শেষের পাতা
মধ্যবিত্তের দীর্ঘশ্বাস
আলতাফ হোসাইন
৩১ জুলাই ২০২১, শনিবার, ৭:৫০ অপরাহ্ন
নওগাঁর আবু হানিফ ১৯ হাজার টাকা বেতনে একটি পোশাক শোরুমে ম্যানেজার পদে চাকরি করতেন। রাজধানীর ভাষানটেক এলাকায় ১২ হাজার টাকা ভাড়ায় একটি বাসায় স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন তিনি। কিন্তু ২ মাস আগে চাকরিটি চলে যায়। লসে পড়ে শোরুমটিই বন্ধ করে দেন মালিক। এরপর অনেক চেষ্টা করেও চাকরির ব্যবস্থা করতে পারেননি। আগে যে বেতন পেতেন তা দিয়ে সংসার চালাতেন কোনোমতে। এরমধ্যে চাকরি চলে যাওয়ায় পড়েন মহাসংকটে। টাকা না থাকায় বাসা ভাড়াও দিতে পারেননি এক মাসের। পরে বাড়িওয়ালার চাপে পড়ে ধার-দেনা করে কোনোমতে ভাড়া পরিশোধ করে ফ্ল্যাট ছেড়ে একটি টিনশেড রুমে উঠেছেন। আপাতত সংসার চলছে ধার-দেনার ওপরেই। আর ভরসা স্ত্রীর টিউশনি করে আয় করা অল্পকিছু টাকা। এ অবস্থায় হতাশায় দিন কাটছে হানিফের। একদিকে আয় নেই, অন্যদিকে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম চড়া। এ অবস্থায় কোনোমতে ডাল-ভাতের ব্যবস্থা করতেই হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। উপায় না পেয়ে তাই কিছুটা কম মূল্যে পণ্য কিনতে দাঁড়িয়েছেন টিসিবির লাইনে। শুধু আবু হানিফ নন, করোনাকালে এমন অনেক মানুষ মহাসংকটে পড়েছেন। অনেকেই কাজ হারিয়ে বেকার হয়েছেন, কেউবা ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে দিয়ে পথে বসেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আয়-রোজগার না থাকলেও প্রাত্যহিক খরচ যেকোনো ভাবেই হোক চালিয়ে নিতে হচ্ছে মধ্যবিত্তদের। ফলে কেউ কেউ নিজেকে জড়াচ্ছেন ঋণের জালে, কেউবা বিকল্প কোনো উপায় না পেয়ে হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছেন। আবার অনেকের চাকরি কিংবা আয়ের বিকল্প পথ থাকলেও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ জীবনযাপনে ব্যয় বাড়ায় তাদের আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের ভারসাম্য থাকছে না। সবমিলিয়ে মহামারিকালে মধ্যবিত্তদের অবস্থা যেন চিরে চ্যাপ্টা। এসব মানুষের নাভিশ্বাস দীর্ঘ থেকে আরও দীর্ঘ হচ্ছে।
আবু হানিফ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, লকডাউনের কারণে শোরুম বন্ধ থাকায় মালিক বড় ধরনের লোকসানের ভয়ে আছেন। আমার মতো অনেকের চাকরি চলে গেছে, বেতন বন্ধ হয়ে আছে। এই মুহূর্তে অন্য কোনো কাজ জোগাড় করাও যাচ্ছে না। হাতে যে নগদ টাকা ছিল তাও শেষ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় কী করে সংসার চলবে সেই চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটে। বর্তমানে বাজারে সবকিছুর দাম আকাশছোঁয়া। আয়-রোজগার না থাকলেও দৈনন্দিন খরচ তো আর