দেশ বিদেশ

সিলেটে লাশ নিয়ে ব্যস্ত স্বেচ্ছাসেবকরা

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

৩১ জুলাই ২০২১, শনিবার, ৭:৩৫ অপরাহ্ন

ঈদের আগের রাত। সবাই ব্যস্ত ঈদ নিয়ে। সিলেটের রাগীব-রাবেয়া হাসপাতালে করোনায় মারা গেলেন এক রোগী। করোনায় মৃত্যু; কাছে যাচ্ছেন না স্বজনরা। এগিয়ে এলেন এক দল স্বেচ্ছাসেবক। নিজ উদ্যোগে তারা লাশ নিয়ে গোসল করালেন। এরপর কাফন পরিয়ে জানাজার পর ওসমানীনগরের তাজপুরে লাশ দাফনও করে আসেন। এভাবেই প্রতিদিন লাশের পেছনে ছুটতে হচ্ছে সিলেটের ওই স্বেচ্ছাসেবক টিমের ৭ সদস্যকে। ওরা হচ্ছেন সিলেটের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শেইড’র স্বেচ্ছাসেবক। তারা জানিয়েছেন- ‘সিলেটে করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার কারণে এখন আর সময় মেলে না। প্রতিদিনই লাশের জন্য ৭-৮টি কল আসে। কিন্তু সব কলে যাওয়া সম্ভব হয় না। এরপরও তারা ৩-৪টি লাশ রিসিভ করতে পারেন। দিনে ও রাতে তারা ব্যস্ত থাকেন রোগী এবং লাশ নিয়েই।’ করোনাকালে সিলেটে বেড়েই চলেছে লাশের মিছিল। করোনায় মারা গেলে অনেক সময় রোগীর স্বজনরাও কাছে যান না। অনেকেই লাশ দাফন-কাফনে ডাকেন স্বেচ্ছাসেবকদের। এ কারণে স্বেচ্ছাসেবকদের দম ফেলানোর ফুসরত নেই। স্বেচ্ছাসেবক তারিক বিন হাবীব তাদের বর্তমান ব্যস্ততা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাসে লিখেছেন- ‘দিনের শুরু হয় এভাবেই। রাত শেষ হয় এভাবেই। সকাল, দুপুর, মধ্যরাত কিংবা শেষ রাত। জামেয়া মাদানিয়া আপনার খেদমতে সর্বদা নিয়োজিত। ইদানিং লাশের সংখ্যা বেড়ে গেছে। চারিদিকে যেনো মৃত্যুর মিছিল। আল্লাহ সবাইকে হেফাজতে রাখুন। সবাই সুস্থ থাকুন, নিরাপদে থাকুন।’ স্ট্যাটাসে তিনি কাজিরবাজার জামেয়া মাদানিয়ার লাশ ঘরের সামনে একটি এম্বুলেন্সের ছবিও পোস্ট করেন। সিলেটের কাজিরবাজার মাদ্রাসা পরিচিত জামেয়া মাদানিয়া নামে। এই মাদ্রাসার লাশঘরটি শুরু থেকেই করোনা রোগীদের গোসলের জন্য উন্মুক্ত। আছে স্বেচ্ছাসেবকরা। করোনায় যখন সবার দরোজা বন্ধ ছিল তখন খোলা ছিল কাজিরবাজার মাদ্রাসার লাশঘর। ভয়কে জয় করে মানবিকতার ডাকে সাড়া দিয়ে ওই মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ করোনায় মারা যাওয়া লাশের গোসল করান। মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা সামিউর রহমান মুছা মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ‘আমরা এখন পর্যন্ত ২৫ জনের মতো করোনায় মারা যাওয়া লাশের গোসল করিয়েছি। আমাদের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে লাশের গোসল করান। গত কয়েক দিনে লাশের সংখ্যা বেড়ে গেছে। গতকাল বিকালে একজনের ও এর আগের দিন বৃহস্পতিবার রাতে করোনায় মারা যাওয়া দুই লাশের গোসল করানো হয় বলে জানান তিনি।’ করোনায় সিলেট সিটি করপোরেশন পরিচালিত হযরত মানিকপীর (রহ.) গোরস্থানে প্রতিদিন করোনা আক্রান্ত লাশ যাচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব লাশের জানাজা ও দাফন করা হয়। করোনায় মৃত্যুবরণ করলে দূরবর্তী স্থানের অনেকের মরদেহ বাড়িতে না নিয়ে দাফন করা হয় ওই গোরস্থানে। গোরস্থানের সুপার মো. রজব আলী জানিয়েছেন- জুলাই মাসে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক করোনা রোগী দাফন করা হয়েছে এ গোরস্থানে। সংখ্যা হবে ৬০-৭০টি। গতকালও করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী ৩ জনের মরদেহ দাফন করা হয়েছে। এর বাইরে তারা প্রতিদিন ৩-৪ জন করোনা আক্রান্ত রোগীর গোসল করিয়ে থাকেন। করোনা আক্রান্ত হয়ে বেশিরভাগ মারা যাওয়া মহিলাদের লাশ তারা গত ৩০ দিনে দাফন করেছেন। তাদের নিজেদের স্বেচ্ছাসেবক ও গোর খোদকরা বর্তমানে লাশ নিয়ে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন বলেও জানান। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শেইড ট্রাস্টের অন্যতম ট্রাস্টি ও পরিচালক মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ‘করোনাকালে কখনো কখনো তাদের নিষ্ঠুর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়। করোনায় মারা গেলে স্বজনরা কেউ কাছে আসে না। লাশটি ছুয়েও দেখে না। কিন্তু তাদের কার্যক্রম থেমে নেই। মানবিকতার ডাকে সাড়া দিয়ে তারা এই ট্রাস্ট গঠন করে সিলেটের মানুষের পাশে রয়েছেন। তারা লাশ দাফন-কাফনই নয়, অক্সিজেন সেবা, রোগী পরিবহন করছেন। তাদের নিজস্ব দুটি এম্বুলেন্স রয়েছে। বর্তমান সময়ে অনেক রোগীই তাদের গাড়িতে অক্সিজেন সুবিধা নিয়ে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে আইসিইউ বেডের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন।’ শেইডের স্বেচ্ছাসেবী মো. জাহিদ আহমদ জানিয়েছেন, ‘করোনার প্রথম পর্যায়ে চাহিদা কম থাকায় তারা রাতে কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এখন দিন-রাত তাদের কার্যক্রম চলছে। মৃত ব্যক্তিদের দাফন-কাফনের তাদের ৭ সদস্যর স্বেচ্ছাসেবক টিম সব সময়ই ব্যস্ত থাকেন। আবার কেউ কেউ অক্সিজেন নিয়ে রোগীর জীবন বাঁচাতে ছুটে যাচ্ছেন। করোনাকালের এমন অভিজ্ঞতা সত্যিই বেদনাদায়ক বলে জানান জাহিদ।’
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status