প্রথম পাতা

মানবজমিনকে বিশেষ সাক্ষাৎকার

জাতিসংঘ মোড়লদের, আমাদের জন্য নয় (ভিডিও)

তারিক চয়ন

২৯ জুলাই ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৯:৪৪ অপরাহ্ন

বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ, শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ ফাউন্ডেশনের পরিচালনা পরিষদের অন্যতম সদস্য। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য মুক্তির লক্ষ্যে ক্ষুদ্রঋণের ধারণার প্রবর্তক এবং এই উদ্দেশ্যে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন। এ ছাড়াও তিনি ‘সামাজিক ব্যবসা’র ধারণার প্রবর্তক। পৃথিবীর মাত্র সাতজন ব্যক্তির একজন ড. ইউনূস যিনি নোবেল পুরস্কার, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম এবং কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল পেয়েছেন। নিজের চিন্তাধারা ও কাজের জন্য অসংখ্য আন্তর্জাতিক সম্মাননা ও পুরস্কার গ্রহণকারী মুহাম্মদ ইউনূসকে সম্প্রতি (ক্রীড়াজগতের সর্বোচ্চ সম্মান) “অলিম্পিক লরেল” সম্মাননায় ভূষিত করেছে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি। গত  ২৩শে জুলাই অলিম্পিক গেমস টোকিও ২০২০-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। ক্রীড়ার মাধ্যমে শিক্ষা, সংস্কৃতি, উন্নয়ন ও শান্তিতে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি এই বিশেষ সম্মাননা দিয়ে থাকে। প্রফেসর ইউনূস দ্বিতীয় ব্যক্তি যিনি এই পুরস্কার গ্রহণ করলেন। টোকিও অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রতি সেকেন্ডের টিআরপি হিসাব করেছে জাপানের তোশিবা কোম্পানি। তোশিবার টিআরপি নিয়ে ইয়াহু নিউজে বলা হয়েছে- ৪২.২০ শতাংশ দর্শক  টোকিও অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখছেন। আর ড. ইউনূসের ‘তিন শূন্য’ বিষয়ক বক্তৃতার সময় সর্বোচ্চ ৪৭.০৩ শতাংশ টিআরপি ছিল। মানবজমিনকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস পরিবেশের ক্ষতি না করে অলিম্পিক আয়োজন, করোনার ভ্যাকসিনকে ‘গ্লোবাল কমন গুড’ ঘোষণা, নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা, ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স টেকনোলজি’র ভয়ঙ্কর প্রভাব ইত্যাদি নানা বিষয়ে কথা বলেছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের তরুণদের উদ্দেশ্যে বেশকিছু উপদেশ দিয়েছেন।