থেমে নেই। ধার-দেনা করেই বা আর কতদিন চলা যায়। কারণ আশপাশের সবাই এখন কমবেশি অভাবে রয়েছেন। মধ্যবিত্ত শ্রেণির হওয়ায় কারও কাছে সহযোগিতা চাইতেও ব্যক্তিত্বে লাগে। তাই বাধ্য হয়ে টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়েছি। এখানে কিছুটা কমে মাত্র ২-৩টি পণ্য পাওয়া যায়। ১০০-২০০ টাকা বাঁচানো যায়। এই অভাবের মধ্যে এটাই অনেক কিছু। কিন্তু গত দুইদিন ধরে এখানে টিসিবির ট্রাক আসছে না। সরকার এই সংকটের মধ্যে ভালো একটা ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু ডিলাররা ঠিকমতো পণ্য বিতরণ করে না। আমরা তো ফ্রি নিতে আসিনি। টাকা দিয়ে কিনে নেবো। কিন্তু শোনা যাচ্ছে যে ডিলাররা সাধারণ ক্রেতাদের পণ্য না দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করছে।
মিরপুর ১৩ নম্বরের বাসিন্দা আবুল কাশেম। তিনিও দাঁড়িয়েছিলেন টিসিবির লাইনে। দীর্ঘদিন থেকেছেন সৌদি আরবে। একটা সময় ভালোই চলতেন। কষ্ট করে দুই ছেলেকে পড়াশোনাও করিয়েছেন। কিন্তু তাদের কোনো চাকরির ব্যবস্থা হয়নি। তাই সংসারের ভার তাকেই সামলাতে হচ্ছে। ষাটোর্ধ্ব এই ব্যক্তি বলেন, সারা জীবন অনেক কষ্ট করে দুই ছেলেকে পড়ালেখা করিয়েছি। একজন অনার্স মাস্টার্স করেছে আরেকজন অনার্সে পড়ছিল। কিন্তু করোনায় সব থেমে আছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, চাকরির পরীক্ষা বন্ধ। ছেলে-সন্তানরা হতাশার মধ্যে পড়েছে। বাবা হিসেবে আমি আর কতো করবো? অন্তত তাদেরকে লেখাপড়া শিখিয়েছি। এখন যে পরিস্থিতি যাচ্ছে, কবে সন্তানদের চাকরি হবে, কবেই বা একটু অভাব দূর হবে- ভেবে পাই না। ঘরে খাবার নাই। কাছে টাকাও তেমন নাই। তাই বাধ্য হয়ে টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়েছি।
মাত্র ৬ মাসের শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা ধরে টিসিবির ট্রাকের জন্য অপেক্ষা করছিলেন সুমনা আক্তার। বলেন, আমার স্বামী আগে একটা কম বেতনে চাকরি করতো। এখন বেকার। চাকরি খুঁইজা না পাইয়া বাধ্য হইয়া এখন কাঁচা তরকারির ব্যবসা শুরু করছে। তাও খুব একটা লাভ হয় না। সংসার চালাইতে খুবই কষ্ট হইতাছে। আর আমি বাসাতেই থাকি, তাই ভাবলাম এইখানে টিসিবির পণ্য বেচে। যদি কিছু কম টাকায় নিতে পারি- এই ভেবে আসছি। কিন্তু আমি গত দুইদিন ধইরা আসতাছি কোনো গাড়ি দেখলাম না। সবাই দেখি অপেক্ষা করে তাই আমিও দাঁড়ায় থাকি।
লামিয়া ফ্যাশন নামে একটি গার্মেন্ট কারখানায় চাকরি করেন নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, লকডাউনের জন্য কারখানা বন্ধ। কিন্তু আমগো ২ মাসের বেতন বাকি আছিল। বেতন না দিয়া হুট কইরা বন্ধ কইরা দিলো। এখন আমরা খামু কি? সরকার করোনার লাইগা সব বন্ধ করলো কিন্তু আমগো পেট তো বন্ধ হয় না। আমগো খাওন লাগে। আমগো খাওয়াইবো কে? আমাদের মতো গরিব মানুষের যে জীবন চালাইতে কি সংগ্রাম করা লাগে তারা কেমনে বুঝবো।
