দেশ বিদেশ

ওয়েবিনারে বক্তারা-

মানব পাচারকারীদের লাগাম এখনই টানতে হবে

কূটনৈতিক রিপোর্টার

২৯ জুলাই ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৯:২৬ অপরাহ্ন

যেকোনো মূল্যে এখনই মানব পাচারকারীদের লাগাম টানা এবং পাচারের টার্গেট তরুণদের এর কুফল সম্পর্কে সচেতন করতে নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন দেশি-বিদেশি কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞরা। বিশ্ব মানব পাচার প্রতিরোধ দিবস ‘ওয়ার্ল্ড ডে এগেইনস্ট ট্রাফিকিং ইন পারসন ২০২১’ উপলক্ষে আয়োজিত বহুপক্ষীয় এক ওয়েবিনার থেকে এ আহ্বান জানানো হয়। বুধবারের ওই ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকাস্থ জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো। বিশেষ অতিথি ছিলেন- সদ্য সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক, মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স জো অ্যান ওয়াগনার এবং আইওএম প্রধান গিওরগি গিগাওরি। ওয়েবিনারে পরিসংখ্যান দিয়ে বলা হয়, করোনার আঘাতে বেকার হয়ে দেশে ফেরা ৭০ শতাংশ প্রবাসী শ্রমিক কর্মহীন-বেকার জীবন কাটাচ্ছেন। তাদের অনেকে উন্নত জীবনের আশায় দালালদের দ্বারস্থ হচ্ছেন, একটি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ পাচারকারীদের টার্গেটে পড়ছেন। তিনটি রুটে অবৈধ উপায়ে ইউরোপে যাত্রার প্রবণতা ব্যাধির মতো বাড়ছে জানিয়ে ওয়েবিনারে বলা হয়, মানব পাচারের নতুন ওই তিন রুট হচ্ছে- এক. ঢাকা থেকে তুরস্ক বা লিবিয়া হয়ে, দুই. ভারত, বা শ্রীলঙ্কা থেকে লিবিয়া হয়ে এবং তিন. ঢাকা থেকে আরব আমিরাত বা জর্ডান হয়ে ইউরোপ যাত্রা। ওয়েবিনারে পাচার কৌশল বিষয়ে বলা হয়- করোনাকালে ইনপারসন যোগাযোগের বিকল্প হিসেবে মেসেঞ্জার, হোয়ার্টআপসহ সামাজিক মাধ্যমকে ব্যবহার করে নেটওয়ার্ট সচল রাখছে মানব পাচারকারীরা। অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন মানব পাচারকে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন উল্লেখ করে বলেন, কাজের অভাব নয় মূলত উন্নত জীবনের আশায় এই সর্বনাশা পথে যাত্রা বাড়ছে বাংলাদেশি তরুণদের। এটি বন্ধে বাংলাদেশ সরকার জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করছে। কিন্তু পাচারকারীদের নেটওয়ার্কের বিস্তৃতি এবং আগ্রহীদের গোপনীয়তায় ভয়াবহ এ অপরাধের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয়তা সত্ত্বেও তা বন্ধ করা যাচ্ছে না। বিদেশ সচিব জানান, মানব পাচার রোধে ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকার কাজ করছে। পাচার অপরাধের বিচারে গঠন করা হয়েছে বিশেষ ট্রাইব্যুনালও। এটি বন্ধে সমাজের সর্বজনীন সক্রিয়তা কামনা করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব। স্বাগত বক্তব্যে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পো বলেন, করোনা মহামারি অভিবাসী সুরক্ষার ক্ষেত্রে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে হাজির হচ্ছে। এই মহামারি কিশোর-কিশোরীসহ, নারী-পুরুষ এবং শিশুদের ওপর বিভিন্নভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। মানব পাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবাইকে হাতে হাত রেখে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। বাংলাদেশে জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক নেটওয়ার্ক বিডিইউএনএনএম-এর সমন্বয়ক এবং আইওএম বাংলাদেশ-এর মিশন প্রধান গিওরগি গিগাওরি বলেন, মানব পাচার হলো এমন একটি অপরাধ যা অভিবাসী শ্রমিকদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, হয়রানি, জোরপূর্বক শ্রম, জোর করে এবং অবৈধ বিবাহ, অবৈধ বাণিজ্য এবং জীবন হারানোর মতো ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। এটি বন্ধ করতে সরকার, উন্নয়ন অংশীদার, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো, সুশীল সমাজ, বেসরকারি খাত এবং এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ব্যবস্থা নিতে হবে। জাতিসংঘে মানব পাচার বিষয়ক বিশেষ র‌্যাপোটিয়ার সিউবহান মুলালি তার বক্তব্যে বলেন, কোভিড-১৯ এর প্রভাব মানব পাচারের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। শিশুপাচার বৃদ্ধির ঝুঁকি মোকাবিলা, অনলাইনে শোষণ, অভিবাসী কর্মীদের শোষণ এবং যৌন শোষণের বিশেষ ঝুঁকির বিরুদ্ধে খুব দ্রুত ভূমিকা নিতে হবে। মূল প্রবন্ধে ইনসিডিং বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক একেএম মাসুদ আলি বলেন, বিপদে থাকা অভিবাসীরা প্রায়শই পাচারকারীদের টার্গেট হয়ে থাকে। অনেকেই পাচারের শিকার হয়ে ঋণের জালে আবদ্ধ, জোরপূর্বক শ্রম, যৌন শোষণ, জোরপূর্বক বিবাহ এবং আধুনিক দাসত্বের মতো পরিস্থিতির শিকার হয়। ওয়েবিনারে মানব পাচারের শিকার হয়ে বেঁচে ফেরাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরার পাশাপাশি প্রতি বছর আনুমানিক ৭ লাখ বাংলাদেশি বিদেশে অভিবাসনকালে যে ঝুঁকির সম্মুখীন হন, তার ওপর আলোকপাত করা হয়। একই সঙ্গে করোনাকালীন মানব পাচার নিয়ে বর্তমান চিত্র তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশ ইউনাইটেড নেশনস নেটওয়ার্ক অন মাইগ্রেশনের অধীনে কাউন্টার ট্রাফিকিং ইন পার্সন টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং গ্রুপ (সিটিআইপিটিডব্লিউজি) এই ওয়েবিনারটির আয়োজন করে। যাতে সহযোগিতা করেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং আইওএম। উল্লেখ্য, মানব পাচার নির্মূলে ন্যূনতম মানদণ্ডগুলো সম্পূর্ণরূপে পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে এক্ষেত্রে সরকারের উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা রয়েছে। তাই গত বছরের মতো এবারও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ট্রাফিকিং ইন পারসনস (টিআইপি)-২০২১ এর প্রতিবেদনে স্তর ২ তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। চলতি মাসে ওই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। ॥
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status