মানবজমিন: অলিম্পিক লরেল সম্মাননা গ্রহণ করতে গিয়ে আপনি অ্যাথলেটদের পৃথিবীকে বদলে দেয়ার কাজে নেতৃত্ব দিতে এবং একটি ‘তিন শূন্য’র পৃথিবী তথা শূন্য নিট কার্বন নিঃসরণ, দারিদ্র্য চিরতরে দূর করতে শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীয়করণ এবং প্রতিটি মানুষের সহজাত উদ্যোক্তা-শক্তি বিকাশের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে শূন্য বেকারত্বের নতুন পৃথিবী সৃষ্টি করতে আহ্বান জানিয়েছেন। আপনার মতে, খেলাধুলার মধ্যে পৃথিবীকে উদ্দীপিত করে জীবনকে পরিবর্তিত করার ক্ষমতা রয়েছে, আর এই ক্ষমতাকে উন্মোচিত করতে সবচেয়ে কার্যকর  কৌশল হলো সামাজিক ব্যবসা। অ্যাথলেটরা সমাজের অনেকের কাছেই ‘রোল মডেল’ বলেই কি আপনি তাদের প্রতি এমন আহ্বান জানিয়েছেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: ক্রীড়াজগতের বিশাল একটি শক্তি রয়েছে সামাজিক পরিবর্তনের জন্য। যে শক্তিকে সাধারণত খুব বেশি ব্যবহার করা হয় না। ব্যবহার করা হয় বাণিজ্যিক কাজে। তাদের দিয়ে যেসব বিজ্ঞাপন করা হয় তাতে ক্রীড়াজগতের অনেক উপার্জন হলেও অনেক সময় ওই বিজ্ঞাপন দ্বারা মানুষের ক্ষতিও হয়। কারণ মানুষের জন্য অনেক ক্ষতিকর জিনিসের বিজ্ঞাপনও তাদের মাধ্যমে করা হয়। এসব বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হলেও তা যেন মানুষের ক্ষতি না করে করা হয়, সেটাই আমার চাওয়া। দ্বিতীয়ত, এই যে বিরাট শক্তি তা যেন মানবকল্যাণেও ব্যবহার করা হয়। এ জায়গাটিতে খুব  বেশি মনোযোগ দেয়া হয়নি। আমি এ দিকটায় মনোযাগ আকর্ষণ করতে যখনই আইওসি (আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি)’র সঙ্গে বৈঠক হয়েছে তখনই সেটা তুলে ধরে তাদের বলেছি- আপনারা এই বিরাট শক্তিকে সামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত করে সমাজের মঙ্গলে ব্যবহার করুন। আইওসি আমাদের কথার সঙ্গে একমত হয়েছে। আমাদের কথার সঙ্গে মিল রেখেছে। আমরা তাদের সঙ্গে কিছু কাজ করে উদাহরণ সৃষ্টি করেছি। তারা আমাদের কাছে জানতে চেয়েছিল, কীভাবে কি করা যায়। এই আলোচনা থেকেই একটা ‘আইডিয়া’ আসলো ফ্রান্সের পক্ষ থেকে। তারা বললো- আপনার যদি সম্ভব হয় তাহলে অলিম্পিককে আমরা কীভাবে সামাজিক কল্যাণে ব্যবহার করতে পারি? আমি জানাই, একের পর এক অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হয়। আসলেও এগুলোতো সামাজিক দিক- বিশেষভাবে মনোযোগ দেয়া হয়নি। সক্ষেত্রে দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা গৎবাঁধা অলিম্পিকের পুরো ‘ডিজাইন’টিই বদলে ফেলতে হবে। আমার প্রস্তাবটি ফ্রান্স খুব পছন্দ করে। যে কারণে ফ্রান্সের পক্ষ থেকে আইওসি’র কাছে যখন প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হলো তখন সেই উপস্থাপন কমিটিতে আমাকে রাখা হলো। কমিটির নেতৃত্ব দিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন। সঙ্গে ছিলেন প্যারিসের মেয়র হিদালগা। ফ্রান্সের পক্ষে আমরা তিনজনের টিম হলাম। তাদের বোঝালাম আমরা এটাকে সম্পূর্ণ নতুনভাবে বানাবো। প্রত্যেকটা জিনিস আমরা নতুন ভঙ্গিতে সৃষ্টি করবো। দু’দিন ধরে আমাদের কথাবার্তা চললো। শেষ পর্যন্ত অনুমোদন পেলো যে প্যারিসেই ২০২৪ অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হবে। প্যারিস অলিম্পিকের প্রস্তুতি কমিটির সঙ্গেও আমাকে যুক্ত করা হলো যাতে আমার দেয়া পরামর্শগুলো তারা কাজে লাগাতে পারে। সবমিলিয়ে পুরো অলিম্পিককে সামাজিক কল্যাণমূলক করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাদের বাজেট ৭ বিলিয়ন ইউরো। আমি বলছি, এই ৭ বিলিয়নের একটি পয়সাও যেনো ‘সামাজিক কল্যাণের কাজ ছাড়া’ ব্যবহার করা না হয়। প্রত্যেক পয়সা খরচ করার সময় যেনো তার সামাজিক গুরুত্বের বিষয়টিতে খেয়াল রাখা হয়। পৃথিবীতে এটিই হবে প্রথম অলিম্পিক যেখানে প্রতিটি জিনিস সামাজিক কল্যাণের দিকে মনোযোগ রেখে করা হয়েছে।

