বাংলারজমিন

করোনায় ভাসমান পেয়ারা হাটে অশনি সংকেত

এম খায়রুল ইসলাম পলাশ, রাজাপুর (ঝালকাঠি) থেকে:

৩০ জুলাই ২০২১, শুক্রবার, ৭:২৬ অপরাহ্ন

গাছ ভর্তি হলুদ, সবুজ পেয়ারা। তবে আটঘর কুড়িয়ানার পেয়ারা বাগান একটু অন্যরকম। ছোট ছোট খাল। তার মাঝে উঁচু জায়গা, সেখানে পেয়ারা গাছ সারি সারি। এ বছর মহামারি করোনার কারণে ঝালকাঠির ভাসমান পেয়ারার বাজার জমে ওঠার সম্ভাবনা কম। তাই বড় ক্ষতির আশঙ্কায় চাষি ও পাইকাররা। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও আগে-ভাগে বাগান কিনে রাখায় লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছেন পাইকাররা। যেসব চাষি বাগান বিক্রি করেননি তারা বলছেন, এবার পেয়ারা বাগানেই পচে থাকার সম্ভাবনা বেশি।
বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠি, পিরোজপুর ও বরিশালের প্রায় ৫১ গ্রামে পেয়ারার চাষ হয়। ৩ জেলার হাজার হাজার মানুষের কাছে পেয়ারা আর্থিক সংকট লাঘব ও জীবিকার অবলম্বন। এই আষাঢ়-শ্রাবণের ভরা বর্ষায় এসব এলাকার নদী-খালজুড়ে পেয়ারার সমারোহ। দেরিতে ফুল থেকে ফল আসায় আষাঢ়ের শেষের দিকেই পরিপক্ব হয়ে পেয়ারা বিক্রি শুরু হবে বলে জানান চাষিরা। তাই বিক্রি মৌসুমের আগেই এবার লকডাউন শুরু হওয়ায় পাইকার ও চাষিরা মারাত্মক দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। কারণ সড়ক পথে পেয়ারা পরিবহন করতে না পারায় প্রতিবারের মতো এবার পাইকাররা আসবে না। অপরদিকে, ঝালকাঠির ভাসমান পেয়ারার হাট দেখতে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা এসে এখান থেকে প্রচুর পেয়ারা কিনে নিয়ে যান। করোনার কারণে এবার তা হচ্ছে না বলে জানান চাষিরা।
পেয়ারা চাষিরা জানান, বরিশাল জেলার বানারীপাড়া, ঝালকাঠি জেলার ঝালকাঠি সদর ও পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি ঘিরেই মূলত পেয়ারার বাণিজ্যিক চাষ। বরিশাল জেলার বানারীপাড়ার ১২ গ্রামে ৯৩৭ হেক্টর, ঝালকাঠি জেলার ১৩ গ্রামে ৩৫০ হেক্টর জমিতে, স্বরূপকাঠির ২৬ গ্রামের ৬৪৫ হেক্টর জমিতে পেয়ারা চাষ হয়। এসব এলাকার মধ্যে ঝালকাঠির কীর্তিপাশা, ভিমরুলী, শতদশকাঠি, খাজুরিয়া, ডুমুরিয়া, কাপুড়াকাঠি, জগদীশপুর, মীরকাঠি, শাখা গাছির, হিমানন্দকাঠি, আদাকাঠি, রামপুর, শিমুলেশ্বর গ্রামের বৃহৎ অংশজুড়ে বাণিজ্যিকভাবে যুগ যুগ ধরে পেয়ারার চাষ হচ্ছে। পেয়ারার চাষ, ব্যবসা ও বাজারজাত করতে রয়েছে কয়েক হাজার মৌসুমী পাইকার এবং শ্রমিক। এ সময় ঝালকাঠির অন্তত ২০টি স্থানে পেয়ারার মৌসুমী মোকামের সৃষ্টি হয়। প্রতিটি মোকামে মৌসুমে প্রতিদিন প্রায় ৫-৭ হাজার মণ পেয়ারা কেনাবেচা হয়ে থাকে। জ্যৈষ্ঠের শেষ থেকে ভাদ্রের শেষ এই ৩ মাস পেয়ারার মৌসুম। তবে ভরা মৌসুম শ্রাবণ মাসজুড়ে। এরপর ক্রমশ কমতে থাকে পেয়ারার ফলন। চৈত্র- বৈশাখের মধ্যেই পেয়ারা চাষিরা বাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সাধারণত ছোট ছোট খাল, নালা দিয়ে বাগানগুলো মূলভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে। চাষিরা মৃতপ্রায় গাছের ডাল কেটে, মাটি আলগা করে পেয়ারা গাছের আলাদা যত্ন নেয়। বাগানের চতুর্দিক জালের মতো ছড়িয়ে থাকা নালার মাটি পেয়ারা গাছের গোড়ায় দেয়া হয়। পেয়ারা গাছে তেমন কোনো সার বা আলাদা করে কিছু দেবার প্রয়োজন নেই, শুধু পরিচর্যাই যথেষ্ট। সারা বছর তেমন কোনো কিছু করার দরকার হয় না। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসেই পেয়ারা গাছে ফুল আসতে শুরু করে। তবে বৃষ্টি শুরু না হলে পেয়ারা পরিপক্ব হয় না। জমি ভালো হলে হেক্টর প্রতি ১২-১৪ মেট্রিক টন পেয়ারার উৎপাদন হয়।
বাউকাঠির চাষি হরিপদ জানান, প্রতি বছর এমন সময় পাইকাররা গাছ থেকে পেয়ারা পাড়ার প্রস্তুতি নিতো। এ বছর তাদের কোনো তৎপরতা দেখি না। তাই দুশ্চিন্তায় আছি আমরা। পাইকাররা বাগানের পেয়ারা না নিলে অর্ধেক পরিমাণ টাকা ফেরত দিতে হবে।
কীর্তিপাশার পেয়ারা চাষি অমল কৃষ্ণ বলেন, সামনে পেয়ারা বিক্রির মৌসুম। কিন্তু এবার সড়ক পথ বন্ধ থাকায় পাইকাররা দুঃশ্চিন্তায় আছে। তবে আমরা যারা বাগান বিক্রি করিনি একটু বাড়তি দামের আশায় তারা আরো বেশি চিন্তায় আছি। কারণ পাইকাররা না কিনলে কাদের কাছে বিক্রি করবো। প্রতি বছর এই ভাসমান বাজারে কোটি কোটি টাকার কেনাবেচা হয়।
হিমানন্দকাঠি এলাকার পাইকার সোবাহান মৃধা জানালেন এবার করোনার কারণে আমরা বাগান কিনে বেকায়দায় পড়েছি। কারণ কিছুদিন পরই পেয়ারা বিক্রি শুরু হবে। সড়ক পথ বন্ধ থাকায় এসব পেয়ারা কীভাবে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠাবো তাই ভাবছি। এবার লাখ লাখ টাকার লোকসান গুনতে হবে আমার মতো পাইকারদের।
ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী জানালেন, পেয়ারা চাষিদের প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হবে। সেইসঙ্গে পেয়ারা চাষিসহ পর্যটনকেন্দ্রিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কিংবা উদ্যোক্তাদের জন্য এসএমই ঋণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status