এক্সক্লুসিভ

সিলেটে হাতালী মাঠের নামকরণ নিয়ে ‘আপত্তি’

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে

২৭ জুলাই ২০২১, মঙ্গলবার, ৮:৩৯ অপরাহ্ন

সিলেটের বাঘা ইউনিয়নের হাতালী মাঠের নামকরণ নিয়ে আপত্তি এলাকাবাসীর। হাতালী মাঠ হিসেবে খেলার মাঠের স্বীকৃতি চান তারা। এ নিয়ে বিভাগীয় ভূমি অফিসে রেকর্ড সংশোধনের জন্য আবেদন জানানোর পর এখন তারা আন্দোলনে নেমেছেন। তবে, নামকরণের বিষয়টি জানা নেই বলে দাবি করেছেন সিলেটের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও এলাকার সন্তান গোলাম রব্বানী চৌধুরী। এরপরও আন্দোলনকারীরা যখন নাম সংশোধনের আবেদন করেছেন সেখানে আন্দোলনের মাধ্যমে তার পরিবারকে ‘অযথা’ বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। সিলেটের গোলাপগঞ্জের বাঘা ইউনিয়ন। ঐতিহ্যবাহী একটি এলাকা। এলাকায় প্রায় সাড়ে ৭ একর ভূমি নিয়ে একটি খেলার মাঠ রয়েছে। আন্দোলনরত লোকজন জানান, এই খেলার মাঠটি এসএ রেকর্ডে হাতালী খেলার মাঠ হিসেবে উল্লেখ ছিল। এটি জেলা প্রশাসনের খতিয়ানভুক্ত ছিল। তারা জানান, এখনো খেলার মাঠটি জেলা প্রশাসনের খতিয়ানভুক্ত থাকলেও বিগত বিএস জরিপে সেটিকে গোলাম মোস্তফা চৌধুরী খেলার মাঠ হিসেবে নামকরণের মাধ্যমে রেকর্ডভুক্ত করা হয়েছে। সম্প্রতি বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর এলাকার মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। নামকরণ নিয়ে আপত্তি তুলেছেন এলাকার মানুষও। সিলেটের বৃহত্তম খেলার মাঠ ‘বাঘা হাতালী মাঠ’-এর নাম ডাকাতির অভিযোগ তুলে প্রতিবাদে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাথায় লাল নিশান বেঁধে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন এলাকাবাসী। বাঁচাও হাতালী ও হাতালী সংরক্ষণ কমিটি বাঘা’র আয়োজনে হাতালী মাঠে গত সোমবার বিকালে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়। সাংবাদিক আব্দুল আলিম শাহ্‌’র উপস্থাপনায় বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিত্ব রফিক উদ্দিন। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা সিলেট জেলা প্রশাসকের নিয়ন্ত্রণাধীন হাতালী খেলার মাঠ চলমান জরিপে গোলাম মোস্তফা চৌধুরী খেলার মাঠে রূপান্তর করায় তীব্র নিন্দা জানান। ভূমি জরিপ কর্মকর্তাদের সঙ্গে অবৈধ যোগসাজশে মাঠটির নাম ডাকাতির বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন তারা। তারা ঘোষণা দেন, হাতালী মাঠ রক্ষায় প্রয়োজনে জীবন দিতে প্রস্তুত রয়েছেন। ওদের কবল থেকে মাঠটি ফিরিয়ে দিতে প্রশাসনের