মানবজমিন: সম্প্রতি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ ও অলিম্পিক গেমস স্বর্ণপদক বিজয়ী ভারতীয় শ্যুটার অভিনব বিন্দ্রার সঙ্গে আলোচনায় আপনি বলেছেন, খেলাধুলায় ব্যর্থতা সাফল্যের চেয়ে অনেক বেশি। তবে আমরা তাদের উল্লেখ করি না। শীর্ষ স্থানের ক্রীড়াবিদদের পেছনে এমন হাজার হাজার লোক রয়েছেন যারা একনিষ্ঠভাবে কাজ করে গিয়েছেন। কিন্তু তারা নিজেরা সফল হননি। কেন তাদের সামাজিক উদ্যোক্তা বা সংস্কারক হতে সাহায্য করবেন না? ক্রীড়াবিদদের সামাজিক উদ্যোক্তা বা সংস্কারক হতে সাহায্য করার আহ্বান জানানোর মাধ্যমে আপনি ঠিক কি বোঝাতে চেয়েছেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: ক্রীড়াজগতে মুষ্টিমেয় কয়েকজন ‘সুপারস্টার’ হয়। সুপারস্টারদের  পেছনে সারা দুনিয়া ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সবকিছু তাদের জন্য। কিন্তু একেকজন সুপারস্টার তৈরি হওয়ার পেছনে হাজার হাজার ব্যর্থ ক্রীড়াবিদের গল্প লুকিয়ে থাকে। তাদেরও স্বপ্ন ছিল তারা একদিন নামকরা ক্রীড়াবিদ হবে, সুপারস্টার হবে। কিছুদূর এগিয়ে তারা হয়তো আর এগুতে পারেনি। তাদের কি হলো, সেই খোঁজ কেউ রাখে না। তাদের জীবন খুব ভয়ঙ্কর। তাদের অনেকেই নিজেদের ব্যর্থ মনে করে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে বা তাদের ‘ক্যারিয়ার’-এর বয়সও শেষ হয়ে যায়। বয়সের কারণে ভালো চাকরিও তারা করতে পারে না। অনেকেই অত্যন্ত সাধারণ চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করে। তারা যেহেতু খেলার পেছনেই সারাজীবন ব্যয় করছে তাই লেখাপড়াও হয়তো খুব বেশি করেনি। তাদের কী হবে সেটা প্রথম থেকেই ভাবা উচিত। তাই আমি বলছি, চাকরি ছাড়াও তাদের জন্য বড় পথ আছে। আর সেটা হলো তাদের উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য উৎসাহিত করা। খেলাধুলার সঙ্গে সঙ্গে এর প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করা। পাশাপাশি তাদের জন্য বিশেষ ‘ফাইন্যান্সিয়াল সিস্টেম’ তৈরি করা যাতে তারা জানে যে আমি যখন ব্যবসা করার জন্য প্রস্তুত হবো তখন আমার কাছে টাকা থাকবে, আমি টাকা পাবো, আমার খাতে বিনিয়োগ করা হবে, আমি ঋণ পাবো এবং ব্যবসায় সফল হবো। কিছু সামাজিক ব্যবসা থাকবে যেগুলো থেকে তারা ব্যবসায় সফলতার শিক্ষা নিতে পারবে। তাদেরকে একটা সিস্টেমের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। তারা খেলায়  হেরেছে বলে জীবনেও হেরে যাবে তা যেন না হয়। তাদের একাগ্রচিত্ত সাধনাকে যদি ব্যবসার কাজে লাগানো যায় তবে সফল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ক্রীড়াজগৎ  যেহেতু অনেক বড় একটা ‘প্ল্যাটফরম্থ, এই জায়গার মধ্যেই ব্যবসা করে তারা সফল হতে পারে। কারণ এখানে অনেকেই তাদের চেনে।

মানবজমিন: পাঁচটি নতুন খেলা এবং ৩৪টি নতুন ইভেন্ট এই অলিম্পিকে  যোগ হয়েছে। পরিবেশ নিয়ে সচেতনতার প্রতিফলন ঘটানোর  চেষ্টা হয়েছে। যেমন,  মেডেল তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে নষ্ট এবং বাতিল মোবাইল ফোন। অলিম্পিক মশাল তৈরি হয়েছে ২০১১ সালে জাপান ভূমিকম্পের পর অস্থায়ী বাসস্থানের নির্মাণ কাজের পর ফেলে দেয়া টুকরা এলুমিনিয়াম দিয়ে।  টোকিও অলিম্পিক আয়োজনে যে বিদ্যুৎ ব্যবহার হবে তা উৎপাদিত হচ্ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি পুড়িয়ে।
বিষয়গুলোকে কীভাবে দেখেন?
মুহাম্মদ ইউনূসঃ এগুলো সবক’টাই ইতিবাচক। খুব বড় উদ্যোগ না হলেও এগুলো অর্থবহ। যেমন- অলিম্পিকে আমরা আর প্লাস্টিক ব্যবহার করবো না। ক্ষতিকর  কোনোরকম পানীয় আমরা অলিম্পিকে বিক্রি করতে দেব না। এরকম অনেক উদ্যোগ আছে। একবার অভ্যস্ত হয় গেলে, এ দীর্ঘ যাত্রা চলতে থাকবে।  যেমন- আমরা অলিম্পিক ইলেক্ট্রিক গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো গাড়িতে চড়বো না।