মিরপুর ১৪ নম্বরের বাসিন্দা গার্মেন্ট শ্রমিক নাসিমা বেগম বলেন, এতদিন যাই বেতন পাইতাম কোনোমতে চলতাম। এখন জিনিসপত্রের দাম সব বেশি। বাসা ভাড়া দিয়ে বাজার খরচ দিয়ে ঠিকমতো চলতে পারি না। সবকিছুর দাম বাড়তেই আছে। কিন্তু আমগো বেতন তো আর বাড়ে না। যা বেতন পাই সব বাজার আর বাসা ভাড়া দিতেই চলে যায়। এ ছাড়া এই এলাকার আক্কাস আলী, নজরুল ইসলামসহ অন্তত ১০-১৫ জনের সঙ্গে কথা হয়। এদের মধ্যে কেউ চাকরি করতেন কেউ বা ব্যবসা করতেন কিন্তু আপাতত বন্ধ আছে। করোনা তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা পাল্টে দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আয়-রোজগার না থাকলেও প্রাত্যহিক খরচ যেকোনো ভাবেই হোক চালিয়ে নিতে হচ্ছে মধ্যবিত্তদের। ফলে কেউ কেউ নিজেকে জড়াচ্ছেন ঋণের জালে, কেউবা বিকল্প কোনো উপায় না পেয়ে হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছেন। আবার অনেকের চাকরি কিংবা আয়ের বিকল্প পথ থাকলেও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ জীবনযাপনে ব্যয় বাড়ায় তাদের আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের ভারসাম্য থাকছে না। সবমিলিয়ে মহামারিকালে মধ্যবিত্তদের অবস্থা যেন চিরে চ্যাপ্টা। এসব মানুষের নাভিশ্বাস দীর্ঘ থেকে আরও দীর্ঘ হচ্ছে।
আবু হানিফ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, লকডাউনের কারণে শোরুম বন্ধ থাকায় মালিক বড় ধরনের লোকসানের ভয়ে আছেন। আমার মতো অনেকের চাকরি চলে গেছে, বেতন বন্ধ হয়ে আছে। এই মুহূর্তে অন্য কোনো কাজ জোগাড় করাও যাচ্ছে না। হাতে যে নগদ টাকা ছিল তাও শেষ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় কী করে সংসার চলবে সেই চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটে। বর্তমানে বাজারে সবকিছুর দাম আকাশছোঁয়া। আয়-রোজগার না থাকলেও দৈনন্দিন খরচ তো আর থেমে নেই। ধার-দেনা করেই বা আর কতদিন চলা যায়। কারণ আশপাশের সবাই এখন কমবেশি অভাবে রয়েছেন। মধ্যবিত্ত শ্রেণির হওয়ায় কারও কাছে সহযোগিতা চাইতেও ব্যক্তিত্বে লাগে। তাই বাধ্য হয়ে টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়েছি। এখানে কিছুটা কমে মাত্র ২-৩টি পণ্য পাওয়া যায়। ১০০-২০০ টাকা বাঁচানো যায়। এই অভাবের মধ্যে এটাই অনেক কিছু। কিন্তু গত দুইদিন ধরে এখানে টিসিবির ট্রাক আসছে না। সরকার এই সংকটের মধ্যে ভালো একটা ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু ডিলাররা ঠিকমতো পণ্য বিতরণ করে না। আমরা তো ফ্রি নিতে আসিনি। টাকা দিয়ে কিনে নেবো। কিন্তু শোনা যাচ্ছে যে ডিলাররা সাধারণ ক্রেতাদের পণ্য না দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করছে।
