প্রথম পাতা

মুগদায় সিট খালি নেই

নূরে আলম জিকু

২৯ জুলাই ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৯:৩৯ অপরাহ্ন

বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা। রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে করোনা রোগীদের ভিড়। সবাই ভর্তির অপেক্ষায়। কেউ বসে আছেন, কেউ শুয়ে। কারো মুখে সাধারণ অক্সিজেন মাস্ক লাগানো। অনেকেই ভুগছেন শ্বাসকষ্টে। তবে হাসপাতালে কোনো সিট খালি নেই। খালি না থাকায় কোনো রোগী ভর্তি নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। জরুরি বিভাগের সামনে নোটিশ ঝুলিয়ে রেখেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। নোটিশে লেখা আছে করোনা চিকিৎসার সিট খালি নেই, পুরুষ সিট খালি নেই, মহিলা সিট খালি নেই। আইসিইউ খালি নেই। এইচডিইউ খালি নেই। সাদা বোর্ডে নোটিশ ঝুলানো থাকলেও হাসপাতালটিতে কিছু সময় পরপরই  রোগী নিয়ে আসছেন স্বজনরা। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অন্তত ৩০ জন রোগী আসেন। ভর্তি হতে না পেরে অনেকই ফেরত গেছেন। আবার কেউ কেউ অপেক্ষা করছেন সিট খালি হওয়ার আশায়। তবে এই সময়ে কোনো রোগী ভর্তি নিতে দেখা যায়নি।
সরজমিন মুগদা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, এখানে আসা রোগীদের বেশির ভাগই কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুরসহ দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয়  জেলার। রোগী এলেও নতুন রোগী ভর্তি করার মতো কোনো সিট খালি নেই। ফলে এম্বুলেন্সে করে রোগী এলেও ফিরে গেছেন অনেকে।
শামসুন নাহার। বয়স ৬৪ বছর। তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে নোয়াখালী থেকে মুগদা হাসপাতালে এসেছেন চিকিৎসা নিতে। তবে হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে জরুরি বিভাগের সামনে স্ট্রেচারে শুয়ে রয়েছেন। পাশে দাঁড়িয়ে তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন ছেলে। বারবার আল্লাহ্‌কে ডেকে প্রাণভিক্ষা চাচ্ছেন তিনি। আর অপেক্ষা করছেন যদি সিটও খালি হয়। তাহলে ভর্তি হবেন। শামসুন নাহারের ছেলে এ প্রতিবেদককে জানান, গত কয়েকদিন ধরে তার মায়ের জ্বর। মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। রাতেই এম্বুলেন্সে করে নোয়াখালী থেকে ঢাকায় আসেন। প্রথমে ইব্‌নে সিনা হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে ডাক্তারদের পরামর্শে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে নেয়া হয়। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে মুগদা জেনারেল হাসপাতাল কিংবা মহাখালী ডিএনসিসি হাসপাতালে যেতে বলেন। তবে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে এসে জানতে পারেন, হাসপাতালে কোনো সিট খালি নেই। ডিএনসিসি হাসপাতালেও খোঁজ নেন। কোথাও সিট খালি নেই।
তিনি বলেন, এখন নিরুপায় হয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে অপেক্ষা করছি। কি করবো, কোথায় যাবো, দিশাহারা হয়ে গেছি। তবুও অপেক্ষা করছি যদি একটি সিট খালি হয়।
করোনায় আক্রান্ত বাবাকে নিয়ে ফেনী থেকে হাসপাতালে এসেছেন শামসুল আলম। তিনি বলেন, বাবার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। আইসিইউ দরকার। কোথাও আইসিইউ না পেয়ে ঢাকায় চলে আসি। এখানে আইসিইউতো দূরের কথা, সাধারণ সিটও পাচ্ছি না। ২ ঘণ্টা ধরে হাসপালের জরুরি বিভাগে অপেক্ষা করছি। আমার বয়স্ক বাবাকে কোথাও ভর্তি করাতে পারছি না। জরুরি বিভাগের স্টাফরা বাবার শ্বাসকষ্ট দেখে বাহিরে রেখেই অক্সিজেনের সাপোর্ট দিচ্ছেন। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, হাসপাতালের করোনা ইউনিটের সব সিট শেষ হয়ে গেছে। তারা নোটিশও ঝুলিয়ে রেখেছেন। প্রতি মূহূর্তে মুহূর্তে রোগী আসছে। অনেকেই গেট থেকে ফিরে গেছেন।
খিলগাঁও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ধর্ম বিষয়ের শিক্ষক হাফিজুর রহমান (৬২)। ৭/৮ দিন জ্বর নিয়ে বাসায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। গতরাত থেকে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। সকালে স্ত্রী ও বড় ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন। জরুরি বিভাগে ততক্ষণে মানুষের ভিড়। ভর্তি হতে না পেরে স্ট্রেচারে শুয়ে অক্সিজেন সাপোর্র্ট নিচ্ছেন। স্বামীর হাত ধরে তাকে সাহস জোগাচ্ছেন স্ত্রী। কথা হয় হাফিজুর রহমানের স্ত্রী বলেন, সিট খালি নাই। ঢাকার পাশাপাশি বাহিরের রোগীদের চাপ বেড়েছে। কেউ ভর্তি হতে পারেনি। বড় ছেলে বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ নিচ্ছে কয়েক ঘণ্টা ধরে। এখনো কোনো সুখবর পাইনি।
এদিকে হাসপাতালের কয়েকজন স্টাফ জানান, রোগী ভর্তি করার মতো কোনো সিট খালি নেই। মঙ্গলবার সকালে কিছু রোগীকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। তাদের স্থলে নতুন রোগীও ভর্তি হয়েছে। আইসিইউ কিংবা অন্যকোনো বেডে কেউ মারা গেলে,  সেখানেও গুরুতর রোগীদের ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য ৩৫০ টি সাধারণ বেডের মধ্যে অন্যান্য সময়ে কিছু সংখ্যক সিটি খালি থাকলেও বুধবার কোনো সিট থালি থাকেনি। হাসপাতালের ২৪টি আইসিইউ ও ১০টি এইচডিইউতেও রোগী ভর্তি রয়েছে। এতে পুরো হাসপাতালে গতকাল দুপুর পর্যন্ত একটি সিটও খালি ছিল না। এদিকে নমুনা শনাক্তের প্রতিদিনই শত শত রোগী ভিড় করছেন হাসপাতালে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status