দেশ বিদেশ
ব্র্যাকের ওয়েবিনার
মানব পাচার রোধে ভিকটিমদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান
স্টাফ রিপোর্টার
৩০ জুলাই ২০২১, শুক্রবার, ৯:৩৭ অপরাহ্ন
মানব পাচারের মামলা তদন্তের সময় অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা তথ্য দিতে চান না। অনেক ক্ষেত্রে মামলার বাদীকেই খুঁজে পাওয়া যায় না। ভূমধ্যসাগর দিয়ে যারা মানব পাচারের শিকার, তারা কোনো অভিযোগ করেন না। বিশ্ব মানব পাচারবিরোধী দিবস ২০২১ উপলক্ষে গতকাল ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচি আয়োজিত ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘মানব পাচার ও অনিয়মিত অভিবাসন: পরিস্থিতি বিশ্লেষণ, চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক ওয়েবিনারে মূল নিবন্ধে বলা হয়, করোনা মহামারির মধ্যে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করছেন বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা। এ তালিকায় শীর্ষে এখন বাংলাদেশ। শুধু ইউরোপ নয়, মহামারির মধ্যেও শ্রম অভিবাসনের নামে মানব পাচার কিংবা ভারতে নারী-কিশোরী পাচার কোনোটাই থেমে নেই। বরং এসব ক্ষেত্রে এখন সামাজিক যোগাযোগের নানা মাধ্যম ব্যবহার করা হচ্ছে। নিবন্ধে বলা হয়, এ বছরের প্রথম ছয় মাসে অন্তত ৩ হাজার ৩৩২ জন বাংলাদেশি ইউরোপে প্রবেশ করেছেন। আর গত এক যুগে অনিয়মিতভাবে ইউরোপে প্রবেশ করেছেন অন্তত ৬০ হাজার মানুষ। এভাবে যারা ইউরোপে যাচ্ছেন, তাদের বেশির ভাগের বয়স ২৫ থেকে ৪০। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম বলেন, মানব পাচার মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এটি একটি জঘন্যতম অপরাধ। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এ বিষয়ে সজাগ। পাচারকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। তাদের প্রতিহত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, মানব পাচার আইনে নয় বছরে ৩৬ মামলায় মাত্র ৭১ জনের সাজা হলো কেন? অপরাধীদের বিচার করতে হবে। মামলার বিচার বাড়াতে হবে। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম বলেন, দক্ষ হয়ে বিদেশে যেতে হবে। একইভাবে যারা দায়িত্ব পালন করেন; সেই সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ সবার মানব পাচার ও অভিবাসন আইনের বিষয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণ দরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জি এস এম জাফরউল্লাহ বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা আরও বাড়াতে হবে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) মানব পাচারবিষয়ক সেলের বিশেষ পুলিশ সুপার সাইদুর রহমান বলেন, দেশের ভেতর পাচারের মামলাগুলো তদন্ত করা সহজ, কারণ সব তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু বিদেশে পাচারের ঘটনায় অধিকাংশ সময় ভুক্তভোগীরা যথেষ্ট তথ্য দিতে চান না। আবার অনেক মামলার বাদী বা ভুক্তভোগীকেই পাওয়া যায় না। ভূমধ্যসাগর দিয়ে যারা মানব পাচারের শিকার, তারা কোনো অভিযোগ করেন না। তবে পুলিশ দেশে-বিদেশে পাচারকারীদের নেটওয়ার্ক খুঁজছে। পাচারকারীরা পার পাবেন না। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ব্র্যাকের ঊর্ধ্বতন পরিচালক কে এ এম মোর্শেদ। মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল ইসলাম। আরও বক্তব্য দেন ব্র্যাকের মানবাধিকার ও আইন সহায়তা কর্মসূচির পরিচালক জেনেফা জব্বার, বেসরকারি সংস্থা ইনসিডিন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মাসুদ আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইশরাত শামীম, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শিপা হাফিজা প্রমুখ। প্রসঙ্গত, এ বছর বিশ্ব মানব পাচারবিরোধী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘ভুক্তভোগীদের কণ্ঠস্বর পথ দেখায়’।