মিরপুর ১৩ নম্বরের বাসিন্দা আবুল কাশেম। তিনিও দাঁড়িয়েছিলেন টিসিবির লাইনে। দীর্ঘদিন থেকেছেন সৌদি আরবে। একটা সময় ভালোই চলতেন। কষ্ট করে দুই ছেলেকে পড়াশোনাও করিয়েছেন। কিন্তু তাদের কোনো চাকরির ব্যবস্থা হয়নি। তাই সংসারের ভার তাকেই সামলাতে হচ্ছে। ষাটোর্ধ্ব এই ব্যক্তি বলেন, সারা জীবন অনেক কষ্ট করে দুই ছেলেকে পড়ালেখা করিয়েছি। একজন অনার্স মাস্টার্স করেছে আরেকজন অনার্সে পড়ছিল। কিন্তু করোনায় সব থেমে আছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, চাকরির পরীক্ষা বন্ধ। ছেলে-সন্তানরা হতাশার মধ্যে পড়েছে। বাবা হিসেবে আমি আর কতো করবো? অন্তত তাদেরকে লেখাপড়া শিখিয়েছি। এখন যে পরিস্থিতি যাচ্ছে, কবে সন্তানদের চাকরি হবে, কবেই বা একটু অভাব দূর হবে- ভেবে পাই না। ঘরে খাবার নাই। কাছে টাকাও তেমন নাই। তাই বাধ্য হয়ে টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়েছি।
মাত্র ৬ মাসের শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা ধরে টিসিবির ট্রাকের জন্য অপেক্ষা করছিলেন সুমনা আক্তার। বলেন, আমার স্বামী আগে একটা কম বেতনে চাকরি করতো। এখন বেকার। চাকরি খুঁইজা না পাইয়া বাধ্য হইয়া এখন কাঁচা তরকারির ব্যবসা শুরু করছে। তাও খুব একটা লাভ হয় না। সংসার চালাইতে খুবই কষ্ট হইতাছে। আর আমি বাসাতেই থাকি, তাই ভাবলাম এইখানে টিসিবির পণ্য বেচে। যদি কিছু কম টাকায় নিতে পারি- এই ভেবে আসছি। কিন্তু আমি গত দুইদিন ধইরা আসতাছি কোনো গাড়ি দেখলাম না। সবাই দেখি অপেক্ষা করে তাই আমিও দাঁড়ায় থাকি।
লামিয়া ফ্যাশন নামে একটি গার্মেন্ট কারখানায় চাকরি করেন নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, লকডাউনের জন্য কারখানা বন্ধ। কিন্তু আমগো ২ মাসের বেতন বাকি আছিল। বেতন না দিয়া হুট কইরা বন্ধ কইরা দিলো। এখন আমরা খামু কি? সরকার করোনার লাইগা সব বন্ধ করলো কিন্তু আমগো পেট তো বন্ধ হয় না। আমগো খাওন লাগে। আমগো খাওয়াইবো কে? আমাদের মতো গরিব মানুষের যে জীবন চালাইতে কি সংগ্রাম করা লাগে তারা কেমনে বুঝবো।
মিরপুর ১৪ নম্বরের বাসিন্দা গার্মেন্ট শ্রমিক নাসিমা বেগম বলেন, এতদিন যাই বেতন পাইতাম কোনোমতে চলতাম। এখন জিনিসপত্রের দাম সব বেশি। বাসা ভাড়া দিয়ে বাজার খরচ দিয়ে ঠিকমতো চলতে পারি না। সবকিছুর দাম বাড়তেই আছে। কিন্তু আমগো বেতন তো আর বাড়ে না। যা বেতন পাই সব বাজার আর বাসা ভাড়া দিতেই চলে যায়। এ ছাড়া এই এলাকার আক্কাস আলী, নজরুল ইসলামসহ অন্তত ১০-১৫ জনের সঙ্গে কথা হয়। এদের মধ্যে কেউ চাকরি করতেন কেউ বা ব্যবসা করতেন কিন্তু আপাতত বন্ধ আছে। করোনা তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা পাল্টে দিয়েছে।