বাংলারজমিন

রাঙ্গাবালীতে প্রভাবশালীদের মাছের ঘেরে পানি নিষ্কাশন বন্ধ

মাহমুদ হাসান রাজিব, রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) থেকে

৩১ জুলাই ২০২১, শনিবার, ৬:৩৫ অপরাহ্ন

রাঙ্গাবালীতে চারদিনের টানা বর্ষণে তলিয়ে গেছে আমনের বীজতলা। কৃষি জমির কোথাও হাঁটু সমান, কোথাও কোমর সমান পানি জমে আছে। বাড়িঘরের চারপাশ পানিতে ডুবে আছে। গতকাল সরজমিন রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের উত্তর চরমোন্তাজ, মধ্য চরমোন্তাজ, চরমণ্ডল, চরলক্ষ্মী, পূর্ব চরমোন্তাজ গ্রামে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। এত হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ২ হাজার ৫৯৪ হেক্টর আমন বীজতলা আবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে ২ হাজার হেক্টর পানির নিচে রয়েছে। এ ছাড়া ৮৪০ হেক্টর আউশ আবাদ করা হয়েছে। এর ৩শ’ হেক্টর রয়েছে পানির নিচে, উফশী ১ হাজার ৩শ’ ৪০ হেক্টর এরমধ্যে পানির নিচে রয়েছে ১ হাজার ৭২ হেক্টর, সবজি ৪৫০ হেক্টর এরমধ্যে পানির নিচে ১৮০ হেক্টর। এদিকে, চরমোন্তাজ ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মফিজুল ইসলাম বলেন,  ‘চরমোন্তাজ ইউনিয়নে গ্রামে ৪৫২ হেক্টর জমিতে আমনের বীজতলা করা হয়েছে এর ৮০ শতাংশ পানির নিচে নিমজ্জিত, উফশী ৩২০ এরমধ্যে ২৫৬ হেক্টর পানির নিচে এবং স্থানীয় ১৩২ এরমধ্যে ১০৫ হেক্টর পানির নিচে নিমজ্জিত রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বলা যাচ্ছে না। উত্তর চরমোন্তাজ গ্রামের কৃষক শহিদুল খান বলেন, ‘বৃষ্টির পানিতে আমার ক্ষ্যাত (ক্ষেত), বাড়িঘর তলাইয়া রইছে। বীজতলা করতে পারতাছি না। এইবার মনে হয় আমার ৫ একর জমিই খিল (অনাবাদি) থাকবে।’ একই গ্রামের বাসিন্দা রাশেদ খান বলেন, ‘পানি সরানোর ব্যবস্থা না করলে লাগাতার বৃষ্টিতে পুরা গ্রাম তলাইয়া যাইবে। এখনি ঘরের চাইরপাশে পানি। ঘর থেকে বাইর হইতে পারি না।’ কৃষক আনসার মোল্লা বলেন, ‘ভাবছিলাম ৭ একর জমিতে এইবার আমন দিমু (দিব)। কিন্তু পানির লাইগ্যা (জন্য) পারমু না মনে হয়।’ চরগঙ্গার কৃষকরা জানায়, বর্ষা মৌসুমে কৃষি জমির বৃষ্টি বর্ষার পানি খাল-নালার মাধ্যমে চরগঙ্গা স্লুইসগেট দিয়ে সরে যেতো। কিন্তু কৃষি জমি ঘেঁষে বয়ে যাওয়া সরকারি  খাল-নালা ১০ বছর আগেই দখল করে অন্তত ১০-১৫টি মাছের ঘের করেছে প্রভাবশালীরা। ফলে কৃষি জমিতে বৃষ্টি বর্ষায় জলাবদ্ধতা দেখা দিলেও স্লুইসগেট দিয়ে পানি নিষ্কাশনে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে পানি নামার বিকল্প হিসেবে থাকা একমাত্র কালভার্টটিও দুই বছর আগে ভেঙে গেছে। এই কারণে কৃষকদের দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেছে। স্থানীয় রহমান দফাদার ও জিয়া ফরাজি বলেন, ‘সব জায়গায় ঘের। পানি নামার সুযোগ নেই। খাল-নালা বাঁধ দিয়ে ঘের করার কারণে পানি সরছে না। ঘেরে মাছ চাষ করে কিছু মাথাওয়ালা প্রভাবশালীরা লাভবান হয়। কিন্তু চাষবাস না করে শত শত কৃষক অভাবে পড়ে।’ রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাশফাকুর রহমান বলেন, কৃষি কর্মকর্তাকে বলে দিয়েছি কোথাও যদি কোনো বীজতলা বা পানি নিষ্কাশনে সমস্যা হচ্ছে তাৎক্ষণিক আমাকে জানাবেন। আশা করি কৃষকের কোনো ধরনের অসুবিধা হবে না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status