মানবজমিন: বছরভর অনিশ্চয়তার পর শেষতক টোকিও অলিম্পিক গেমস শুরু হলেও জাপানের আরিসা সুবাতার মতো অনেকেরই অলিম্পিক স্বপ্নের সমাধি হয়েছে করোনার কারণে। কোভিড পরীক্ষায় পজেটিভ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের টেনিস খেলোয়াড় কাকা গফ গেমস থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। দর্শকহীন অলিম্পিকের সিদ্ধান্ত নিয়েছে টোকিও। কিছু অঞ্চলে দর্শক ৫০ শতাংশ। আপনি নিজেও ‘অলিম্পিক লরেল’ সম্মাননা গ্রহণে সশরীরে উপস্থিত থাকতে পারেন নি। করোনাকালে অলিম্পিক আয়োজন নিয়ে কিছু বলবেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: করোনার কারণে সারা বিশ্ব বিপর্যয়ের শিকার। সেকারণে বিপর্যয় হয়েছে অলিম্পিকেরও। তাদের প্রতি সমবেদনা জানানো ছাড়া কিছুই করার নেই। তারা চেষ্টা করছে সুন্দরভাবে আয়োজন করতে। আয়োজনের সিদ্ধান্ত সঠিক নাকি বেঠিক ছিল সেটা অলিম্পিক শেষ হওয়ার পরই সবাই মনোযোগ দিয়ে বিশ্লেষণ করে বলতে পারবেন। এখন সেটা বলার সময় আসেনি।

মানবজমিন: আপনি করোনার টিকা আবিষ্কারের আগেই টিকাকে বাণিজ্যিক স্বার্থ মুক্ত রেখে বিশ্বের সব দরিদ্র মানুষের কাছে পৌঁছাতে একে ‘গ্লোবাল কমন গুড’  ঘোষণা করতে প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। আপনি বলেছেন, টিকার ওপর বিশ্বের সব মানুষের সমান অধিকার রয়েছে, যেমনটা রয়েছে আলো-বাতাসের ওপর। অনেক বিশ্বনেতাই এখন আপনার সুরে কথা বলছেন। আপনাদের প্রচেষ্টা ইতিমধ্যে কতোটা সফলতার মুখ দেখছে?
মুহাম্মদ ইউনূস: আমাদের কাজ হলো চেষ্টা করে যাওয়া। আমরা চেয়েছিলাম টিকার জন্য ‘ইন্টেলেকচ্যুয়াল প্রপার্টি রাইটস’ সরিয়ে দিতে যেন সবাই টিকা উৎপাদন করতে পারে। আমাদের বক্তব্য ছিল যতদিন ওটা থেকে যাবে ততদিন তা মুনাফার জন্য ব্যবহার করা হবে। মুনাফার দেয়ালে বন্দি থাকবো সবাই। যতদিন এই মুনাফার দেয়াল থাকবো, মানুষ মরতে থাকবে, টিকা পাবে না। এখন প্রয়োজন ব্যাপকভাবে টিকা উৎপাদন করা। মুনাফার দেয়াল থাকলে উৎপাদন সীমাবদ্ধ থাকবে। বাংলাদেশে ৩-৪ ভাগ লোক হয়তো টিকা পেয়েছে। পুরো আফ্রিকায় ১ ভাগের বেশি মানুষের কাছে টিকা পৌঁছেনি। দুনিয়ার বহুলোক এখনো টিকা থেকে বহুদূরে। এভাবে চলতে থাকলে সবার কাছে টিকা পৌঁছাতে আরও ৫৭ বছর সময় লাগবে। ততদিন মানুষ সাফ হয়ে যাবে পৃথিবী থেকে। এখন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট এসেছে, আরও নতুন নতুন শক্তিশালী ভ্যারিয়েন্ট হয়তো আসবে। ফলে দ্রুততম সময়ে মানুষ মৃত্যুর দিকে চলে যাবে। আমরা বলেছি, প্রচুর পরিমাণে টিকা উৎপাদন করতে। উৎপাদন করাটা মূল সমস্যা নয়, উৎপাদনের অনুমতি পাওয়াটাই মূল সমস্যা। অনেক দেশেরই উৎপাদন করার ক্ষমতা আছে। কিন্তু ইন্টেলেকচ্যুয়াল প্রপার্টি রাইটসের কারণে উৎপাদন করতে পারছে না। আমাদের কথা হলো, সব দরোজা খুলে দাও। যে যেখানে পারুক উৎপাদন করুক, যেখানে ব্যবস্থা রয়েছে বণ্টন করুক। আমরা শুধু বণ্টন নিয়ে কথা বলি, উৎপাদন নিয়ে নয়। আমি বলি, উৎপাদনটাই মূল। উৎপাদন বেশি হয়ে গেলেও কোনো অসুবিধা নেই। এটা চলতে থাকবে। কিন্তু কম হলেই সংকট। এখন যা হচ্ছে, আমরা টিকা খুঁজে বেড়াচ্ছি, কিন্তু পাচ্ছি না। তাই যত দ্রুত সম্ভব এই মুনাফার দেয়াল ভাঙতে হবে নয়তো মানুষকে বাঁচানো সম্ভব হবে না। কারণ অতি উচ্চ মুনাফা বিপুল পরিমাণে মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে গেছে।

