শেষের পাতা

সিলেটে পরিস্থিতি ভয়াবহ

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

২৯ জুলাই ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৯:৩৬ অপরাহ্ন

সিলেটের করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহতার দিকে যাচ্ছে। গতকাল মারা গেছেন ১৭ জন। নতুন শনাক্ত হয়েছেন ৭৩৬। স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যানই বলছে; পরিস্থিতি ভালো না। দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। বাস্তব চিত্র আরও ভিন্ন। উপসর্গ নিয়ে মারা যাচ্ছে অনেক। তাদের কোনো পরিসংখ্যান নেই। হাসপাতালে রোগী ভর্তির জায়গা নেই। গাড়িতে, এম্বুলেন্সে মারা যাচ্ছে রোগী। তাদের হিসাবও উঠছে না স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যানে। এ অবস্থায়ও চিকিৎসার পরিধি বাড়ানো হচ্ছে না। আর বাড়াতে হলেও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। ফলে আইসিইউ সংকটে মারা যাওয়া রোগীদের জীবন বাঁচাতে এখনই বিকল্প ব্যবস্থারও সুযোগ নেই। দিন দিন সিলেটের করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ অবস্থার দিকে ধাবিত হওয়ায় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা চিন্তিত। স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাবমতে- সিলেটে চলতি মাসে ২৭ দিনে পৌনে ২শ’ করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। শনাক্ত হয়েছেন ১২ হাজারের মতো রোগী। আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশের উপরে রোগী বাসায় আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে। মাত্র ১০ ভাগ রোগী হাসপাতালমুখী হয়েছেন। এতেই সংকোচিত হয়ে গেছে স্বাস্থ্যসেবার পরিধি। সিলেটে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় ১৩০টির মতো আইসিইউ বেড রয়েছে। এসব বেডে রোগী ভর্তির জায়গা নেই। ভর্তির প্রায় তিনগুণ বেশি রোগী আইসিইউ’র জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। অনেকেই সাধারণ ওয়ার্ডে অক্সিজেন সাপোর্টে জীবন বাঁচিয়ে রেখেছেন। কেউ কেউ ৪-৫ দিন অপেক্ষা করেও আইসিইউ পাচ্ছেন না। কেউ মারা গেলে কিংবা একটু সুস্থ হলে আইসিইউ মিলে। নতুবা দিনের পর দিন অপেক্ষায় থাকলেও আইসিইউ মিলছে না। এখন আইসিইউ বেড তো দূরের কথা হাসপাতালে রোগী ভর্তির জায়গা নেই। সিলেটের করোনা ডেডিকেটেড শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে এক মাস ধরে রোগী ভর্তির জায়গা নেই। হাসপাতালে কখনো কখনো একই পরিবারের ২-৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তির জন্য আসছেন। তাদের অবশ্য একটি কেবিনে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বেড সংকট থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির জন্য পাঠিয়ে দিচ্ছে। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক সৈয়দ নাফি আহমদ জানিয়েছেন- হাসপাতালে রোগী ভর্তির জায়গা না থাকায় ভর্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। অনেকের নাম লিখে রাখা হচ্ছে। জায়গা খালি হলে তাদের ভর্তির সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। প্রতিদিন ১০-১২ জন আশঙ্কাজনক রোগীর নাম কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে লিখে রাখা হয়। বেড খালি হলে মানবিক কারণে তাদের ভর্তির সুযোগ করে দেয়া হয়। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উপচে পড়ছেন করোনা রোগীরা। হাসপাতালে ২৬, ২৭ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডে আড়াইশ’ বেডে রোগীদের সিলিন্ডার অক্সিজেন সাপোর্টে রাখা হচ্ছে। কিন্তু প্রতিদিনই আড়াইশ’ বেডের বিপরীতে প্রায় ৩২০ থেকে সাড়ে ৩০০ রোগী ভর্তির সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। এরপরও হাসপাতালমুখী রোগীর স্রোত কমছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বাধ্য হয়ে কর্তৃপক্ষ ফ্লোরিং করে রাখতে হচ্ছে। পরে বেড খালি হলে সেখানে দেয়া হয়। হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন- ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীর চাপ বেশি। সরকারি হাসপাতাল হিসেবে রোগীদের ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব হয় না। ধারণ ক্ষমতার বেশি সংখ্যক রোগী ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে তাদের অক্সিজেন সাপোর্ট দেয়া হচ্ছে। হাসপাতালে আইসিইউ সবসময় রোগীতে পরিপূর্ণ থাকে বলে জানান তিনি। সিলেটে ওসমানী ও শামসুদ্দিনের বাইরে খাদিমনগর ও দক্ষিণ সুরমা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের ভর্তি করা হচ্ছে। কিন্তু ওই দুটো হাসপাতালে বেড মিলছে না। হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে রোগী নিয়ে ঘুরলেও ভর্তির সুযোগ না থাকায় চরম ভোগান্তিতে রয়েছে রোগীর স্বজনরা। বিশ্বনাথের তসলিম আহমদ নামের এক রোগীর স্বজন জানিয়েছেন- গত মঙ্গলবার তার চাচাকে নিয়ে নগরীর সরকারি-বেসরকারি প্রায় সব হাসপাতালেই ঘুরেছেন। কিন্তু কোথাও আইসিইউ বেড খুঁজে পাননি। গাড়িতে রেখে অক্সিজেন সাপোর্ট দেয়া হয়। একপর্যায়ে আইসিইউ না পাওয়ার কারণে গাড়িতেই মারা যান চাচা। তিনি বলেন- কয়েকদিন আগে তাদের আরেক স্বজন একইভাবে আইসিইউ না পেয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। সিলেটের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তির জায়গা কমে এসেছে। বেসরকারিভাবে শতাধিক আইসিইউতে রোগী রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। অক্সিজেন সাপোর্ট কম থাকায় আইসিইউ বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক ওনার্স এসোসিয়েশনের নেতারা। তারা জানিয়েছেন- আইসিইউতে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ চলছে। এর বাইরে করোনা রোগীদের জন্য প্রায় ৫০০ বেড রয়েছে। এসব বেডেও রোগী ভর্তির জায়গা নেই। করোনার সাধারণ বেডেও অক্সিজেন সাপোর্ট লাগে। সিলিন্ডার দিয়ে অক্সিজেন সাপোর্টের মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। চিকিৎসার বাইরে সিলেটে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে আসা রোগীদের ভিড় দিন দিন বেড়েই চলেছে। শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে সকাল হলেই নমুনা দিতে আসা রোগীদের ভিড় বেড়েছে। গতকাল বেলা ১টার দিকে শামসুদ্দিনে গিয়ে দেখা গেছে- প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন রোগী নমুনা দেয়ার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। শামসুদ্দিনের চিকিৎসক সৈয়দ নাফি জানিয়েছেন- আগের চেয়ে নমুনা দেয়ার সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ। এসব নমুনা সংগ্রহ করে তারা পরীক্ষার জন্য ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। ওদিকে গত মঙ্গলবার দুপুরের পর সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টিকা কেন্দ্রে হঠাৎ করে টিকা সংকট দেখা দেয়। এ সময় কয়েকশ’ মানুষ টিকা গ্রহণের জন্য বুথে ছিলেন। তবে- গতকাল থেকে ফের টিকা দেয়ার বিষয়টি স্বাভাবিক হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুর রহমান মানবজমিনকে জানিয়েছেন- টিকার সংকট ছিল না। মেসেজ না পেয়ে অতিরিক্ত টিকা গ্রহণের ইচ্ছুক মানুষ বুথে চলে গিয়েছিলেন। এ কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিলো বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে- এখন স্বাভাবিক আছে। যারা মেসেজ পাবেন না তাদের টিকা দেয়া হবে না বলে জানান।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status