তায় এখন গ্রামজুড়ে তৈরি হয়েছে ভিন্ন পরিবেশ। সরাইল কালিকচ্ছের দত্তপাড়া গ্রামের ইব্রাহিম ভূঁইয়ার ছেলে ফিরোজ। গত ২৮শে জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। ওইদিন রাত ১২টার পর লাশ আনা হয় গ্রামে। এর আগেই কবর খুঁড়ে প্রস্তুত গোটা কয়েক লোক। গোটা দশেক লোক মিলে দ্রুত তার দাফন কাজ সম্পন্ন করেন। ওদিকে করোনায় আক্রান্ত নিহত ফিরোজের মেয়ে নাজমা বেগম (৩০)। এর চারদিন আগে পাশের গ্রামের ঊষা রানী করোনায় মারা যান। পর পর দুজনের মৃত্যুতে এলাকায় আতঙ্ক নেমে এসেছে। গত ২৬শে জুলাই অসুস্থ হয়ে সরাইল হাসপাতালে যান ফিরোজ ভূঁইয়া। করোনা পরীক্ষার পর তার পজেটিভ আসে। শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে যেতে থাকে। পরে তাকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়। গত বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার পর দত্তপাড়া যান উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রোকেয়া বেগম, সরাইল থানার এসআই মো. বিল্লাল হোসেন, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য অরবিন্দ দত্ত ও স্বাস্থ্য সহকারী জগদীস রায়। তারা নিহত ফিরোজের বাড়ির সামনে ও আশেপাশে ৪টি লাল পতাকা ঝুলিয়ে দেন। এলাকাবাসীকে পরামর্শ দেন প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হতে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে। নিয়মিত মাস্ক পরতে। একে অপরের প্রতি সহনশীল আচরণ করতে। যত দ্রুত সম্ভব সবাইকে টিকা গ্রহণ করতে। ইউপি সদস্য অরবিন্দ দত্ত বলেন, অনেক বলেছি। কেউ টিকা নিতে চায় না। অজপাড়াগাঁয়ে করোনা আক্রান্ত হবে। মানুষ মারা যাবে। এটা কাউকে বিশ্বাস করাতে পারিনি। বিধিনিষেধও মানাতে পারিনি কাউকে। চায়ের দোকানে খোলা জায়গায় মাস্ক ছাড়া বসে ইচ্ছামতো আড্ডা দিয়েছে সবাই। কিছু বললে রাগ করেন। দাসপাড়ার ঊষা রানীর মৃত্যুর সংবাদে লোকজনের মনে কিছুটা ভয় কাজ করতে থাকে। আর ফিরোজ মিয়ার মৃত্যুর পর এলাকায় ভয় ও আতঙ্ক নেমে আসে। সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. নোমান মিয়া বলেন, আমরা লাল পতাকা ঝুলিয়ে ওই বাড়ি তথা গোটা গ্রামের মানুষকে সতর্ক করেছি। করোনায় আক্রান্ত নিহত ফিরোজ ভূঁইয়ার মেয়ে নাজমাকে বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলেছি। পরিবারের সকল সদস্যকে দ্রুত নমুনা পরীক্ষা করতে বলেছি। ইউপি সদস্য অরবিন্দ দত্ত গত ১৯শে জুলাই নিয়েছেন টিকার প্রথম ডোজ। আর গোটা ওয়ার্ডে শুধুমাত্র নিতাই নামের এক ব্যক্তি টিকা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ইউপি সদস্য। দাসপাড়ার জেলে স্বদেশ দাস (৪৮), প্রদীপ দাস (৩৫), অর্জুন দাস (৬৫) ও বিনেন্দ্র দাস (৪৫) বলেন, টিকা কী? কোথায় কীভাবে দেয়? তা আমাদের জানা ছিল না। স্বাস্থ্য কর্মীরাও আমাদের এখানে খুব একটা আসেন না। এখন আমরা জেনেছি। তাড়াতাড়ি টিকা নেয়ার চেষ্টা করছি। শুনছি, এখন নিবন্ধন করা লাগবে না। জাতীয় পরিচয়পত্র হলেই দেয়া যাবে টিকা। সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুল হক মৃদুল বলেন, ফিরোজ ভূঁইয়ার বাড়িতে লাল পতাকা লাগিয়ে সতর্ক করার নির্দেশ দিয়েছি। সকলের নমুনা পরীক্ষা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। কোয়ারেন্টিনে বা বাড়িতে আবদ্ধ থাকা লোকজনের খাবারের প্রয়োজন হলে আমরা ব্যবস্থা করবো। উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রোকেয়া বেগম বলেন, শুধু অসচেতনতার জন্য এখানকার গ্রামগুলোতে করোনা ছড়িয়ে পড়ছে। তাদেরকে করোনার ভয়াবহতা ও বাঁচতে হলে করণীয় সম্পর্কে আরও ভালোভাবে অবগত করতে হবে। প্রসঙ্গত সরাইল উপজেলায় এ পর্যন্ত তিন শতাধিক নারী-পুরুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আর হাসপাতাল ও অফিসের হিসাব অনুসারে ফিরোজ ভূঁইয়াসহ মোট মারা গেছেন ৬ জন।