মানবজমিন: করোনা-উত্তর এক নতুন পৃথিবীর কথা বলেছেন অনেকেই। কেমন হতে পারে সেই নতুন পৃথিবী? করোনা মহামারিকে বিশ্বায়নের কফিনে শেষ পেরেক বলে বর্ণনা করেছেন কেউ কেউ। দেশে দেশে কট্টর জাতীয়তাবাদের উত্থানের আশঙ্কা করছেন অনেকে। রাষ্ট্রীয় নজরদারি বাড়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে বলেও অনেকের শঙ্কা...
মুহাম্মদ ইউনূস: বিশ্বায়নের কথা বলছো? কই বিশ্বায়নতো আমি দেখি না! আমাদেরকে বলা হচ্ছিল যে এটা একটা ‘গ্লোবাল ভিলেজ’। বিশ্বটা একটা গ্রামের মতো। আমরা সবাই থাকি এক জায়গায়। এতো কাছে এসে গেছি আমরা যে এটা একটা গ্রামের মতো, পরস্পরর মধ্যে আত্মীয়তাবোধ থাকবে। কিন্তু করোনা মহামারি এসে দেখিয়ে দিলো যে গ্রাম বলে আসলে কিছুই নেই। এখানে আসলে আছে কয়েকটা দ্বীপে। প্রত্যেক জাতি একেকটা দ্বীপের মতো আলাদা আলাদা হয়ে ভাগ হয়েছে। এক দ্বীপে অন্য দ্বীপের সঙ্গে সংযোগ রাখতে চায় না। প্রত্যেকে তার নিজ দ্বীপের মানুষকে রক্ষায় ব্যস্ত। অন্য দ্বীপের মানুষ মরে গলেও তার কিছু যায়-আসে না। বিচ্ছিন্নতা পরিষ্কার হয়ে উঠলো। এটা আগে থেকেই ভেতরে ছিল, এখন সেটা প্রকাশ পেয়ে গেল। করোনা আমাদের সংকীর্ণমনা, স্বার্থপর মনোভাব প্রকাশ করে দিলো। কাজেই বিশ্বায়ন বলে কোনো জিনিস নেই? বিশ্ব মোড়লেরা শুধু আমাদের ‘বুঝ’ দিয়ে গেছে। তারা যার যার মানুষ রক্ষায় ব্যস্ত। আমাদের দিকে খেয়াল রাখার সময় তাদের নেই। মাঝে মাঝে কিছু দান করে দিচ্ছে। কিন্তু আমরা তো দান চাচ্ছি না। আমরা উৎপাদন করতে চাই। কিন্তু তোমরা তো আটক রেখেছো মুনাফা করার জন্য। ন্যায্য মুনাফা দিতে আমরা প্রস্তুত, কিন্তু অন্যায্য মুনাফার দেয়াল ভাঙা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই পৃথিবী নতুন করে গড়তে হলে আমাদের এই দেয়াল, এই দ্বীপগুলোকে ভাঙতে হবে। জাতিসংঘ বলে মোড়লদের একটা জিনিস আছে, সেটা আমাদের জন্য নয়। তারা যেভাবে বলে সেভাবে তাকে চলতে হয়। এর বাইরে সে যেতে পারে না। কোনো কোনো মোড়ল আবার বেঁকে বসে। যেমন ট্রাম্প বেঁকে বসলো যে সে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রাখবে না। তার সদস্যও সে থাকবে না। তার বিরুদ্ধে সে তদন্তও করবে। অর্থাৎ বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সে