প্রতি আহ্বান জানান বক্তারা। হাতালী মাঠের নাম ডাকাতির ঘটনায় গোলাম মোস্তফা চৌধুরীর পরিবারকে সামাজিকভাবে বয়কটের ঘোষণাও দেন বক্তারা। এ সময় বক্তারা বলেন, জীবন থাকতে এই মাঠের নাম কোনো ব্যক্তি নামে হতে পারে না। হাতালী নামেই শতবছর থেকে স্বীকৃত এই খেলার মাঠ। এই মাঠ ভূমিদস্যুদের হাত থেকে মুক্ত করতে লাগাতার আন্দোলন চলবে বলেও জানান বক্তারা। বিক্ষোভ সমাবেশ বক্তব্য রাখেন- হেকিম উদ্দিন, রফিক মিয়া, জুবের আহমদ, হেলাল আহমদ, নানু মিয়া, নুনু মিয়া, আব্দুর রহমান, মাজেদুর রহমান শাহ্‌, বাচ্ছু মিয়া, তাওহীদুর রহমান শাহ্‌, হাসান আহমদ, রাজু আহমদ, এমরান আহমদ প্রমুখ। আন্দোলনের মুখপাত্র সাংবাদিক আব্দুল আলীম শাহ্‌ জানিয়েছেন- ‘ইউনিয়ন, উপজেলার জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সর্বস্তরের ব?্যর্থতায় সরকারি খেলার মাঠ বেহাত হয়েছে। ভূমি জরিপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অবৈধভাবে ভূমিদস্যুদের নামে দিয়েছেন মাঠটি। বাঘা ইউনিয়নের আপামর জনসাধারণ এই মাঠ রক্ষায় সর্বাত্মক আন্দোলনে আছেন। অবিলম্বে জেলা প্রশাসক এই মাঠের মালিকানা দস্যুমুক্ত করবেন প্রত?্যাশা আমাদের।’ তিনি জানান, ‘হাতালী মাঠ ভূমিদস্যু মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার আন্দোলন চলবে।’ বাঘা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ছানা মিয়া মানবজমিনকে জানান, ‘মাঠের নামকরণ নিয়ে আপত্তি ওঠায় তিনি উভয়পক্ষকে নিয়ে সমঝোতার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু এলাকাবাসী তার ডাকে সাড়া না দেয়ায় শেষ পর্যন্ত বিষয়টির সুরাহা হয়নি।’ তিনি আরও জানান, ‘বাঘা ইউনিয়নের হাতালী খেলার মাঠ একটি ঐতিহ্যবাহী খেলার মাঠ। এখানে গোটা ইউনিয়নের শিশু, কিশোর ও যুবকরা খেলাধুলা করে। সুতরাং মাঠটির নামকরণ বাঘা ইউনিয়ন হাতালী খেলার মাঠ থাকা উচিত। বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব বলে জানান তিনি।’ তবে, আন্দোলনের ঘটনায় বিব্রত সিলেটের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও এলাকার সন্তান গোলাম রব্বানী চৌধুরী। তিনি মানবজমিনকে জানান, ‘জমিদারী প্রথা বাতিলে পর তার পূর্ব পুরুষদের ওই ভূমি জেলা প্রশাসকের খতিয়ানে চলে যায়। এরপর থেকে জেলা প্রশাসনের মালিকানাধীন মাঠ হিসেবে সেটি রয়েছে। তিনি লন্ডন থাকাকালীন সময়ে এলাকার মুরব্বীরা হয়তো জমির পূর্বের মালিক হিসেবে তার পিতার নাম জুড়ে দিয়েছেন। তিনি সেটি জানেনও না। এরপরও বর্তমানে এলাকার কিছু লোক নামের রেকর্ড সংশোধনের জন্য আবেদনও করেছেন। বিষয়টি এখন প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেখা হবে। কিন্তু তার আগেই তার ঐতিহ্যবাহী পরিবারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করা হয়েছে। এটি মোটেও কাম্য নয়। নাম অন্তর্ভুক্তিতে যেখানে তাদের পরিবারের কোনো সম্পৃক্ততা নেই সেখানে অযথা তার পরিবারকে বিতর্কিত করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।’ গোলাম রব্বানী জানান, ‘এলাকার মানুষকে ভালোবাসেন বলেই তার পক্ষ থেকে আড়াইশ’ শিক্ষার্থীর পড়া-লেখার ব্যয়ভার বহন করা হচ্ছে। হাসপাতালের মাধ্যমে এলাকার মানুষকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এলাকার জন্য এত কিছু করার পরও তার পরিবারকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করার বিষয়টি বোধগম্য হচ্ছে না। এ নিয়ে তারাও বিব্রত।’
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status