নমুনা দেয়া হলো না হোসনেহুর বেগমের: ওদিকে করোনা পরীক্ষার নমুনা দেয়ার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন বৃদ্ধা হোসনেহুর বেগমের (৭১)। হাসপাতালে প্রবেশ করে সিএনজি চালিত অটোরিকশা থেকে নামার আগেই মারা যান তিনি। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে এ ঘটনা ঘটেছে। হোসনেহুর নোয়াগাঁও ইউনিয়নের ইসলামাবাদ গ্রামের আরজু মিয়ার স্ত্রী। স্থানীয়রা জানায়, হোসনেহুর বেগম বেশকিছু দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। তার মধ্যে করোনার উপসর্গ দেখা গেছে। জেলা সদর হাসপাতালের একজন চিকিৎসক ১০-১২ দিন আগেই তাকে নমুনা পরীক্ষা করতে বলেছিলেন। কিন্তু তিনি বা তার স্বজনরা নমুনা পরীক্ষা করেননি। গত কয়েকদিন ধরে হোসনেহুরের শারীরিক অবস্থা ক্রমেই অবনতির দিকে যেতে থাকে। শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল। অবস্থা বেগতিক দেখে গত বৃহস্পতিবার নমুনা পরীক্ষার জন্য তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্বজনরা। সকাল ১১টার দিকে হাসপাতাল চত্বরে প্রবেশ করে তাকে বহনকারী সিএনজি চালিত অটোরিকশাটি। অটোরিকশা থেকে নামানোর পর দেখেন তিনি অচেতন। ডাক্তার এসে বলেন, তিনি মারা গেছেন। স্বজনরা তার লাশ নিয়ে বাড়ি চলে যান। সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. নোমান মিয়া নমুনা দিতে এসে বৃদ্ধার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, হোসনেহুর বিলম্ব করে ফেলেছেন। তিনি নমুনা সংগ্রহের ফরম ফিলআপ করার আগেই মারা গেছেন।
নমুনা দেয়া হলো না হোসনেহুর বেগমের: ওদিকে করোনা পরীক্ষার নমুনা দেয়ার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন বৃদ্ধা হোসনেহুর বেগমের (৭১)। হাসপাতালে প্রবেশ করে সিএনজি চালিত অটোরিকশা থেকে নামার আগেই মারা যান তিনি। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে এ ঘটনা ঘটেছে। হোসনেহুর নোয়াগাঁও ইউনিয়নের ইসলামাবাদ গ্রামের আরজু মিয়ার স্ত্রী। স্থানীয়রা জানায়, হোসনেহুর বেগম বেশকিছু দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। তার মধ্যে করোনার উপসর্গ দেখা গেছে। জেলা সদর হাসপাতালের একজন চিকিৎসক ১০-১২ দিন আগেই তাকে নমুনা পরীক্ষা করতে বলেছিলেন। কিন্তু তিনি বা তার স্বজনরা নমুনা পরীক্ষা করেননি। গত কয়েকদিন ধরে হোসনেহুরের শারীরিক অবস্থা ক্রমেই অবনতির দিকে যেতে থাকে। শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল। অবস্থা বেগতিক দেখে গত বৃহস্পতিবার নমুনা পরীক্ষার জন্য তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্বজনরা। সকাল ১১টার দিকে হাসপাতাল চত্বরে প্রবেশ করে তাকে বহনকারী সিএনজি চালিত অটোরিকশাটি। অটোরিকশা থেকে নামানোর পর দেখেন তিনি অচেতন। ডাক্তার এসে বলেন, তিনি মারা গেছেন। স্বজনরা তার লাশ নিয়ে বাড়ি চলে যান। সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. নোমান মিয়া নমুনা দিতে এসে বৃদ্ধার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, হোসনেহুর বিলম্ব করে ফেলেছেন। তিনি নমুনা সংগ্রহের ফরম ফিলআপ করার আগেই মারা গেছেন।