চ্যালেঞ্জ করলো যে এগুলোকে সে টিকতে দিবে না। যেখানে সবার একত্রিত হওয়ার কথা ছিল তা তো হলোই না সে তাদেরকে আবার উল্টা পথে নিয়ে গেল। যে কাঠামো ছিল সে কাঠামোটাই ভেঙে দেয়ার চেষ্টা করলো। কাজেই এগুলো পরিষ্কার ধরা পড়লো। তাই আমাদের নতুন করে চিন্তা করতে হবে যে বিশ্বের ‘ফ্রেমওয়ার্ক’টা কী হবে। এখনকার ফ্রেমওয়ার্ক আমাদের মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের মৃত্যু একেবারে অবধারিত। মানুষ এখন বিপন্ন প্রাণী হয়ে গেছে যার আর পৃথিবীতে টিকে থাকার ক্ষমতা নেই। আমাদের মৃত্যু একেবারে অবধারিত যদি না হয় তবে আমরা সিদ্ধান্ত নিই যে আমরা আর আগের পথে চলবো না। ‘নো গোয়িং ব্যাক’, আমরা আমাদের নতুন পথ তৈরি করবো। পুরনো পথে আমাদের মৃত্যুপথযাত্রী করে তুলছে। আমরা ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং’-এর কারণে মৃত্যুপথযাত্রী। আমাদের বেশি সময় আর নেই। প্রত্যেক দেশে সমস্ত সম্পদ গুটিকয়েকের কাছে কেন্দ্রীভূত। দুনিয়ার ৯৯ ভাগ তলানির মানুষ, ১ ভাগ মাত্র উপরের। মানুষ একদিকে, সম্পদ অন্যদিকে- এই যে দূরত্ব তা সংশোধন না করা পর্যন্ত আমাদের নিস্তার নেই। অর্থনীতির যন্ত্রটি আমাদের নিচের দিকে নিয়ে যাচ্ছে আর সম্পদ ওপরের দিকের মানুষকে দিচ্ছে।
আরেকটি সমস্যা, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স টেকনোলজি আগে যেটা মানুষকে সব কাজ থেকে নিষ্কৃতি দিয়ে দেবে। মানুষ আর কাজে লাগবে না। সেটা যে শুধু শ্রমিক তা নয়, সব স্তরের মানুষ। ধনী লোকরা মুনাফা বাড়াতে তা ব্যবহার করবে। মুনাফার কারণ চাকরিজীবী মানুষ কাজ হারিয়ে আবর্জনায় রূপ নেবে। এরকম বিশ্বে আমরা থাকতে চাই না। আমরা আবর্জনা হয়ে নয়, সম্মানের সঙ্গে বাঁচত চাই, সৃষ্টিশীল হতে চাই। সেজন্যই নতুন পৃথিবীর মানুষ হতে আমি ‘তিন শূন্যের পৃথিবী’র কথা বলছি। যেখানে সম্পদ এবং মানুষ একসঙ্গে থাকবে। আমরা যে বিশ্বে আছি সেটি  বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে জ্বলন্ত একটি ঘর, যা থেকে বেরিয়ে আমরা নতুন পৃথিবী গড়বো। সে কারণে বেশিছুতই মুনাফাকেন্দ্রিক মানসিকতা থেকে আমরা সরে আসবো। আমরা মানুষের স্বাভাবিক গুণের ওপর ভিত্তি করে নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলবো।

