বাংলারজমিন

চাঁদপুরে উপজেলায় করোনা ওয়ার্ড খালি: সদরে ত্রাহি অবস্থা

চাঁদপুর প্রতিনিধি

৩০ জুলাই ২০২১, শুক্রবার, ১২:২৮ অপরাহ্ন

মহামারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবার জন্য চাঁদপুরের প্রত্যেক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ড থাকা সত্ত্বেও চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালেই অতি মাত্রায় ভিড় করছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ২০ করে শয্যা নিয়ে করা করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডের অধিকাংশ খালি পড়ে আছে। অথচ চাঁদপুর ২৫০ শয্যার সদর হাসপাতালের সকল শয্যা ছাড়িয়ে আরো অনেক রোগী ভর্তি হয়ে ফ্লোরে অবস্থান করছেন। বাড়তি রোগীর চাপ সামাল দিতে গিয়ে রোগীদের পাশাপাশি ডাক্তার-নার্সদেরও ত্রাহি অবস্থা।
জানা গেছে, চাঁদপুরে করোনা ভাইরাস প্রভাবের প্রথম থেকেই চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালসহ প্রত্যেকটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইসোলেশন ওয়ার্ড স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে শুধুমাত্র হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০টি বেড ব্যতীত অন্যান্য উপজেলাগুলোতে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ২০টি করে বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
চাঁদপুরে মহামারী করোনাভাইরাসে রোগী শনাক্তের প্রথম থেকে চাঁদপুরের এই হাসপাতালটির তিনতলা বিশিষ্ট একটি ভবনে আইসোলেশন ওয়ার্ডের জন্য নির্ধারণ করা হয়। সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ার সাথে সাথে আইসোলেশন ওয়ার্ডে বেড সংকট দেখা দেয়ায় ওই ভবন থেকে আইসোলেশন ওয়ার্ড বেড বাড়িয়ে হাসপাতালের মূল ভবনের দ্বিতীয় তলায় পুরুষ ওয়ার্ডকে আইসোলেশন ওয়ার্ড হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এর পরবর্তীতে করোনার ২য় ধাপে চাঁদপুরে করোনায় আক্রান্ত এবং উপসর্গ রোগীর সংখ্যা পর্যায়ক্রমে বাড়তে থাকায় হাসপাতালের ২য় তলার ৬০ বেডের আইসোলেশন ওয়ার্ড করা হয়। বেড সংকট দেখা দেয়ায় সেটিকে আরো বাড়িয়ে ৩য় তলার শিশু এবং পুরুষ ওয়ার্ডকেও আইসোলেশনে ওয়ার্ড স্থাপন করা হয়। সব মিলিয়ে সদর হাসপাতালে এখন করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডের বেড সংখ্যা ১৫০ টি।
চাঁদপুরে হঠাৎ করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়তে থাকায় দেখা গেছে আইসোলেশন ওয়ার্ডে এতগুলো বেড বাড়ানোর পরেও রোগীদের চাপে আইসোলেশন ওয়ার্ডের বাইরেও বারান্দায় রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। এর মূল কারণ হচ্ছে জেলার সমস্ত করোনায় আক্রান্ত এবং উপসর্গের রোগীরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লোক্সগুলোতে ভর্তি না হয়ে চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালের আইসোলেশনেই ভর্তি হচ্ছেন। তারা উন্নত ও ভালো চিকিৎসা পাওয়ার আশায় সদর চলে আসছে। বিশেষ করে হাই ফ্লো অক্সিজেন সেবার আশায়। অথচ সদরে অক্সিজেন সংকট এখন চরমে। আর হাই ফ্লো অক্সিজেনসমৃদ্ধ আসন সংখ্যাও সীমিত।
জানা গেছে, চাঁদপুরে করোনা সংক্রমণের প্রথম থেকেই সরকারি জেনারেল হাসপাতাল ছাড়াও ফরিদগঞ্জ উপজেলায় আইসোলেশন ওয়ার্ডে ২০টি বেড, শাহরাস্তি ২০টি, কচুয়া ২০টি, হাজিগঞ্জ ২০টি মতলব উত্তর ২০টি, মতলব দক্ষিণে ২০টি, হাইমচরে ১০ টি বেডসহ ৭ উপজেলায় সর্বমোট ১৩০টি বেড প্রস্তুত রয়েছে।
গত ২৭ জুলাই পর্যন্ত শুধুমাত্র শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ১১ জন রোগী ভর্তি ছিলো বলে জানা গেছে। এর মধ্যে কচুয়া এবং শাহরাস্তি উপজেলায় কয়েকজন রোগী প্রথমে ভর্তি থাকলেও দু’-একদিন পরেই তারা স্বেচ্ছায় ওয়ার্ড ত্যাগ করে বাড়িতে চলে গেছেন বলে জানা গেছে। উপজেলাগুলোতে বেড নির্ধারিত করা থাকলেও সকল বরোনা রোগীরা ভালো সেবা পাওয়ার চিন্তায় চাঁদপুর সদরে এসেই চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন।
চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) এবং করোনা ফোকাল পার্সন ডাক্তার সুজাউদ্দৌলা রুবেল বলেন, প্রত্যেক উপজেলার রোগীরাই মনে করেন যে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার মান অনেক ভালো। অথচ বাড়তি ভিড়ের কারণে এখন এই হাসপাতালে রোগীদের সেবা দেওয়া কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে যাচ্ছে। তবুও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, অনেকে ভাবেন এখানে যে সেবাটা তারা পাবে সেটি হয়তো উপজেলা গুলোতে পাবেনা। সে চিন্তা থেকেই তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি না হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। যার কারণে হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে অনেক চাপ দেখা দিয়েছে। আমি রোগীদের উদ্দেশ্যে বলবো, সদর হাসপাতালের মতোই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও ভালো মানের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। তাই আপনারা উপজেলার লোকজন যদি সেখানে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সেবা নেন তাহলে জেলা সদর হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে অনেকটা চাপ কমে আসবে।
চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, চাঁদপুর সদর হাসপাতাল ছাড়াও শুধুমাত্র হাইমচর উপজেলার দশটি বেড ব্যতীত প্রত্যেক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশনে ২০টি করে বেড প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু রোগীরা সেখানে ভর্তি না হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হচ্ছেন। রোগীরা মনে করেন উপজেলাগুলো থেকে জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার মান বেশি ভালো তাই তারা সেখানে চিকিৎসা সেবা না নিয়ে জেলা সদর হাসপাতালমুখী হচ্ছেন।
তিনি জানান, আজ পযর্ন্ত উপজেলা হাসপাতালগুলোর করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে সর্বমোট ৪১ জন রোগী ভর্তি আছে। সদর হাসপাতালে চাপ না বাড়িয়ে উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার জন্য রোগী ও তাদের স্বজনদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status