প্রথম পাতা

মেহেরপুরের দুই গ্রামে ৪৫ জনের মৃত্যু

গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি

৩০ জুলাই ২০২১, শুক্রবার, ৬:০৮ অপরাহ্ন

গ্রামের কবরস্থানে এক সারিতে ২৪ জনের কবর। বাঁশের রেলিং দিয়ে ঘেরা এসব কবরে চির সমাহিত গ্রামের বিভিন্ন বয়সী মানুষ। ভোরের দিকে মসজিদের মাইকে ভেসে আসা মৃত্যুর খবর আসে প্রায়ই। কয়েকদিনের ব্যবধানে এতো মানুষের মৃত্যুর ঘটনা গ্রামের ইতিহাসে এই প্রথম। তাই ভীতি ছড়িয়েছে সবার মনে। এমন ভয়াবহ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার জোড়পুকুরিয়া গ্রামে। এ ছাড়াও একই উপজেলার গাড়াডোব গ্রামে গেল দুই মাসে মৃত্যু হয়েছে ২১ জনের। এই দুই গ্রামেমারা যাওয়াদের কয়েকজন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। কারও কারও করোনার উপসর্গ ছিল। আবার কারও মৃত্যু হয়েছে বার্ধক্যজনিত কারণে। তবে এই দুই গ্রামের মানুষেরা বলছেন, সাধারণভাবে এতো মানুষের মৃত্যু কখনো হয়নি। তাদের ধারণা, করোনা সংক্রমণের কারণেই এতো প্রাণহানি।
স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, শুধু গাড়ডোব গ্রামে করোনায় ৪ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া জোড়পুকুরিয়ায় যে ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে তারা কীভাবে মারা গেছেন তা জানতে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে মেহেরপুরের সিভিল সার্জন ডা. নাসির উদ্দীন জানান, গাংনী উপজেলার গাড়াডোব গ্রামের মৃত ২১ জনের মধ্যে ৪ জন কোভিড পজেটিভে মারা গেছেন। কিছু করোনা উপসর্গ নিয়ে আর অন্যরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। অপর গ্রাম জোড়পুকুরিয়ার ২৪ ব্যক্তি কীভাবে মারা গেলেন সেটি জানার জন্য আগামী শনিবার একটি টিম পাঠানো হবে। তিনি বলেন, গ্রামের মানুষ সচেতন নয়। তারা কোভিডকে গোপনে রাখতে হাসপাতালে আসতে চান না। যখন কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তখন তারা হাসপাতালে আসেন।
জোড়পুকুরিয়া গ্রামের চিকিৎসক লিটসন হোসেন জানান, প্রতিদিন অন্তত ৩০ জন মানুষ তার কাছে চিকিৎসার জন্য আসেন। এর মধ্যে বেশিরভাগই করোনা উপসর্গ নিয়ে। জোর করেও তাদেরকে করোনা পরীক্ষা করানো যাচ্ছে না বলে অসহায়ত্ব প্রকাশ করলেন এই পল্লী চিকিৎসক।
তিনি বলেন, জোড়পুকুরিয়া ও আশেপাশের গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়ির মানুষেরই করোনা উপসর্গ আছে। পরীক্ষা করলে এদের মধ্যে ৮০ ভাগের ওপরে পজেটিভ হবে।
জোড়পুকুরিয়া গ্রাম সূত্রে জানা গেছে, গেল ২ মাসে যে ২৪ জন মৃত্যুবরণ করেছেন এদের মধ্যে ১ জন করোনা আক্রান্ত ছিলেন। বাকিদের কেউ করোনা পরীক্ষা করেননি। পরীক্ষা করলে হয়তো এদের বেশিরভাগের করোনা শনাক্ত হতো। এতো কিছুর পরও গ্রামের মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানা ও করোনা পরীক্ষার বিষয়ে নানা অজুহাত দেখিয়ে বিরত থাকছেন।
এদিকে জোড়পুকুরিয়া গ্রামের মতো একই চিত্র গাড়াডোব গ্রামের। গাড়াডোব গ্রামে মৃত্যুবরণকারী ২১ জনের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত ছিলেন ৪ জন। বাকি যাদের মৃত্যু হয়েছে কারো পরীক্ষা করা হয়নি।
গাড়াডোব গ্রামের কয়েকজন জানান, করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও করোনা পরীক্ষা নিয়ে নানা ধরনের গুজবে ডুবে আছে গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ।
সর্দি, জ্বর বা শ্বাস কষ্টে করোনার অন্য উপসর্গ থাকা কেউ যখন অক্সিজেন সংকটে পড়ছেন তখন তাকে বাধ্য হয়ে হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। অপরদিকে, যারা বিভিন্ন রোগে ভুগছেন তাদেরকেই কেবল চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বাকিরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status