মানবজমিন: অলিম্পিক খেলার আদর্শবাণী ‘দ্রুততর, উচ্চতর, শক্তিশালী’। কিন্তু আমরা যেন জাতি হিসেবে এই স্লোগান থেকে দূরে সরে গেছি ক্রমশ দর্শক জাতিতে পরিণত হয়েছি। বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ যারা একটিও অলিম্পিক পদক জয় করেনি! এখন পর্যন্ত অলিম্পিকে ১৪৫টি দেশ পদক জিতেছে। এর মধ্যে আছে লিচেনস্টেনেইর মতো দেশও। দেশের জনমনেও অলিম্পিক নিয়ে তেমন আগ্রহ লক্ষ্য করা যায় না, যেটা করা যায় ক্রিকেট বা ফুটবল নিয়ে। এ থেকে উত্তরণের উপায় কী বলে আপনি মনে করন?
মুহাম্মদ ইউনূস: বাস্তববাদী হতে হবে। আবগতাড়িত হওয়ার কিছু নেই। ১২১ বছর আগে অর্থাৎ ১৯০০ সাল থেকে ভারত (তখনকার অখণ্ড ভারতবর্ষ) অলিম্পিকে যোগ দেয়া শুরু করে। ৪৭-এ তো দেশ ভাগ হয়ে গেল। এতদিনেও তারা শুধু হকিতে স্বর্ণপদক পেয়েছে। আর এককভাব শুধু ওই অভিনব বিন্দ্রাই স্বর্ণপদক পেয়েছে। এতো বড় আয়তন আর জনসংখ্যার ভারতে শুধু ওই একজনই ওটা পেয়েছে। সেখানে আমরা তো একটি ছোট দেশ। সুতরাং আমাদের মনোকষ্ট পাওয়ার কিছু নেই। তাদের মনোকষ্ট পাওয়ার কারণ থাকলেও থাকতে পারে। এসবের পেছনে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। গেলেই পেয়ে গেলাম, ব্যাপারটা ওরকম নয়। এর জন্য যে সাধ্যসাধনা করতে হয় তা বিরাট খরচের ব্যাপার। এ পরিমাণ সাধ্য আমাদের নেই। তাছাড়া পদক পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তাও নেই। জন্ম থেকে লেগে থাকতে হয়। হঠাৎ করে অনেকে পেয়ে গেলে সেটা ভাগ্যের ব্যাপার বা কাকতালীয়। কিছু জায়গা আছে যেখানে অল্প খরচে আমরা চেষ্টা করতে পারি? হয়তো সোনা না পেলেও ব্রোঞ্জ পাবো। কিন্তু হতাশ হয়ে যে আমরা অলিম্পিকে যাবোই না বা দেখবোই না তা যেন না হয়। অলিম্পিক উপভোগ করার জিনিস। আমার দল না থাকলেও আমার প্রিয় দল হয়তো আছে। বিশ্বকাপে আমরা যা করি। আমাদের খেলোয়াড়রা না খেললেও বিভিন্ন দেশের পতাকায় সারা দেশ ভরে যায়। যেসব দেশক আমরা হয়তো চিনিও না তাদের সাফল্যেই আনন্দে মেতে উঠি।

