বাংলারজমিন

মোরেলগঞ্জে ভেসে গেছে ৬ কোটি টাকার মাছ, ক্ষতিগ্রস্ত বীজতলা-বিদ্যুৎ লাইন

মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) প্রতিনিধি

৩১ জুলাই ২০২১, শনিবার, ৬:৩২ অপরাহ্ন

সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ৩ দিনের টানা ভারি বর্ষণ ও ঝড়ো হাওয়ায় বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে পল্লী বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ে ২১ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পানির নিচে নিমজ্জিত ৮ হাজার মৎস্য ঘের। এতে চাষিদের প্রায় ৬ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। লণ্ডভণ্ড গাছপালা বিধ্বস্ত অর্ধশতাধিক কাঁচা-পাকা বাড়িঘর। ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে, বসতঘরে চাপা পড়ে আহত হয়েছে দু’জন। ১৫০ হেক্টর আমন বীজতলার ক্ষতির সম্ভাবনা। প্রভাবশালীদের খালে বাঁধের কারণে পানি চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নসহ পৌর শহরে সোমবার থেকে একটানা ভারি বর্ষণে জনজীবন বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে। বুধবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে বৃহস্পবিার ৫টা পর্যন্ত গোটা শহর ছিল বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন।
পল্লী বিদ্যুতের ৩৩ কেভি ৮-১০টি বৈদ্যতিক খুঁটি পাঁচগাও আমতলী, সানকিভাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকায় গাছ পড়ে খুঁটি ভেঙে পড়েছে। মোরেলগঞ্জ শহরে সাবমেরিন ক্যাবলের মাথা ভেঙে বিধ্বস্ত হয়েছে। রাত ২টা থেকে ৬টা পর্যন্ত মেরামতের কাজ সম্পন্ন করেছে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ।
এছাড়াও বাগেরহাট গ্রীড থেকে সানকিভাঙ্গা পর্যন্ত লাইন চেকিং কাজ চলমান রেখেছে বলে জানিয়েছেন ডিজিএম এবিএম মিজানুর রহমান। নদীর তীরবর্তী বহরবুনিয়া, হোগলাবুনিয়া, পঞ্চকরণ, তেলিগাতি, বারইখালী, বলইবুনিয়া, মোরেলগঞ্জ সদর, নিশানবাড়িয়া ও জিউধরায় ভারি বর্ষণে অতিরিক্ত পানিতে ৮ হাজার মৎস্য ঘের পানির নিচে তলিয়ে গেছে। মৎস্য ঘেরের বেড়ি ধসে গিয়ে বেরিয়ে গেছে বাগদা, গলদা, বিভিন্ন প্রজাতির সাদামাছ। এতে ঘের ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। লণ্ডভণ্ড হয়েছে গাছপালা, গাছ পড়ে অর্ধশতাধিক কাঁচা-পাকা ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত জিউধরা ইউনিয়নের কাঁকড়াতলি, বহরবুনিয়ার উত্তর ফুলহাতা ও গোলবুনিয়া গ্রামের ৩টি বসতঘর। ঘরচাপা পড়ে গুরুত্বর আহত হয়েছেন ইমাম শেখ (৫৫) ও লোকমান শিকদার (২৮) নামের দুই কৃষক।  পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জিউধরার ২৯ গ্রাম, বহরবুনিয়ার ৬, পঞ্চকরণের ২,  তেলিগাতির ২, খাউলিয়ায় ১৬, বারইখালীর ৮, মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ৩ গ্রামসহ শতাধিক গ্রামের ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। অবকাঠামোরও ক্ষতি হয়েছে ৫৭ লাখ টাকার। সব মিলিয়ে টাকার অঙ্কে চাষিদের ৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি বলে দাবি চিংড়ি চাষিদের।
ওয়াপদা বেড়িবাঁধ এলাকায় ১৫০ হেক্টর জমিতে আমন বীজতলা পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় প্রভাশালীরা সরকারি রেকর্ডীয় খাল বন্ধ করে পানি চলাচল বাধাগ্রস্ত করছে। স্লুইসগেটগুলো খোলা থাকলেও জলাবদ্ধ পানি বের হতে এক সপ্তাহেরও বেশি সময়  লেগে যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানবৃন্দ জানিয়েছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ জিউধরা, বহরবুনিয়া বটার খাল, ডেনাতলা, উত্তর ফুলহাতা মাঝের খাল, নোনা খাল, শনিরজোর, কাজি মার্কেটের খাল, ঘষিয়াখালী কবিরাজবাড়ি খালসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে সরকারি রেকর্ডীয় খালগুলোতে বাঁধ সৃষ্টি করায় পানি চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। এ বাঁধগুলো অতিদ্রুত অপসারণ করে জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন। এ সম্পর্কে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সিফাত আল মারুফ বলেন, ৩ দিনের ভারি বর্ষণে আমন বীজতলায় স্থায়ীভাবে পানি জমে থাকলে ১৫০ হেক্টর বীজতলার ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিনয় কুমার রায় বলেন, মৎস্য অধ্যুষিত ইউনিয়নগুলোতে খোঁজ নিয়ে ক্ষতি নিরুপণ করা হচ্ছে। প্রায় ৫ হাজার মৎস্য ঘের তলিয়ে গেছে বলে প্রাথমিকভাবে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।
পিরোজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মোরেলগঞ্জ জোনালের ডিজিএম এবিএম মিজানুর রহমান বলেন, ৩৩ কেভি বিদ্যুতের বিচ্ছিন্ন এলাকায় গাছ পড়ে যাওয়া তার থেকে দ্রুত গাছ অপসারণ করা হচ্ছে। বিকাল ৫টার মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পারবে বলে জানিয়েছেন।  এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভারি বর্ষণ ও জড়ো হাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় খোঁজখবর নিয়ে তালিকা করার জন্য ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ক্ষতির নিরুপণ করে জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হবে। বরাদ্দ পেলে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status