বিশ্বজমিন

‘করোনার সুপার-স্প্রেডার হয়ে উঠছে মিয়ানমার’

মানবজমিন ডেস্ক

২৯ জুলাই ২০২১, বৃহস্পতিবার, ১০:১৬ পূর্বাহ্ন

করোনা ভাইরাসের সুপার-স্প্রেডার হয়ে উঠার ঝুঁকিতে আছে মিয়ানমার। এ অঞ্চলে করোনার ভয়াবহ বিস্তার ঘটতে পারে দেশটি থেকে। লন্ডনের অনলাইন গার্ডিয়ানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ হুঁশিয়ারি দিয়েছে মিয়ানমারে মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের স্পেশাল র‌্যাপোর্টিউর টম অ্যানড্রিউস। তিনি একই সঙ্গে মিয়ানমারে অস্ত্রবিরতির জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে আহ্বান জানানোর জন্য অনুরোধ করেছেন। এতে বলা হয়েছে, এখনও পর্যন্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটি ভয়াবহ সংক্রমণ মোকাবিলা করছে।

১লা ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে সেখানে একই সঙ্গে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সঙ্কটও তীব্র। টিকাদান কর্মসূচি স্থবির হয়ে আছে। করোনার পরীক্ষা ব্যবস্থ্য ভেঙে পড়েছে। সরকারি হাসপাতালগুলো নামমাত্র কার্যকর আছে। যেসব চিকিৎসকদের সামনের সারিতে থেকে রোগীদের সেবা দেয়ার কথা, তারা সামরিকজান্তা বিরোধী ধর্মঘটে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে কাজ করছেন না তারা। তবে তারা গোপনে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। কারণ, সামরিক বাহিনীর সহিংসতা বা গ্রেপ্তারের অব্যাহত হুমকিতে আছেন তারা।

টম অ্যানড্রিউস বলেছেন, দেশটিতে করোনা ভাইরাসে প্রকৃতপক্ষে কত মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন বা মারা গেছেন, তার সুস্পষ্ট কোনো হিসাব নেই। করোনা সঙ্কট সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে সাংবাদিক এবং চিকিৎসকদেরকে টার্গেট করার কারণে। টম অ্যানড্রিউস বলেন, আমরা জানি করোনা এখানে ঊর্ধ্বগতিতে। খুব দ্রুত হারে বাড়ছে। উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি হচ্ছে।

সামরিক জান্তা নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ১লা জুন পর্যন্ত সেখানে করোনায় মারা গেছেন ৪৬২৯ জন। এই সংখ্যা অনেক কমিয়ে দেখানো হয়েছে বলে মনে করা হয়। সামরিক জান্তা নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া মঙ্গলবার ঘোষণা দিয়েছে যে, মিয়ানমারের সর্ববৃহৎ শহর ইয়াঙ্গুনে আরো নতুন ১০টি ক্রিমেটোরিয়াম বা মৃতদেহ সৎকারের স্থান নির্মাণ করা হবে। কারণ, বিদ্যমান সমাধিক্ষেত্রে মৃতদেহ স্থান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

টম অ্যানড্রিউস বলেন, ইয়াঙ্গুনে তিন রকম লাইন দেখতে পাওয়া যায়। এক হলো এটিএম বুথে। অন্যটি হলো অক্সিজেন সরবরাহের স্থানে। এই অক্সিজেন সংগ্রহ করা খুবই বিপজ্জনক। কারণ, লাইনে দাঁড়িয়ে অক্সিজেন নেয়া লোকগুলোকে আক্ষরিক অর্থেই মিয়ানমারের নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা গুলি করে দিতে পারে। তৃতীয় লাইন দেখা যায়, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পাদন ও মর্গের সামনে।

মিয়ানমারে অক্সিজেন, চিকিৎসা সামগ্রী এবং চিকিৎসা দেয়ার স্থানের ভয়াবহ সঙ্কট বিরাজ করছে সর্বত্র। ঘরের বাইরে লোকজন হলুদ ও সাদা রঙের পতাকা উড়িয়ে দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছে যে, তাদের খাদ্য বা ওষুধ প্রয়োজন। অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাহায্য চেয়ে এবং মৃত্যুর খবর জানিয়ে পোস্টের পর পোস্ট সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। অক্সিজেন সরবরাহকে কুক্ষিগত করে রাখার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে সেনাবাহিনীকে। তারা জনগণের কাছে অক্সিজেন বিক্রি না করতে সরবরাহকারীদের নির্দেশ দিয়েছে।

টম অ্যানড্রিউস বলেন, মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশগুলোসহ আন্তর্জাতিক সরকারগুলোর প্রয়োজন দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া। তা না হলে তাদের সীমান্তেও অনিয়ন্ত্রিত এই করোনা মাহামরির ঢেউ আছড়ে পড়বে। তিনি আরো বলেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট এবং অন্য সব রোগের কারণে মিয়ানমার হয়ে উঠছে করোনা ভাইরাসের সুপার-স্প্রেডার। এসব রোগ চরমমাত্রায় বিপজ্জনক, প্রাণঘাতী এবং সংক্রমণযোগ্য। তিনি আরো বলেন, করোনা কোনো জাতি, সীমান্ত, আদর্শ ও রাজনৈতিক দলকে সম্মান করে না। এই ঘাতক সমান শক্তি দিয়ে সবাইকে আক্রমণ করে। এ কারণে মিয়ানমার হয়ে উঠতে পারে সুপার-স্প্রেডার।

মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশগুলোতে বসবাস করে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়য়াংশ। এর মধ্যে আছে রাশিয়া, চীন। তারা মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে নিরাপত্তা পরিষদে চাপ সৃষ্টির উদ্যোগকে ব্লক করে দিয়েছিল। ফেব্রুয়ারিতে নিরাপত্তা পরিষদ একটি রেজ্যুলুশন পাস করে। তাতে দাবি করা হয়, মিয়ানমারের সব পক্ষকে অস্ত্রবিরতি করতে হবে, যাতে স্বাস্থ্যকর্মীরা নিরাপদে করোনা ভাইরাসের টিকা দিতে পারেন। সেই রেজ্যুলুশন এখন মিয়ানমারের সঙ্কটের কথা বিবেচনা করে নতুন করে সক্রিয় করা যেতে পারে বলে মনে করেন টম অ্যানড্রিউস। এর ফলে আন্তর্জাতিক এজেন্সিগুলো বৃহত্তর সহায়তা দিতে পারবে।

বুধবার সামারিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার রিপোর্ট করেছে যে, সামরিক জান্তা মিন অং হ্লাইং এক বৈঠকে বক্তব্য রেখেছেন। তাতে তিনি আসিয়ানসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে করোনা প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসায় সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন। তবে কি ধরনের সহযোগিতার কথা তিনি বলেছেন, তা স্পষ্ট নয়। উল্লেখ্য, স্বাস্থ্যকর্মী এবং হাসপাতাল বা ক্লিনিকে কমপক্ষে ২৬০ বার হামলা চালিয়েছে সামরিক জান্তা। এতে কমপক্ষে ১৮ জন নিহত হয়েছেন। কমপক্ষে ৬৭ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আরো ৬০০ স্বাস্থ্যকর্মীর বিরুদ্ধে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status