মানবজমিন: কিন্তু অলিম্পিকে আমরা যাই বা না যাই, জিতি বা না জিতি, দর্শকদের মধ্যে বিশ্বকাপের সেই উন্মাদনার ছিটেফোঁটাও কিন্তু আমরা দখি না...
মুহাম্মদ ইউনূস: এটা ঠিক। ক্রিকেট, ফুটবল যেভাবে মানুষ বোঝে অলিম্পিক হয়তো সবাই সেভাবে বোঝে না। জানার ঘাটতি থাকে। অলিম্পিকেও ফুটবল খেলা হয় কিন্তু বিশ্বকাপের সে উন্মাদনা তাতে থাকে না।  আমাদের ‘হিরা’রা সেখান খেলছে না, সেটাও একটা কারণ হতে পারে। এই উন্মাদনা সৃষ্টি নিয়েও কাজ হতে পারে। আমরা হয়তো সুইমিং বা শুটিংয়ে যাই, কিন্তু এগুলোতে সাধারণ মানুষ তেমন উৎসাহ বোধ করে না।

মানবজমিন: আপনি সাঁতারের কথা বললেন। এ প্রসঙ্গেই আসি। আমরা তো নদীর দেশ। গ্রামে সবার বাড়িতেই পুকুর আছে, নদীনালা আছে। কিন্তু কোনো বিশ্বমানের সাঁতারু আমরা পাচ্ছি না। ব্রজেন দাস কিংবা জাবরা রহমান লিনুর মতো ক্রীড়াবিদের দেখা মেলাও ভার। আপনি শান্তিতে নোবেলজয়ী। অনেকের ধারণা আপনি অর্থনীতিতেও নোবেল পাবেন। তার আগেই আপনি ক্রীড়াজগতের সর্বোচ্চ সম্মান ‘অলিম্পিক লরেল’ পেলেন। আঠারো কোটি মানুষের দেশে এমন অবস্থানে আমরা আর কাউকে পাচ্ছি না কেন?
মুহাম্মদ ইউনূস: এ ব্যাপার পুরোপুরি একমত। এটা ন্যায্য কথা যে, আমাদের সাঁতারের মতো ক্ষেত্রে সুযোগ রয়েছে। আমরা অলিম্পিকে না পারি অন্য অনেক প্রতিযোগিতা তো আছে...অলিম্পিকে না জিতি, এশিয়ান গেমসে জিতবো না কেন! আরও অনেক প্রতিযোগিতাও আছে। যেগুলো আমাদের হাতের কাছে রেয়েছে, ধীরে ধীরে সেগুলোতে এগিয়ে যেতে হবে। মনের মধ্যে রাখতে হবে। আয়োজন করতে হবে। সে রকম ব্যবস্থাপনাও থাকতে হবে। আমরা জানি যে আমাদের অনেক ধরনের প্রতিবন্ধকতা আছে, কিন্তু চেষ্টা আমরা করবো।

মানবজমিন: করোনাকাল অতিক্রম করছে বাংলাদেশ। সবাই আপনার কথা শুনতে চায়। পাঠকদের উদ্দশ্যে আপনার কিছু বলার আছে?
মুহাম্মদ ইউনূস: এটা দুঃখের সময়। আমরা সব সময় খবর পাচ্ছি- বন্ধুবান্ধব মারা যাচ্ছে, আত্মীয়স্বজন মারা যাচ্ছে। মন খারাপ হচ্ছে। কিন্তু এই দুঃখের দিনেও আমরা যেন ভবিষ্যৎকে চিন্তা করি। বিশেষ করে বাংলাদেশের তরুণদের জন্য বলবো, বাংলাদেশ এবং পৃথিবীর ভবিষ্যৎ তোমার হাতে। এটা তুমি মনে রেখো। তোমার চেয়ে বয়স্কদের ওপর আর ভরসা করা যায় না। তাদের আর কিছু দেয়ার নেই। তারা উল্টো জিনিসটাই তোমাদের কাছ নিয়ে আসবেন। আমাদের বয়সী যারা আছেন, তারা ওভাবেই শিখে এসেছেন, ভুল পৃথিবী গড়েছেন। কাজেই তাদের কাছে তোমাদের শিক্ষণীয় কিছু নেই। তোমরা এখন নিজের দায়িত্ব নিজে নাও- এই বলে যে আমরা এটাকে সাজাবো। তোমাদের সেই ক্ষমতা আছে। বয়স্কদের তুলনায় তোমাদের ক্ষমতা অসীম। সেই ক্ষমতা সম্পর্কে সজাগ হও। নিজেকে জিজ্ঞাসা করো, আমি এই ক্ষমতা কী কাজে ব্যবহার করবো? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া খুব জরুরি। এই ক্ষমতা দিয়ে তুমি সারা দুনিয়া উলটপালট করে নতুন পৃথিবী গড়তে পারো। এই দায়িত্ব তুমি নাও। লেখাপড়া করবা, একটা চাকরি করবা, বেতন পাবা এই সীমাবদ্ধতার মধ্যে তুমি থেকো না। প্রশ্ন করে দেখ, যেগুলো আমাকে শেখানো হয়েছে, সেগুলো ভুল। আমাকে আবার নতুন করে শিখতে হবে। আমার মতো করে শিখতে হবে। কোনটি তোমার মতো তা তোমার বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আলাপ করো। তাহলেই তুমি তোমার পথ খুঁজে পাবে। সারা পৃথিবী নির্ভর করছে তোমার সিদ্ধান্তের ওপর, তুমি কোন ধরনের পৃথিবী চাও। যে পৃথিবী তোমার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রেখে দিয়ে বলতে পারবে, আমরাই প্রথম প্রজন্ম, যারা এই পৃথিবীকে সঠিক পথে নিয়ে এসেছি। আগের মানুষেরা একদম ভুল করে আমাদের মৃত্যুপথে নিয়ে যাচ্ছিল। তুমি পারবে। ভেবো না, আমার কি অত বুদ্ধি আছে? এটা বুদ্ধির বিষয় নয়। এটা ইচ্ছার বিষয়। ইচ্ছা থাকলেই তুমি পারবে। ইচ্ছাটা তুমি করো। এটাই আমার অনুরোধ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status